Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » আপন-পর || Maya Chowdhury

আপন-পর || Maya Chowdhury

আপন-পর

নিবেদিতা পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ে শতদল স্কুলে। অনেকদিন ওর মা শোভা ,রত্নাদির কোচিংএ মেয়ে পড়াতে নিয়ে আসতো। একেবারে বাচ্চা মেয়ে ,মা বেশিক্ষণ ছেড়ে থাকতে পারত না ।তাই দু ঘন্টা পড়া হয়ে গেলে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই পৌঁছে যেত। স্বামী এবং মেয়ে নিয়ে সুখে দিন যাপন করেন। যদিও আর্থিক কষ্ট রয়েছে তবু শান্তি বিরাজমান। নিবেদিতা ক্লাস সিক্স সপ্তম_ অষ্টম শ্রেণী পাস করে এতদিনে মাধ্যমিকে বসবে। তাই ওর বাবা-মা খুব ব্যস্ত মেয়েকে বিভিন্ন কোচিং এ নিয়ে ছোটাছুটি করছেন। নিবেদিতা গান বাজনা নাচ খুব ভালোবাসে। কিন্তু এবার মাধ্যমিকের জন্য এগুলো বন্ধ করে রেখে দিয়েছিলেন। পরে পরীক্ষা হয়ে গেলে আবার ওগুলো নির্দিষ্ট দিনে যাওয়ার ব্যবস্থা করবেন। এভাবে দিন চলছে। খুব কাছেই জীবনের বড় পরীক্ষা মাধ্যমিক। হঠাৎ একদিন মুখ কাঁচুমাচু করে বসে আছে রত্নাদির বাড়ি। সবাই জিজ্ঞাসা করলে নিবেদিতা উত্তর দেয় কিছু হয়নি। কিন্তু উত্তরের সঙ্গে ওর মুখমণ্ডলের অভিব্যক্তির মিল ছিল না। সবাই চলে গেলে রত্নাদি ওকে একা নিয়ে বসে। পড়াতে পড়াতে জিজ্ঞাসা করেন কি হয়েছে তোর?চুপচাপ কেন?, কাঁদো কাঁদো মুখ কেন। তখন একটা কথা রত্না দিকে বললে তিনি বিস্মিত হন। মানুষের জীবন কত রকমের। সমস্যাটা রত্নাদি নিজে বুঝে সমাধান করার চেষ্টা করেছেন কিন্তু তা সম্ভব হয়ে উঠেনি। নিবেদিতা গল্প করতো ওর মাসির মেয়ে সঞ্চিতাকে নিয়ে।। ওর থেকে বছর দুই বড়। মাসি মেসোর অবস্থা খুব ভালো। মাঝে মাঝে বাড়ির ছবিটা হাতে এনে দেখাতো কত ক্ষমতাশালী দেখে খুশি হত। একদিন রত্নাদি আমাকে ফোন করেন। ল্যান্ড লাইনে আমার ফোনটা কেটে গিয়েছিল। পুনরায় করতে ফোন ধরি ।ওই প্রান্ত থেকে বললাম হ্যালো বল কেমন আছো। আমি ভালো আছি বলে জানাল একটা কথা তোমার সাথে শেয়ার করতে চাই। আমি বললাম হ্যাঁ বলো কোন অসুবিধা নেই। তারপর ও শুরু করল। নিবেদিতা ও সঞ্চিতা দুই বোন। একই মায়ের সন্তান। দু’বছর ওদের বয়সের তফাৎ। সঞ্চিতার মা একটা মহৎ কাজ করেছিলেন
। নিজের বোন শোভা যখন নিঃসন্তান ছিলেন তখন শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছিলেন। অনেক ডক্টর দেখাতেও কোন কাজ হয়না। ওকে বাঁচানোর জন্য ডাক্তার পরামর্শ দিয়েছিলেন যেখান থেকে হোক একটা সন্তান যদি নিঃসন্তান মায়ের কোলে দেওয়া যায়। পৃথিবীতে খুব কম লোক পাওয়া যায় যে নিজের সন্তানকে পরের হাতে তুলে দেবে। কিন্তু সঞ্চিতার মা নিজের বোনকে চেনে। তাই রাজি হয়ে নিজের দু মাসের মেয়েটিকে বোনের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। শোভার স্বামী সুভাষ নিজের স্ত্রীকে খুব ভালোবাসত। তাই ভাবল বড় হয়ে গেলে সন্তানকে যদি ওরা ফিরিয়ে নেয় তাহলে শোভা আর বাঁচবে না। তাই একটা লিখিত কাগজ আশা করেছিলেন। সঞ্চিতার মা বাবা নিঃসংকোচে একটি কাগজে লিখে মেয়েকে দান করলেন। এরপর থেকে দুই বোনের চলার রাস্তা ভিন্ন। নিবেদিতার বর্তমান মা র আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। তাই এতদিন নিবেদিতা জানতো সঞ্চিতা ওর মাসির মেয়ে । আলমারিতে কোন এক জায়গায় লেখা খাতাটি ওর হাতে পড়ে গিয়েছিল। লেখাটা পড়ে বিশ্বাস করতে পারেনি ,নিজেকে পাল্টা ঠিক করে নিয়ে বারবার লেখাটা পড়ে ।এটা কি লেখা তাহলে আমি কি এই বাবা-মার সন্তান নয় ?যদি না হয় তবে আমার প্রকৃত বাবা-মা কেন এমন কাজ করলেন? আমাকে এত কষ্ট দিলেন কেন ?আমিতো অবস্থা ঘরে জন্মগ্রহণ করেও কেন এত কষ্ট পাচ্ছি ।নিজের জীবন রাখবে না বলে প্রথমে ভেবেছিলো পরে নিজেকে সামলে নিয়ে অনেক প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে ওর পরিচিত মানুষদের কাছে পৌঁছেছে। সবাই ওকে ভালো উপদেশ দিয়েছেন। তোমার বর্তমান মা- বাবা তোমাকে কোন অংশে কষ্টে রাখেনি ।তিনি গর্ভধারণ না করলেও তোমাকে পরিচর্যা করে লালন-পালন করছেন। নিজের পরিচয়ে প্রকৃত মানুষ করছে।
অপরদিকে তোমার মা আশা ভুল কাজ করেননি বোনকেএতটাই ভালোবাসে যে নিজের সন্তানকে ওর হাতে তুলে দিতে কুণ্ঠাবোধ করে নি। ভেবেছিলো আমার থেকে আলাদা কিছু নয় আমরা একই মায়ের ঘরে জন্মেছি। শোভা খুব যত্নে ওকে বড় করবে। আমি এর মধ্যে যদি থাকি তাহলে শোভা কষ্ট পাবে। তার থেকে ওকে ওর মত করে জীবন ধারন করতে দাও।
নিবেদিতার সঙ্গে হঠাৎ আমার সেদিন-দেখা-হয়েছিল। নিবেদিতা এখন বিবাহিত। ছোট্ট একটা মেয়ে রয়েছে ফুটফুটে । জিজ্ঞাসা করলাম কেমন আছো ।উত্তরে জানাল ভালো আছে তার পরিবারকে নিয়ে ।তবে সে গর্ভধারিণী মা অপেক্ষা শোভাকে উপযুক্ত সম্মান দেয়। নিজের মায়ের কাছে সেভাবে আর যাওয়া হয় না। কখনো-কখনো দেখা হয়। ঠিকই করে নিয়েছে জীবনে যেখানে ছোট থেকে বড় হয়েছে সেই মা আপন হয়ে থাকুক ওর জীবনে। জন্মদাত্রী মায়ের আলাদা কোন বিশ্লেষণ হয় না।কে আপন কে পর ভাবার প্রয়োজন নেই।ভালোবাসা আর দায়িত্ব কর্তব্য আমাদের জীবনে শোভা মায়ের বেশি। তিনি যত্ন করে ফুটফুটে শিশু থেকে পরিণত করে দিয়েছেন তিনি প্রকৃত মা। শোভার কাছে ওর দিদি সঞ্চিতার মা ,ঈশ্বর অপেক্ষা কম নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress