Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » আমার “চকা নয়ন” || Manisha Palmal

আমার “চকা নয়ন” || Manisha Palmal

আমার “চকা নয়ন”

খুব ছোটবেলা থেকেই আমার জগন্নাথদেবের প্রতি কৌতূহল! ওই বিশাল চক্রাকার চোখের দৃষ্টি আমাকে অবাক করে দিতো! অন্য সব দেবতাদের মত সম্পুর্ন শরীর নেই কেন? আমার সব প্রশ্নের উত্তর সেই— “ঠাম্মি”! তাঁর কাছ থেকে চকানয়নের কাহিনী শুনে শুনে কখন যে তাঁকে আপনার জন নিয়েছি নিজেও জানিনা। ভীষণ ভাল লাগত জগন্নাথ দেব সম্পর্কিত পুরাণ কাহিনী। আস্তে আস্তে জগন্নাথদেবের বিভিন্ন মাহাত্ম্যকথা আমাকে আরো কৌতুহলী করে তুলল। শ্রীচৈতন্য আশ্রমের মহারাজ অদ্বৈত প্রভু আমাকে শোনালেন নীলমাধবের কাহিনী। ভীষণ ইচ্ছে হলো নীলমাধব দর্শন করব। কিন্তু কেউই নীলমাধবের কোন খবর দিতে পারছিল না। ঠাম্মি প্রায় প্রতিবছরই জগন্নাথ দর্শনে যেতেন। আমারও ভীষণ ইচ্ছে করতো যেতে কিন্তু পড়াশোনার জন্য যেতে পারতাম না। এমনই এক দোলাচলের সময়ে গেলাম শ্রীক্ষেত্রে। আমার স্বপ্ন পূরণ হলো। স্বজ্ঞানে সেই প্রথম নীলাচল ভ্রমণ। ভীষন ভালো লাগছিল, জগন্নাথ মন্দিরের বিশালতায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ছিলাম! মন্দিরের বিভিন্ন ভাগের বিভিন্ন মন্দির ভাস্কর্যের পরান কথার অভিভূত হয়ে পড়েছিলাম!” একাদশী”কে বেঁধে রাখার গল্পটাতে ভারি মজা পেলাম। কথিত শ্রীক্ষেত্রে নাকি একাদশী নিষিদ্ধ। একাদশীকে নাকি বেঁধে রাখা হয়েছে মন্দিরে। মন্দির সংলগ্ন প্রায় তিন তলা সমান উঁচুতে বিরাট গণেশের মুর্তি দেখলে অবাক হয়ে যেতে হয়।
প্রতিদিন মন্দির চূড়ার ধ্বজা পরিবর্তন দেখলে বিষয়ে হতবাক হয়ে যেতে হয়। ওই বিরাট উঁচু মন্দিরের চূড়ায় মানুষ উঠছে কী অদ্ভুতভাবে। ভগবানে কি বিশ্বাস !এখানেওঠার কথা কেউ স্বপ্নেও চিন্তা করতে পারে না অথচ বংশ-পরম্পরায় এক বিশেষ বংশের মানুষ এই সেবা করে চলেছে। একইভাবে ভুবনেশ্বরে লিঙ্গরাজ মন্দিরেও ধবজা পরিবর্তন হয়।

স্নানযাত্রা 108 কলসি জলে স্নান করে অসুস্থ হয়ে পড়েন ভগবান। তখন অনবসরে থেকে 15 দিন পাঁচন খেয়ে সুস্থ হন। এ যেন চকানয়নের নরলীলা। সুস্থ হয়ে নব অঙ্গরাগ এ সজ্জিত হয়ে ভগবানের নেত্র উৎসব পালন হয়। এরপর হয় রথযাত্রা। এই সবই ভগবানের নরলীলা প্রকাশ। এই নিয়ে ওড়িশায় কতনা লোককথা পরান কথা প্রচলিত। সব শুনতে শুনতে পুরাণকথার জগতে হারিয়ে যাচ্ছিলাম।
আমি নীলমাধবের কথা বলাতে বাবুজির এক বন্ধু যাঁর দেশের বাড়ি চন্দ্রভাগা তে তিনি বললেন ভুবনেশ্বর থেকে 80/85 মাইল দূরে কন্ঠিলা বলে এক জায়গায় পাহাড়ের ওপরে রয়েছেন নীলমাধব। ওই পাহাড় থেকেই নাকি মহা নদীর উৎপত্তি। আমরা কয়েকজন অতিউৎসাহী গেলাম ওখানে। পাহাড়ি পাকদন্ডী পথে পাহাড়ের ওপরে মন্দিরে পৌছালাম। ওড়িশা রীতির মন্দির। গর্ভ গৃহে কষ্টিপাথরের নীলমাধব মূর্তি। মূর্তির পায়ের কাছে জলে ভর্তি— ওখান থেকেই নাকি মহা নদীর উৎপত্তি! পাহাড়ের উপর থেকে নিচে নদীকে রূপোর ফিতের মত মনে হচ্ছে। আমার স্বপ্ন পূরণ হলো।
এরপর অনেকবারই গিয়েছি শ্রীক্ষেত্রে।এখনো যাই।প্রথমবারের অদ্ভুত ভালো লাগা যেন সারা জীবনের মধুর স্মৃতি হয়ে রয়ে গেছে। নীলমাধবের মন্দিরে যাওয়ার জন্য এখন সিঁডি হয়ে গেছে। খুব সহজেই মন্দিরে পৌঁছানো যায়। তবে প্রথমবারের সেই পাকদন্ডী পথে মন্দিরে যাওয়ার রোমাঞ্চ আর নেই।
রথে জগন্নাথ দেবের দর্শন করলে নাকি মানব জন্ম থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তাই সেই চকানয়ন কে প্রণাম জানিয়ে বলি—” বিশ্বসাথে যোগে যেথায় বিহার
সেইখানে যোগ তোমার সাথে আমার—“
” জয় জগন্নাথ”!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress