Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » আমি মলি হিজড়া || Roma Gupta

আমি মলি হিজড়া || Roma Gupta

পিন্টু সুহানার প্রথম সন্তান বিট্টু পাঁচ বছরের হলে, সুহানা পুনরায় গর্ভবতী হয়।
ইচ্ছে একটা কন্যাসন্তান। কিন্তু সন্তান জন্মায় তৃতীয় লিঙ্গের। সুহানা কেঁদে অস্থির। স্বামীকে বলে এ সন্তান সে ঘরে তুলবে না। ওকে লুকিয়ে কোনো অনাথ আশ্রমের সামনে রেখে এসো, নইলে আমি ডাস্টবিনে ফেলে আসবো।
পিন্টু বোঝায়, যেমনি হোক ও আমাদের সন্তান। ওকে ঘরে নিয়ে মানুষ করবো। এমন অমানবিক কথা তুমি বলছো কি করে! পিন্টু সন্তান ঘরে নিয়ে আসলে সুহানা ঠিকমতো যত্ন করেনা, দুধ খাওয়ায় না। পিন্টু মুশকিলে পড়ে। আয়া রাখতে পারেনা, ঘরের কথা বাইরে ভাবেই বলে। শেষে সুহানাকে বলে, পাঁচ বছরের পর একটু বড় হলে ওকে যেখানে হোক দিয়ে আসবে।
সুহানা রাজি হয়। শিশুর নাম রাখা হয় মলি।
বিট্টু বোনকে ভীষণ ভালোবাসে। পিন্টুও ছেলেকে বলে, বোনকে নজরে রাখতে।
মলি মারধর, উপেক্ষার মধ্যে বড় হতে থাকে। সুহানা মলিকে পড়াশোনা শেখাতে দেয়না। দুশ্চিন্তায় দিন কাটে পিন্টুর।
মলিকে নিত্যদিন মারে সুহানা, একদম সহ্য করতে পারেনা। সবসময় খাটায়। বাসন মাজা, ঘর মোছা করায়। একদিন বাসনে এঁটো থাকায় সুহানা রেগে ভাতের গরম ফেন মলির পায়ে ঢেলে দেয়। মলির কান্না শুনে বিট্টু বোনকে কোলে করে কলতলায় নিয়ে পা ধুইয়ে মলম লাগিয়ে দেয়।
একটু পরে বিট্টু স্নানে গেলে মলি লুকিয়ে পালিয়ে যায়। বিট্টু অনেক খোঁজাখুঁজি করেও পায়না। পিন্টু অফিস থেকে এসে সব শুনে কেঁদে ফেলে। থানায় ডায়েরি ক’রে লোকলজ্জার ভয়ে চুপ থাকে।
ওদিকে মলি ছুটতে ছুটতে ট্রেনে উঠে শেষ স্টেশনে নেমে অজানা শহরে পৌঁছায়। সন্ধ্যা হয়েছে , খিদে পাওয়ায় একটা হোটেলের সামনে গিয়ে খাবার ভিক্ষা চায়। সেখানে এক পুলিশ ভদ্র পোশাক দেখে জানতে চায়, পা পুড়লো কি করে।
সব শুনে জিজ্ঞাসা করে, সৎমা!
মলি বলে, জানিনা। কোথায় বাড়ি বলতে পারেনা।
রাত বাড়ছে তাই পুলিশ নিজের ঘরে নিয়ে আসে। নিঃসন্তান দম্পতি মেয়ের মত স্নেহ করে ঘরে রাখে।
কিন্তু যখন জানতে পারে মেয়ে হিজড়া, তখন পরিচিত এক হিজড়ার হাতে তুলে দেয়।
এতদিনে ভালোবেসে ফেলেছে মেয়েটিকে।
তাই ভরণপোষণের খরচও দেয়।
কিন্তু হিজড়া মহলে ঝামেলা শুরু হয় , ঐ মেয়ের টাকা মহলার প্রধানকে দিতে হবে। পুলিশ জানতে পেরে, তাঁর বাড়ির কাছাকাছি বাড়ি ভাড়া করে ঐ হিজড়ার সঙ্গে মেয়েকে আলাদা রাখে।
হিজড়া গান জানতো। মলিকে প্রতিদিন গান শেখাতো। মলি পুরুষ-মহিলা দুই গলায় গান শেখে। বিভিন্ন জলসায় গান গেয়ে খুব নাম যশ হয়।
একদিন নিজের বাপের বাড়ির পাড়ায় ফাংশনে গাইতে আসে। মলিকে দেখে পিন্টুর সন্দেহ হয়। দৌড়ে যায় মলির কাছে। মলি পরিচয় দিতে চায়না। শেষে পিন্টু কেঁদে বলে, ” তোর মা শয্যাশায়ী ; অনুশোচনায় দগ্ধ। শুধু তোর নাম বলে। একটিবার তোকে দেখতে চায়”।
বহু কাতর আবেদনে মলি রাজি হয়। মা’কে দেখে শুধু বলে” আমি মলি হিজড়া, তোমাদের সন্তান নই। তোমাদের মলি তো অনেক আগেই মরে গেছে “।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *