Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » আমি-হারা || Ami Hara by Rabindranath Tagore

আমি-হারা || Ami Hara by Rabindranath Tagore

হায় হায় ,
জীবনের তরুণ বেলায় ,
কে ছিল রে হৃদয় – মাঝারে ,
দুলিত রে অরুণ – দোলায় !
হাসি তার ললাটে ফুটিত ,
হাসি তার ভাসিত নয়নে ,
হাসি তার ঘুমায়ে পড়িত
সুকোমল অধরশয়নে ।
ঘুমাইলে , নন্দনবালিকা
গেঁথে দিত স্বপনমালিকা ;
জাগরণে , নয়নে তাহার
ছায়াময় স্বপন জাগিত ;
আশা তার পাখা প্রসারিয়া
উড়ে যেত উধাও হইয়া ,
চাঁদের পায়ের কাছে গিয়ে
জ্যোৎস্নাময় অমৃত মাগিত ।
বনে সে তুলিত শুধু ফুল ,
শিশির করিত শুধু পান ,
প্রভাতের পাখিটির মতো
হরষে করিত শুধু গান ।
কে গো সেই , কে গো হায় হায় ,
জীবনের তরুণ বেলায়
খেলাইত হৃদয় – মাঝারে
দুলিত রে অরুণ – দোলায় ?
সচেতন অরুণকিরণ
কে সে প্রাণে এসেছিল নামি ?
সে আমার শৈশবের কুঁড়ি ,
সে আমার সুকুমার আমি ।
প্রতিদিন বাড়িল আঁধার ,
পথমাঝে উড়িল রে ধূলি ,
হৃদয়ের অরণ্য – আঁধারে

দুজনে আইনু পথ ভুলি ।
নয়নে পড়িছে তার রেণু ,
শাখা বাজে সুকুমার কায় ,
ঘন ঘন বহিছে নিশ্বাস
কাঁটা বিঁধে সুকোমল গায় ।
ধুলায় মলিন হল দেহ ,
সভয়ে মলিন হল মুখ
কেঁদে সে চাহিল মুখপানে
দেখে মোর ফেটে গেলে বুক ।

কেঁদে সে কহিল মুখ চাহি ,
“ ওগো মোরে আনিলে কোথায় ?
পায় পায় বাজিতেছে বাধা ,
তরুশাখা লাগিছে মাথায় ।
চারি দিকে মলিন আঁধার ,
কিছু হেথা নাহি যে সুন্দর ,
কোথা গো শিশির – মাখা ফুল ,
কোথা গো প্রভাতরবিকর ?”
কেঁদে কেঁদে সাথে সে চলিল ,
কহিল সে সকরুণ স্বর ,
“ কোথা গো শিশির – মাখা ফুল ,
কোথা গো প্রভাত রবিকর । ”
প্রতিদিন বাড়িল আঁধার
পথ হল পঙ্কিল মলিন —
মুখে তার কথাটিও নাই ,
দেহ তার হল বলহীন ।
অবশেষে একদিন , কেমনে , কোথায় , কবে
কিছুই যে জানি নে গো হায় ,
হারাইয়া গেল সে কোথায় ।

রাখো দেব , রাখো , মোরে রাখো ,
তোমার স্নেহেতে মোরে ঢাকো
আজি চারি দিকে মোর এ কী অন্ধকার ঘোর ,
একবার নাম ধরে ডাকো ।
পারি না যে সামালিতে , কাঁদি গো আকুল চিতে ,

কত রব মৃত্তিকা বহিয়া ।
ধূলিময় দেহখানি ধুলায় আনিছে টানি ,
ধুলায় দিতেছে ঢাকি হিয়া ।

হারায়েছি আমার আমারে ,
আজি আমি ভ্রমি অন্ধকারে ।
কখনো বা সন্ধ্যাবেলা আমার পুরানো সাথি
মুহূর্তের তরে আসে প্রাণে ,
চারি দিকে নিরখে নয়ানে ।
প্রণয়ীর শ্মশানেতে একেলা বিরলে আসি
প্রণয়ী যেমন কেঁদে যায় ,
নিজের সমাধি – ‘ পরে নিজে বসি উপছায়া
যেমন নিশ্বাস ফেলে হায় ,
কুসুম শুকায়ে গেলে যেমন সৌরভ তার
কাছে কাছে কাঁদিয়া বেড়ায় ,
সুখ ফুরাইয়া গেলে একটি মলিন হাসি
অধরে বসিয়া কেঁদে চায় ,
তেমনি সে আসে প্রাণে — চায় চারি দিক – পানে ,
কাঁদে , আর কেঁদে চলে যায় ।
বলে শুধূ , “ কী ছিল , কী হল ,
সে – সব কোথায় চলে গেল !”

বহুদিন দেখি নাই তারে ,
আসে নি এ হৃদয় – মাঝারে ।
মনে করি মনে আনি তার সেই মুখখানি ,
ভালো করে মনে পড়িছে না ।
হৃদয়ে যে ছবি ছিল ধুলায় মলিন হল ,
আর তাহা নাহি যায় চেনা ।
ভুলে গেছি কী খেলা খেলিত ,
ভুলে গেছি কী কথা বলিত ।
যে গান গাহিত সদা সুর তার মনে আছে ,
কথা তার নাহি পড়ে মনে ।

যে আশা হৃদয়ে লয়ে উড়িত সে মেঘ চেয়ে
আর তাহা পড়ে না স্মরণে ।
শুধু যবে হৃদি-মাঝে চাই
মনে পড়ে — কী ছিল , কী নাই ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress