Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

মাধ্যমিকের পর গঞ্জের ইস্কুলে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হলাম । নতুন নতুন বন্ধু পেলাম । বাবা কর্মস্থল থেকে এসে ভর্তি করিয়ে দিল । বাবা কানপুরের কাছে চিনি কলে চাকরি করে । বছরে দুই ঈদের আগে আসে । জামা কাপড় দরকারি জিনিষ কিনে দিয়ে যায় । ক্ষেত – খামারের খোঁজ খবর নেয় ভাগ চাষীদের কাছ থেকে । বাবা লেবার , কারখানায় খুব খাটতে হয় । বাড়িতে এলে কুটো নেড়ে দু’টো করে না । সন্ধ্যে হলেই জীবনকাকা ,রহিম চাচা আরও কিছু বন্ধুদের সাথে মদ খায় । আম্মাকে একদিন বললাম- আব্বুতো কোরান বর্হিভূত কাজ করছে ; তবে কি আব্বু মুসলমান নয় ?
আম্মার উত্তর-পুরুষ মানুষের অত দোষ ধরতে নেই ।
আমি কি তবে পুরুষ নই ? ইতিমধ্যে আমি কোরান পড়ছি , আয়াত আউড়াচ্ছি , মানে আম্মার ভাষায় সাচ্চা মুসলমান তৈরি হচ্ছি । স্কুলে বরুণ একদিন বলল সে না কি আসছে দুগ্গা পুজোয় কলকাতায় যাবে ঠাকুর দেখতে । আমাদের গাঁয়েগঞ্জে কি এমন মেলা বসে , কলকাতার কথাই আলাদা । সব শুনে আমার মন ছটফট করতে লাগল ।একদিন সাহস করে আম্মাকে বললাম, শুনেই চিল চীৎকার । আম্মা গান গাইছে আর তবলা বাজাচ্ছে দাদী । আমি পালিয়ে বাঁচলাম । বরুণের মা বাবা যাবে কলকাতায় ঠাকুর দেখতে , তাই ওদের সঙ্গে যাওয়া যাবে না । আমি সব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জানলাম । প্ল্যান ও করে ফেললাম কলকাতা ঘোরার । ষষ্ঠীর দিন আম্মাকে বললাম নানার বাড়ি যাব । আমার এই পরিবর্তন দেখে আম্মার তো আনন্দ ধরে না । হাতে দশ টাকা আর মামার বাড়ির জন্য নারকেল আর তিলের নাড়ু , ক্ষীরের তক্তি পোঁটলা করে দিল । এক শুভ সময়ে সকালের নাস্তা করে আমি হাঁটা দিলাম মামার বাড়ি । সকালে বেরিয়ে তিনক্রোশ হেঁটে দুপুরে পৌঁছলাম । নানা – নানী – মামি বুকে জড়িয়ে ধরল । সারাদিন মজা করে রাতে খেতে খেতে বললাম যে কালই বাড়ি চলে যাবো কারণ পুজোর ছুটির পরে পরেই টেষ্ট পরীক্ষা । নানী দু:খ পেলেও মামা আর নানা-র রায় আমার দিকে রইল । ফ্যামিলির কেউ কলেজে পড়েনি । আমি যেন কলেজ পাশ করে বংশের মুখ উজ্জ্বল করি ।
পরের দিন সকালে জলখাবার ( নাস্তা ) খেয়ে বাড়ি যাবার নাম করে বেরিয়ে পড়লাম মামার বাড়ি থেকে ।
প্রথমে এক মাইল হেঁটে সদরে যাবার রাস্তায় এলাম । তারপর বাসে বাদুড় ঝোলা হয়ে কাটোয়া শহরে । সেখান থেকে ট্রেন ধরে হাওড়া ।
প্রথম এলাম , পকেটে টিফিনের খরচা বাঁচিয়ে একশ টাকা আছে । ঠিক করেছি সারা রাত ঠাকুর আর মেলা দেখে সক্কাল সক্কাল ট্রেন ধরে দুপুরের ভেতর বাড়ি চলে যাবো। ঐ একশ টাকা বাদে খুচরো দশ টাকার মত আছে ।
হাওড়ায় ট্রেন থেকে নেবে দিশেহারা হয়ে গেলাম ; কোন দিকে যাবো ; কি ভাবে যাবো , কোন দিশাই নেই কাছে । শেষে এক রেল পুলিশের কাছে গিয়ে আত্মসমর্পণ করলাম ।

Pages: 1 2 3 4 5 6

4 thoughts on “আমার দূর্গা || Abhijit Chatterjee”

  1. সুন্দর লেখা। কয়েকটি ব্যাপার মন ছুঁয়ে যায় তবে আমার
    মনে হয় যে যার ধর্মটিকে সম্যক দূরত্বে রেখে যদি শুধু
    মানবিক মন নিয়ে সমাজটাকে দেখি, তাকে উপলব্ধি করি,
    আরও বেশি স্বচ্ছ ও সুন্দর হয়। আরও বেশি পবিত্র ও
    গ্রহণীয় হয়। ভালো লেখা শ্রদ্ধেয়। এভাবেই কলম এগিয়ে
    যাক নিরপেক্ষ ও নিরবচ্ছিন্ন ভাবে। শুভেচ্ছা তো থাকলই।
    নম্রতায়-
    ” যাযাবর……. “

  2. অসাধারণ মুগ্ধ সৃজন। বিভেদকামী ধর্মের চেয়ে মানবিক মূল্যবোধের ও এবং চেতনার গুরুত্ব অপরিসীম। মনুষ্যসৃষ্ট তথাকথিত ধর্মের সুড়সুড়ি কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহলের আখের গোছানোর অন্যতম কৌশল।
    সুস্থ সামাজিক এবং সাম্যের গান ধ্বনিত হোক প্রতিটি মানুষের অন্তরে। চলুক কলম।

    1. একদম ঠিক কথাই বলেছ। বিভেদকামী শক্তিদের চিহ্নিত করে নিজেরাই পারি তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে সমাজে মৈত্রী ও সম্প্রীতির বাতাবরণ গড়ে তুলতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress