আমরা নারী আমরাই পারি
সৌমিতা, নারী দিবসের কোনো লেখা লিখেছিস ? আমি লিখতে বসে বারবার আমার সামনে ঘটে যাওয়া কাহিনী গুলো স্পষ্ট হয়ে উঠছে। তোর সাথে শেয়ার করবার জন্য আজ লিখতে বসলাম। নিজের জীবনের ঘাত-প্রতিঘাত অনেক সহ্য করেছি। যখন কোন নির্দিষ্ট স্থানে বসে থাকি ,একে অপরের সাথে পরিচিত হই- তখন সেই নারীর বেদনার কথা শুনলে আমার নিজের সব ঘটনা তুচ্ছ মনে হয়। তবুও প্রতিবছর শুভেচ্ছা বার্তা আসে , আমরাও শুভেচ্ছা জানাই।
– একজন নারী পড়াশোনা ,গান ,লেখালেখি কিংবা সাংসারিক কাজে সর্বগুণসম্পন্না বলেই আমার মনে হয়। দীর্ঘদিন বালিকা বিদ্যালয়ে পড়িয়েছি, তাই তাদের নানা যন্ত্রণার কথা শুনতে পাই।
– মা তার সন্তানকে দশ মাস গর্ভে ধরে প্রসব যন্ত্রণা উপেক্ষা করে সন্তানের জন্ম দেন। তখন ছেলে মেয়ে অপেক্ষা আমরা সন্তান কথাটা কেই প্রাধান্য দিই। অথচ ঐ কন্যা সন্তান যখন বড় হয় ধীরে ধীরে হাঁটতে শেখে মা সমস্ত খাবারের কম অংশটা সবার শেষে তার পাতে দেন। তার পরেও তাকে বলা হয় ভাই এর সঙ্গে হিংসা করছিস ?তুই তো মেয়ে সন্তান পরের ঘরে চলে যাবি। নিজের মায়ের কাছ থেকে একথা শুনে কার ভালো লাগে বলো। আজও আমরা মেয়েরাই মেয়েদেরকে অপমান করি প্রতিনিয়ত।
– পড়াশোনা জামা কাপড় সবদিক থেকেই মায়ের কাছ থেকে আদায় করে নিতে হয়, মা যে ভালোবাসা ভাইকে উজার করে দেন- সেই ভালোবাসা মেয়েকে দিতে অপারগ। কোন ভাল সাবজেক্ট নিয়ে মেয়েটি যদি এগিয়ে যেতে চায় তাকে বলা হয় এতসব করে কি হবে। দু’দিন পরেই তো শ্বশুরবাড়ি চলে যেতে হবে। ওখানে গিয়ে করিস। এছাড়া বাড়ির কাজ কম্ম ভাইদের দেখাশোনা সবটাই মেয়েটিকে করতে হয়।
– তাই আমরা সর্বংসহা। যে মেয়েরা বাবা-মার কাছে যত্ন পাইনা, তারা শ্বশুর বাড়ি গিয়ে অন্য বাবা-মার কাছ থেকে কতটা যত্ন পাব সেটা সময়ের অপেক্ষা। অবশ্য ব্যতিক্রমী আছেন। একটা সন্তান যদি মেয়ে হয় তাহলে সে যত্নে লালিত হয়, অপরদিকে কোন কোন শ্বশুরবাড়ি এখনও তাদের বৌমাকে সন্তানের মত স্নেহ করেন।
– সেই প্রাচীন যুগ থেকে আজ অবধি সমস্ত দোষের ভার নারীকেই বহন করতে হয়। পুরুষের তুল্য চাকরি সেরে ভিড় ট্রেনে, বাসে ক্লান্ত শরীরে বাড়িতে প্রবেশ করে সকলের সামনে খাবার পরিবেশন করা, সন্তানকে পড়ানো, তার হোম টাক্স সবটাই মাকে করতে হয়। কারণ বাবারা সারাদিন অফিস করে এসে ক্লান্ত। আবার উল্টোদিকও আছে। অমানুষিক পরিশ্রম করে বাবা ঘরে ফিরে এসে তাকে রান্না সন্তান সব দেখতে হয় আবার স্ত্রীর সবকিছু চাহিদার যোগান দিতে হয়। আজ কাল সকাল থেকে মায়েরা সেজেগুজে বেরিয়ে পড়েন ছেলে মেয়ের স্কুলে। সেখানে নানা রকম গল্প গুজবে তাদের সময় অতিবাহিত হয়।
– সবচেয়ে কষ্ট লাগে, যখন মেসেঞ্জার ভরতি আমরা কুমন্তব্যের শিকার হই। একশ্রেণীর মানুষ আছেন, উচ্চ শিক্ষিত হয়েও তাদের মধ্যে অসম্ভব লালসা। মহিলাদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক কম করে শরীরটাকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। অপরদিকে কিছু মানুষ আছেন , তারা বন্ধুত্ব সম্পর্ক কে সম্মান দেন। মেয়েরা বড্ড পুরুষের কাছে লালসার শিকার হয়ে পড়ে।
– প্রতিটি নারীকে আমি এই বার্তা দেবো পড়াশোনা করো, নিজের ভিত তৈরী করো ,তারপর যে বিষয়টি তোমার ভালবাসার সেই বিষয়টি নির্বাচন করে জীবনে এগিয়ে যাও। বিবাহিত জীবন সব নয়। তুমি যোগ্য হলে যোগ্য পুরুষ নিশ্চয়ই আসবেন বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনের উদ্দেশ্যে। কিন্তু নিজের জীবন নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে এটা তোমাদের চ্যালেঞ্জ নিতে হবে।
– আজও ধর্ষিতা নারীকে নিয়ে মানুষ সমালোচনা করেন। এই পুরুষশাসিত সমাজে, তারা নির্দোষ। রাত দশটা বেজে গেলে ট্রেনে ফিরতে আজও ভয় হয়। ঋতুস্রাব হলে আজও আমাদের লুকিয়ে চলতে হয়। নানা হাসাহাসি ,মুখ চাওয়া চলে। কন্যা ভ্রুণ হত্যা, মেয়েদের শরীরের দিকে কু দৃষ্টিতে তাকানো আজও রয়েছে। ডিভোর্সের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। মেয়েদের একাকী জীবন নির্বাহ করে চলতে হচ্ছে। অন্য নারীর প্রতি আসক্তি চিরকাল ছিল, আজও তা বজায় রয়েছে।
– ৬ মাসের শিশু রক্ষা পায়না এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজে। ১৮ বছরের যুবতী কীভাবে রক্ষা পাবে। সংসারে নারীরাই নারীকে বেশি অবমাননা করি। কোনভাবেই তাকে উচ্চে ওঠার স্বপ্ন দেখাই না। তাইতো শাশুড়ী বৌমার মধ্যে বিরোধ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে।
– পক্ষান্তরে, বড়দের সম্মান করার ইচ্ছাটা নতুন প্রজন্মের মধ্যে কমে গেছে। এখন সংসারে নতুন প্রবেশ করেই শাশুড়ী কিংবা গুরুজনদের বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেওয়ার একটা প্রবল বাসনা তাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে। এ দিক থেকেও একজন নারীকে সংসারী হতে হবে, ভালোবাসার মধ্যে সবাইকে আবদ্ধ রাখতে হবে। সংসার মানে একটা শৃঙ্খলা বোধ। যেখানে সবাই একটা গণ্ডির মধ্যে নিজেদেরকে সুন্দর ভাবে উপস্থাপনা করেন। তাই নারী দিবসে বলবো আমরা নারী আমরা সব পারি। বৃদ্ধাশ্রমের সংখ্যাটাও তোমাকেই কমাতে হবে।
– আগামী দিনে নারীরা সর্বস্তরে উচ্চ আসনে থাকুক এই কামনা করি।