আত্মার ক্ষিদে
হঠাৎ শুনলাম রায় মশায়ের ছেলে সৌমেন্দু বিয়ে করতে গিয়ে দেখে কনে গলায় দড়ি দিয়েছে। অগত্যা বর , বরযাত্রীরা ফিরে আসছে।লগ্নভ্রষ্টা ছেলের শেষ লগ্নে বিবাহ,তাই জোরকদমে কনের খোঁজ চলছে।
হ্যারিকেনের আলোয় পড়ছিলাম, হঠাৎ মা বললেন মধুছন্দা তুই পড় , আমি এক্ষুণি আসছি।এই বলে মা,আমার ছবি নিয়ে ছুট দিলেন।যদি পরীক্ষায় সফল হয় তাহলে শেষ লগ্নে আমার বিয়ে। হায়রে পাশ করে গেলাম।বিয়ে হয়ে গেল রাজপুত্রের সাথে ঘুটে কুড়ুনির।তার বিনিময়ে বাবা পেলেন পাকা দালান, জমিজমা, প্রচুর গয়না। অচেনা ছেলেটি আমাকে পেয়ে খুশি হয়ে গেল। মাঝে মাঝে আগের কনের নাম ধরে ডাকত। ফুলশয্যার রাতে আগের কনের আংটিটা আমায় পরিয়ে বলে তোমাকে মালতী বলে ডাকতে পারি।আসলে আমার কনের প্রতি প্রেম ঘটে নি।ওই নামটা বেশ লেগেছিল।
এরপর দিন পনেরো বাদে দার্জিলিং বেড়াতে গেলাম। ওখানে আগে বুকিং ছিল।মালতী রায় ও সৌমেন্দু রায়।প্রচুর ঠান্ডায় আমরা জমে যাচ্ছিলাম। আমি বাথরুমে তখন হঠাৎ লোডশেডিং। অন্ধকার ঘরে বর কাকে আদর করছে।ওই মহিলা বলছে ছাড়ো। খিলখিল অট্টহাসি ! বর বলছে মালতী তুমি কি আমাকে বিয়ে করে খুশি হওনি।
ঐ মহিলা হিস হিস করে বলছে তুমি আমার নাম ব্যবহার কেন করছ! আমার জায়গায় অন্য আরেক জনকে কেন এনেছ! তোমাকে আমি ছাড়ব না।
বর আঁৎকে বলে তুমি কে!!!
হি হি করে হেসে বলে আমি তোমার মালতী তো।
তারপর হঠাৎ আলো জ্বেলে ওঠে। কেউ কোথাও নেই।মনে মনে ভাবি ওটা মনের ভুল। খাটের কাছে গিয়ে দেখি বর শুয়ে আছে। আমি কাছে গিয়ে বলি আমায় মালতী বলে ডেকো না। যতই হোক তার অশরীরী আত্মা ঘুরে বেড়াচ্ছে । হঠাৎ বরের চেহারায় পরিবর্তন দেখি। মেয়ের মতো হিসহিস করে বলে তুই এক্ষুণি পালা।
আমার জায়গায় কেন এসেছিস??
মালতীর অশরীরী আত্মার উপস্থিতি স্পষ্ট অনুভূত হচ্ছে। ঠিক যেন সৌমেন্দুর কাঁধের কাছে মুখ রেখে চাপা স্বরে গোঙাচ্ছে ।বলছে পালিয়ে যা মধুছন্দা।প্ল্যানচেট করে জানতে চেয়েছিলিস কেন চলে গেলাম। আমার চলে যাবার ঘটনা তবে শোন– আমার সাথে কদিনের পরিচয় হয়েছিল ত্রিনদের।তারপর সৌমেন্দুর সাথে বিয়ে ঠিক হতেই ত্রিনদ মালতীকে ব্লাকমেইল শুরু করে।তাই ভয়েপৃথিবী হতে চলে গেছি। আমি ভয়ে দু’চোখ বন্ধ করে পেছন ফিরে সৌমেন্দুকে জড়িয়ে ধরি,আর মালতীকে বলি তুমিতো জানো আমার বিয়ে হয়ে গেছে ওকে ছেড়ে দাও। তাহলে তোমার বর সারাক্ষণ আমাকে ডাকছে কেন? আমার ও মালতীর মারপিট চলতে থাকে। সকাল হতে দেখতে পাই আমি ঘরে একা। সৌমেন্দু ঘরে নেয়।সৌমেন্দু বলে ডাকতে থাকি। হোটেল মালিক বলে কাল রাতেতো সৌমেন্দু বাবু চলে গেছে। সঙ্গেতো আপনি ও ছিলেন। আমি বলি আমিতো ঘরে ছিলাম। তাহলে সঙ্গে কে ছিলেন!!
সন্ধ্যা হতেই বাতাসে দৈববাণী হচ্ছিল খিলখিল হাসি।কি রে তোর বরকে নিয়ে হানিমুনে গেলাম। আমি বললাম মালতী ওকে ছেড়ে দাও। ছেড়েতো দিয়েছি।যা ছাদের ঘরে তোর বর আছে। ঘরে যেতে দেখি সৌমেন্দু দাঁড়িয়ে। ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বলি কোথাও চলে গেছিলে। তোমার গা বরফ কেন!!! হঠাৎ অনেক পুলিশ বলে ম্যাডাম আপনার স্বামী ম্যালের পাশে পড়ে আছেন।
না না উনি এখানে ছিলেন। পুলিশ বলে ওনার আত্মা এসেছিলেন। আজ বহুবছর পেরিয়ে গেছে রায়বাড়ির ধন সম্পত্তি সব আগলে যাচ্ছি।প্রতি রাতে সৌমেন্দু এসে বলে
মধুছন্দা আমাদের মধুচন্দ্রিমা আর হলো না।