আমি কে?
শুক্লপক্ষের এক নিস্তব্ধ রাত্রে, দূর আকাশে জ্বলজ্বল করছে অগণিত তারকা। তাদের মাঝে বসে থাকা এক ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণা হঠাৎ নিজের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলল। সে ভাবতে শুরু করল—আমি কে? কেন আমি এই মহাবিশ্বে? কী আমার কাজ? তার উত্তরের খোঁজে শুরু হলো এক অনন্ত যাত্রা।
সে প্রথমে মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তার শক্তির কথা ভাবল। সেই শক্তি যার প্রভাব সমস্ত জীবের ওপর, যার অসীম ক্ষমতা এই প্রকৃতি ও জীবনের মূল ভিত্তি। কণাটি বুঝতে পারল, তার অস্তিত্ব শুধুমাত্র শক্তির কল্যাণে। এই শক্তি তাকে গঠন করেছে, জীবনের প্রতিটি ক্ষণে তাকে রক্ষা করেছে এবং তার পথ নির্দেশ করেছে।
শক্তি এবং জীবের এই সম্পর্ক কণাটির মনোযোগ আকর্ষণ করল। শক্তি যে শুধুমাত্র সৃষ্টি করে তা নয়, জীবের অন্তরে গভীর আবেগ সৃষ্টি করে। কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মায়ার মতো অনুভূতিগুলো জীবকে তার দৈনন্দিন কাজ সম্পাদনে অনুপ্রাণিত করে। কণা উপলব্ধি করল, এই আবেগগুলোই তাকে জীবনের মর্ম বোঝাতে সাহায্য করেছে।
তবে, শক্তির আরেকটি দিকও ছিল। শক্তি ধীরে ধীরে জীবের অন্তর থেকে সরে যায়। এক সময় আসে যখন জীব কেবলই শূন্যতা হয়ে পড়ে। কণাটি ভাবল, এই শূন্যতা কি তার প্রকৃত পরিচয়? না কি শক্তি ছেড়ে যাওয়ার পরেও তার কোনও প্রভাব থেকে যায়?
প্রকৃতি ছিল এই রহস্যের আরও এক অধ্যায়। প্রকৃতি তার নিজস্ব নিয়মে জীবকে ব্যবহার করে। কণাটি দেখল, কীভাবে প্রতিটি জীব প্রকৃতির অঙ্গ হয়ে কাজ করে। সে উপলব্ধি করল, প্রকৃতি এবং জীব একে অপরের পরিপূরক। প্রকৃতি জীবকে সমস্ত সুখ ও সুবিধার স্বাদ এনে দেয়। কিন্তু প্রকৃতি তার নিজের লক্ষ্য পূরণের জন্য জীবকে পরিচালিত করে।
শেষমেশ, কণা তার যাত্রার পরিসমাপ্তিতে পৌঁছল। সে বুঝল, তার অস্তিত্ব শুধুমাত্র শক্তি ও প্রকৃতির মধ্যকার এক অনন্য সমীকরণের অংশ। তার জন্ম শক্তি থেকে, বিকাশ প্রকৃতির সঙ্গে, এবং তার অবসান শক্তির প্রস্থান দিয়ে।
এই যাত্রা শেষে কণা জানল, সে কেবলই একটি জীব। তার পরিচয় এই শক্তি-জীব-প্রকৃতির চক্রের মধ্যেই লুকিয়ে আছে। তার যাত্রা হয়তো সাময়িক, কিন্তু তার অস্তিত্বের ভিত্তি সেই শক্তি যা চিরন্তন।
“আমি কে?” এই প্রশ্নের উত্তর তার জন্য পরিষ্কার হয়ে উঠল। সে জানল, সে এই মহাবিশ্বের একটি ক্ষুদ্র অংশ, কিন্তু একই সঙ্গে সেই অনন্ত শক্তির প্রতিফলন, যা মহাবিশ্বকে পরিচালিত করে।