Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » আত্মীয় || Maya Chowdhury

আত্মীয় || Maya Chowdhury

আত্মীয়

আজ সুজিত চৌধুরি কে দেখলাম একেবারে রুগ্ন অবস্থায়। কিছুদিন আগে পর্যন্ত বেশ গম্ভীর প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। কয়েকটা কথা বললে একটা উত্তর দিতেন। পাড়ার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের অন্যতম, সবাই একটু সম্ভ্রমের সঙ্গে চলতাম। হঠাৎ করে রুগ্ন মুখ টা মেলাতে পারছিলাম না। আমরা যখন স্কটিশে পড়তাম, আমাদের থেকে এক বছরের সিনিয়র ছিলেন। গাম্ভীর্যের জন্য যোগাযোগটা কম ছিল। পড়াশোনায় তুখর ছিলেন। কিছুদিন আগে অধ্যাপনা থেকে অবসর গ্রহণ করেছেন। যদিও আমি অত ভালো পড়াশোনায় ছিলাম না, তাই একটা দোকান করেছি মাত্র। বউ বাচ্চা নিয়ে খেয়ে পড়ে বেঁচে আছি। ছোটবেলা থেকে এক পাড়াতে আমাদের বসবাস। ওনার ছেলেমেয়েদেরও খুব কম দেখেছি পাড়ার মধ্যে। তবে দুটি ছেলে মেয়ে খুব গুণের। দুজনেই ডাক্তার। আজ একটু থমকে দাঁড়িয়ে কথা বললাম। ‘সুজিতদা, চিনতে পারছেন? আমি মৈনাক। ছেলেবেলা থেকে এক স্কুলে পড়াশোনা করেছি। একই কলেজে এক ক্লাস নীচুতে পড়তাম। যাইহোক, শরীর ঠিক আছে তো?’
– হ্যাঁ আমি একপ্রকার রয়েছি। কিন্তু তোমার বৌদি কয়েকদিন অসুস্থ। মারণ রোগ বাসা বেঁধেছে। অনেক চেষ্টা করছিসুস্থ করার। ছেলেমেয়েরাও চেষ্টা করছে। অনেক তো হলো, জানিনা কতদিন মানুষটা থাকবে। ওরা তো বাড়ি থাকে না। একজন বিদেশে রয়েছে, অন্যজন অন্য স্টেটে। তাই আমাকে একাই সামলাতে হয়।
– এ নিয়ে ভাববেন না সুজিত দা। আমাদের পাড়া একে অপরের বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়ে। অসুবিধা হলে এই ফোন নম্বরে ফোন করবেন।
– খানিকক্ষণ উদাস হয়ে গিয়েছিলেন সুজিতদা। তার মনে পড়ল, পাশের বাড়ির ছোট্ট মেয়ে পায়েল যখন অসুস্থ, ওর মা ছুটে এসেছিল।- আপনার বাবুকে একটু বলুন না আমার মেয়েটাকে দেখে দিতে। কি হয়েছে বুঝতে পারছিনা।
– সেদিন সুজিতদা এক মায়ের মুখের উপর দরজাটা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। দাম্ভিকতার পরিচয় দিয়েছিলেন। পায়েল হারিয়ে গেছে তার মায়ের বুক থেকে।তবুও তিনি একজন গণ্যমান্য ব্যক্তি।
– এছাড়া ছেলেবেলার বন্ধু মাছ বিক্রি করে বলে তিনি কথা বলেন না।
আজ সুজিতদা একেবারে একা। নিরুপায় হয়ে আমার ফোন নম্বরটা নিয়েছিলেন। ভাবতে পারেননি, যাদের ঘৃণার চোখে দেখতেন, যাদের সঙ্গে তার কথা বলতে সম্মানে লাগে আজ তারাই তার বিপদে এগিয়ে এসেছে। অহংকার মানুষকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। মেধা দিয়ে সবসময় বিচার করাটা ঠিক নয়।
আজ আমরা নিয়ে এসেছি বৌদিকে নার্সিংহোমে। দিনরাত এক করে বৌদিকে সুস্থ করে নিয়ে যাবই। একটু কষ্ট করে যদি কারো প্রাণ ফিরিয়ে দিতে পারি, সে পরিবারের হাসি দেখতে পারি, তবে ক্ষতি কি। ঈশ্বরের উপর নির্ভর করে বৌদির সেবায় আমরা ব্রতী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *