Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » আমার মা || Samarpita Raha

আমার মা || Samarpita Raha

ছবিটা মায়ের বাক্সে লুকানো ছিল।
কি যে বলো এটা আমার মায়ের ছবি!!!
দেখো সমীরণ একটু একটু মা লাগছে।
হ‍্যাঁ মা তো লাগছে।এত সুন্দরী আমার মা যদি হতো,তাহলে বন্ধুদের কাছে বলতে লজ্জা করত না।
মনে আছে সীমা ,মা আমাদের বিবাহ বার্ষিকীর পার্টিতে হঠাৎ চলে এসেছিল দেশের বাড়ি থেকে।
সবাই মাকে দেখে চমকে গেছিল।মুখটা প্লাস্টিক সার্জারি,একটি পা নেই। সবাই অসহায় দৃষ্টিতে তাকাচ্ছিল বলে মা তৎক্ষণাৎ লজ্জায় ঐ গাড়িতেই ফিরে যায়।তিতাসের জন‍্য একটা সোনা ঝুমুর রেখে যায়।তিতাস নাচ শিখছে শুনে খুব খুশী হয়েছিল মা।
তাহলে ঐ ঝুমুরটা মায়ের ছিল??
ধুস কি যে বলো ,আমার বাবা কি করে যে আমার মা কে বিয়ে করেছিলেন??
তা বাবাকে জিজ্ঞেস করো নি?
মায়ের এরকম দুর্ঘটনা কি করে হয়েছিল?
না মা কে জিজ্ঞেস করলে উত্তর পাইনি।ছোট থেকে হোস্টেলে থেকেছি।যখন বড় হয়েছি তখন লজ্জাবোধ হয়েছিল,আমার মা এত কুৎসিত।মায়ের চাকরির টাকায় এতদূর এগিয়েছি।বাবা তো মাধ্যমিক দেবার পর মারা গেছেন।আজ ভোরে দেশের বাড়ি থেকে খবর গেল মা নেই।তাই দাহ করে এসে মার ঘরে শুয়েছিলাম।হঠাৎ দেখি তিতাস মন দিয়ে একটি ডায়েরি পড়ছে।কেঁদে কেঁদে তার চোখ লাল।আমি তিতাসকে বলি কি পড়ছিস রে মা?
তিতাস বলে বাবা ,তোমাকে ও দাদুকে লরি চাপা দিচ্ছিল,তখন তোমার দেড় বছর বয়স।দিদা ছুটে এসে তোমাদের বাঁচাতে গিয়ে নিজেয় লরিতে ধাক্কা খেয়ে রাস্তার লাইট পোস্টে বাড়ি খান।দিদার একটা নাচের স্কুল ছিল।পা চলে যাবার পর দিদা কাঠের পা দিয়েও নাচ করতেন।কিন্তু দিদার মুখের বা দিকটা এতটা দুমড়ে গেছিল,প্লাস্টিক সার্জারি করে ও ঠিক হয়নি।তারপর দিদা ব‍্যাঙ্কে চাকরি পায়।সারাক্ষণ মুখ ঢেকে রাখতেন।নাচের প্রোগ্রাম আর ক‍রেন নি,কারণ দর্শক চেহারা দেখে।যার নিজের ছেলে মার চেহারা দেখে লজ্জা পেতো।সে কি করে নাচতে পারে।
ছেলের লজ্জা যাতে না পায় তাই হোস্টেলে রেখে মানুষ করে, নিজের ও ছেলের দূরত্ব বাড়িয়েছিল।ছেলেকে বলতে বারণ করেছিল কি করে দুর্ঘটনা ঘটেছিল।আসলে ছেলের বন্ধুর মা রা সবাই সুন্দরী।অনেকদিন ছেলে মায়ের গলা জড়িয়ে বলেছে সব বন্ধুর মা এত সুন্দর ,তুমি পচা হলে কি করে!আমার সাথে খেলতেও পারো না!!
আমার শ্বাস নিতে বেশ কষ্ট হচ্ছে।চাকরি থেকে অবসর হলো।এখন খুব ইচ্ছে তিতাসকে নাচ শেখাবার।ছেলেকে বলতে দ্বিধা লাগছে তোর বাড়িতে থাকতে দিবি।খুব কষ্ট হচ্ছে ,মনে হচ্ছে উপরে যাবার ডাক আসছে——
এরপর আর লেখেন নি দিদা।জানো বাবা দিদা মনে হচ্ছে ডায়েরিতে আজ শেষ অংশটুকু লিখেছেন।
তারপর ট্রাঙ্কে মায়ের বিয়ের ছবি,আমার অন্নপ্রাশনের ছবি ,সব দেখে তাজ্জব আমি।
হাউ হাউ করে খুব কেঁদে ও মাকে ক্ষমা জানালাম।তারপর কখন ঘুমিয়ে পড়েছি ঠিক জানি না।হঠাৎ একটা ঠান্ডা হাত অনুভব হয়,মা বলছে এখনো ঠিক করে শুতে শিখলি না।আমি চিৎকার করে বলছিলাম—মা তুমি কেন সব জানাও
নি??
আর কেন ছোট থেকে হোস্টেলে রাখলে!!
হ‍্যাঁ মা, আমি আমার মেয়েকে নাচ শেখাবো।তোমাকে কথা দিচ্ছি মা।আমার তিতাসকে নাচ শেখাবো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress