Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

অনেক রাত জেগে আমরা গল্প করলাম । জানলাম ওনাদের আদি বাড়ি বিহারে । সেখানে ছট পুজোর মেলা দেখতে নিষেধ সত্বেও ওনাদের একমাত্র ছেলে গিয়েছিল আর বাড়ি ফিরে আসেনি , তা প্রায় পনের বছর আগের কথা । আমাকে দেখে ওনার মনে হয়েছে হারিয়ে যাওয়া ছেলে বিনোদের কথা। ওনার স্বামী সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি করেন। আজ ডবল ডিউটি , কাল সকালে আসবেন । ঘুম ভাঙল নতুন মায়ের ডাকে । হাতে চায়ের গ্লাস । আমি চা খাই না জেনে খুব লজ্জায় পড়লেন । তারপর রুটি তরকারি বানিয়ে খেতে দিলেন । ইতিমধ্যে পাড়াটা জেগে উঠেছে । নতুন মা বাইরের কল থেকে জল ভরে আনছে , বাসন মাজছে এমন কি স্নান’ও করে নিলেন । আমাকে নিয়ে চললেন স্নান করাতে । কলতলায় মহিলা পুরুষের ভীড় , আমাকে দেখে সবাই অবাক । ওনার কাছে আমার সম্বন্ধে জানতে চাইল । উনি ভাসা ভাসা উত্তর দিলেন । তখনই জানলাম ওনার নাম ফুলমতিয়া । একটু বেলার দিকে ওনার স্বামী ঘরে ফিরলেন । তিনিও অবাক , নতুন মা খুব নরম সুরে ওনাকে সব খুলে বললেন । প্রথমে রাগ করলেও কিছু পরে নতুন মায়ের কথা মেনে নিলেন । একটা ব্যাপার উনি বললেন যে পুজো না মিটলে ওনার ছুটি পাওয়া যাবে না , অতএব আমার বাড়ি ফেরা ততদিন অবধি সম্ভব নয় । যদিও কাগজ পেন জোগাড় করে আমার নাম বাবা-মায়ের নাম ,পুরো ঠিকানা , কি ভাবে যেতে হয় সব লিখে নিয়ে বললেন যে চেষ্টা করবে যদি কোনও ভাবে খবর পাঠান যায় । দুপুরে ভাত খেয়ে উনি ঘুমাতে লাগলেন আর নতুন মা তোরঙ্গ খুলে ওনার ছেলের জামা প্যান্ট আমাকে পড়তে দিলেন । সন্ধ্যেবেলায় ওনার স্বামী কাজে চলে যেতে আমাকে নিয়ে ঠাকুর দেখতে গেলেন । আমরা অনেক ঠাকুর দেখলাম, দূর্গা ঠাকুর আমাদের ওখানে দেখেছি ঠিকই কিন্তু কলকাতায় কত ধরনের বুত ( মূর্তি/পুতুল) জানতে পারলাম। ঘুরলাম অনেক মেলা। আমার আর ভয় নেই, নতুন মা কাছে আছে তো। হাত শক্ত করে চেপে ধরে ভীড়ের মধ্যে দিয়ে আমাকে নিয়ে ঘুরছেন। আমার মেলা দেখার শখ এইবার কমছে, ভাবছি আম্মার কথা ।
কেটে গেল দিন তিনেক , আমি রোজ ভাবছি এই বুঝি আম্মা এলো । না, কেউ আমার বাড়ি থেকে এল না । ভাবলাম এটাই বুঝি আমার ঘর বাড়ি হয়ে যাবে । একদিন ওনার স্বামী এসে বললেন যে কাটোয়াতে ওনাদের কোম্পানীর কাজে একজন গেছে তার হাত দিয়ে আমার বাড়িতে খবর পাঠিয়েছেন । যদিও কলকাতার ঠিকানা দিয়েছেন ওনার অফিসের। অচেনা অজানা জায়গায় এসে আম্মা যেন পথ না হারিয়ে ফেলেন । কেটে গেল আরও কয়েকদিন । একদিন অফিস থেকে এসে উনি জানালেন যে আম্মা খবর পেয়েছে, তাড়াতাড়িই আমাকে নিতে আসবে । পরের দিন সন্ধ্যেবেলায় উনি অফিস থেকে ফিরে এলেন সঙ্গে আম্মা আর মামা । আম্মা আমাকে দেখতে পেয়ে হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে জড়িয়ে ধরল । নতুন মা দোকানে গিয়েছিল । ঘরে ফিরে অবাক । আম্মাকে বললাম যে উনিই আমার নতুন মা , আমাকে বাঁচিয়েছেন । আম্মা কাঁদতে কাঁদতে ওনাকে জড়িয়ে ধরে কৃতজ্ঞতা জানাতে লাগল । দুই মায়ের কান্নাতে মনে হল ঐ এঁদো ঘর টা বেহেস্ত হয়ে গেছে । আম্মার কাফেরদের ওপর যাবতীয় রাগ নিমেষে মুছে গেছে । চওড়া সিঁদুর পড়া এক হিঁদু মহিলাকে নিজের বোন বলছে । আমার চোখও জলে ভরে গেল । দেখি মামার চোখেও জল।

Pages: 1 2 3 4 5 6

4 thoughts on “আমার দূর্গা || Abhijit Chatterjee”

  1. সুন্দর লেখা। কয়েকটি ব্যাপার মন ছুঁয়ে যায় তবে আমার
    মনে হয় যে যার ধর্মটিকে সম্যক দূরত্বে রেখে যদি শুধু
    মানবিক মন নিয়ে সমাজটাকে দেখি, তাকে উপলব্ধি করি,
    আরও বেশি স্বচ্ছ ও সুন্দর হয়। আরও বেশি পবিত্র ও
    গ্রহণীয় হয়। ভালো লেখা শ্রদ্ধেয়। এভাবেই কলম এগিয়ে
    যাক নিরপেক্ষ ও নিরবচ্ছিন্ন ভাবে। শুভেচ্ছা তো থাকলই।
    নম্রতায়-
    ” যাযাবর……. “

  2. অসাধারণ মুগ্ধ সৃজন। বিভেদকামী ধর্মের চেয়ে মানবিক মূল্যবোধের ও এবং চেতনার গুরুত্ব অপরিসীম। মনুষ্যসৃষ্ট তথাকথিত ধর্মের সুড়সুড়ি কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহলের আখের গোছানোর অন্যতম কৌশল।
    সুস্থ সামাজিক এবং সাম্যের গান ধ্বনিত হোক প্রতিটি মানুষের অন্তরে। চলুক কলম।

    1. একদম ঠিক কথাই বলেছ। বিভেদকামী শক্তিদের চিহ্নিত করে নিজেরাই পারি তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে সমাজে মৈত্রী ও সম্প্রীতির বাতাবরণ গড়ে তুলতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *