পর্ব – ৪
আধো অন্ধকারে মাটি ফুঁড়ে উঠে এ’ল গোটা চারেক ছেলে , গা দিয়ে ভক্ ভকিয়ে মদের গন্ধ , হাতে চকচকে ছুরি । তাদের সোজা সাপটা কথা আমার কাছে যা টাকা পয়সা আছে তা যেন ওদের দিয়ে দি । কাঁপা হাতে আমার সবেধন নীলমনি একশ টাকাটা দিয়ে দিলাম ।ওদের মনে হ’ল আমার কাছে আরও আছে । চড় থাপ্পড় শুরু করল । শেষে আমার জামা প্যান্ট খুলে নিয়ে চলে গেল । হাফ প্যান্ট পরা আমি কাঁদতে লাগলাম । খুব অসহায় বোধ করছি । খালি গায়ে হাফপ্যান্ট পরা অবস্থায় এগিয়ে চললাম । কিছুদূর যাবার পর একটা দাওয়া দেখতে পেয়ে বসে পড়লাম । ফুঁপিয়ে কেঁদে চলেছি । দাওয়াটা একটা ঘরের , দরজায় তালা মারা । শুধু ভেবে চলেছি বাড়ি ফিরব কি করে । ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছি জানি না , একটা ধাক্কা খেলাম , ঘুম ঘোর চোখ মেলে দেখি এক মহিলা । গায়ের রং কালো , মাথায় চওড়া করে সিঁদুর লেপা , কানে বড় বড় দুল । ভাঙা ভাঙা বাংলায় বলল –
– কে তুই ? কোথায় থাকিস ? এখানে বসে আছিস কেন ?
আমি কাঁদতে কাঁদতে বললাম ঘটনাটা । বাড়িতে না বলে এসেছি বলে প্রথমেই জুটলো একটা থাপ্পড়
— কি ভেবেছিস নিজেকে ? খুব লায়েক হয়ে গেছিস , মায়ের বুক খালি করতে তোদের খুব মজা লাগে না । হামার বিনোদ ভি এইস্যা করে হারিয়ে গেল । আর পেলাম না ।
কাঁদতে কাঁদতে আমার পাশে বসে পড়লেন । একটু থিতু হয়ে বললেন
— তোর তো ভুখ লেগেছে বেটা , আয় ঘরে আয় ।
চাবি বের করে ঘরটা খুলে আগে হ্যারিকেন জ্বালালেন । এতক্ষণে আমি ওনার মধ্যে একটা “মা” “মা” রূপ দেখতে পাচ্ছি । ঘরে ঢুকে এক কোণে গুটি সুটি মেরে বসে রইলাম । উনি হাত টাত ধুয়ে স্টোভে ভাত বসিয়ে বললেন
– কহিঁ মত জানা আমি দুকান থেকে আসছি ।
বেরিয়ে গেলেন । আমি ঐ আধো অন্ধকারে ঘরটা দেখতে লাগলাম ।
ভাত – ডাল আর ডিম ভাজা দিয়ে খেয়ে উঠলাম । উনি ইতিমধ্যে টিনের বাক্স খুলে একটা জামা দিয়েছেন । আমি পড়েছি জামাটা । উনি অপার মুগ্ধতা নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে । বললেন
– হামারা বিনোদ আ গ্যায়া ।
এর আগে নাম জেনে বলেছিলেন
— মুসলমান ঔর হিন্দু সব মা কা আওলাদ হ্যায় ।
রাতে ঘরের একমাত্র চৌকিতে দু জনে শুয়ে পড়লাম । আমি এতক্ষণ পরে ওনাকে ” মা ” বলে ডেকেছি । ওনার আনন্দ আর ধরে না ।
মা বললেন
– আজ রাত টা যাক কাল তোর বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করবো ।
সুন্দর লেখা। কয়েকটি ব্যাপার মন ছুঁয়ে যায় তবে আমার
মনে হয় যে যার ধর্মটিকে সম্যক দূরত্বে রেখে যদি শুধু
মানবিক মন নিয়ে সমাজটাকে দেখি, তাকে উপলব্ধি করি,
আরও বেশি স্বচ্ছ ও সুন্দর হয়। আরও বেশি পবিত্র ও
গ্রহণীয় হয়। ভালো লেখা শ্রদ্ধেয়। এভাবেই কলম এগিয়ে
যাক নিরপেক্ষ ও নিরবচ্ছিন্ন ভাবে। শুভেচ্ছা তো থাকলই।
নম্রতায়-
” যাযাবর……. “
খুব সুন্দর বক্তব্য। প্রাণিত হলাম।
অসাধারণ মুগ্ধ সৃজন। বিভেদকামী ধর্মের চেয়ে মানবিক মূল্যবোধের ও এবং চেতনার গুরুত্ব অপরিসীম। মনুষ্যসৃষ্ট তথাকথিত ধর্মের সুড়সুড়ি কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহলের আখের গোছানোর অন্যতম কৌশল।
সুস্থ সামাজিক এবং সাম্যের গান ধ্বনিত হোক প্রতিটি মানুষের অন্তরে। চলুক কলম।
একদম ঠিক কথাই বলেছ। বিভেদকামী শক্তিদের চিহ্নিত করে নিজেরাই পারি তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে সমাজে মৈত্রী ও সম্প্রীতির বাতাবরণ গড়ে তুলতে।