Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » আত্মহত্যার আগে || Shamsur Rahman

আত্মহত্যার আগে || Shamsur Rahman

শয্যাত্যাগ, প্রাতরাশ, বাস, ছ’ঘণ্টার কাজ, আড্ডা,
খাদ্য, প্রেম, ঘুম, জাগরণ; সোমবার এবং মঙ্গলবার
বুধ, বৃহস্পতি, শুক্র, শনি আর রবিবার একই
বৃত্তে আবর্তিত আর আকাশ তো মস্ত একটা গর্ত-
সেখানে ঢুকব নেংটি ইঁদুরের মতো। থরথর
হৃদয়ে প্রতীক্ষা করি, স্বপ্ন দেখি আগামীকালের
সারাক্ষণ, অনেক আগামীকাল্য উজিয়ে দেখেছি
তবু থাকে আরেক আগামীকাল। সহসা আয়নায়
নিজের ছায়াকে দেখি একদিন-উত্তীর্ণ তিরিশ।

পূর্ণিমা চাঁদের দিকে পিঠ দিয়ে, অস্তিত্বকে মুড়ে
খবরের কাগজে ছড়াই দৃষ্টি যত্রতত্র, নড়ি,
মাঝে-মাঝে ন’ড়ে বসি, সত্তার স্থাপত্যে অবিরল
অলক্ষ্যে গড়িয়ে পড়ে মাছের ঝোলের মত জ্যোৎস্না
আর আমি বিজ্ঞাপন পড়ি, হাত-পা ছড়িয়ে পড়ি

এবার কলপ দিন, আপনি তো জানেন অকাল-
পক্ব চুলে কলপ লাগালে অনায়াসে ফিরে আসে
ফেরারি যৌবন… আর এই ফলপ্রদ টনিকটা
খাবেন প্রত্যহ তিনবার ঠিকঠাক দাগ মেপে
অর্থাৎ চায়ের চামচের দু’চামচ এবং খাবার আগে
কিংবা পরে, তাহলে বাড়বে ক্ষিদে আর স্নায়ুগুলি
নিশ্চিত সবল হবে, যদি খান সুস্বাদু টনিক।

ধরা যাক যা-কিছু লিখেছি সবি পড়ে লোকে, প’ড়ে
প্রচুর তারিফ করে, ব্যাংকের খাতাও স্ফীতকায়;
উন্নতির সবগুলি গোল ধাপ পেয়েছে আমার
সুকৃতী পায়ের ছাপ, ইচ্ছাপূরণের যত গান

হৃদয়ের সাতটি মহলে পেলো খুঁজে সফলতা;
জীবনের প্রতিটি সুন্দর স্বপ্ন পাপড়ি মেলে
চেয়েছ আমার দিকে পত্নীর গার্হস্থ্য প্রণয়ের
পরিণাম পুত্র-কন্যা সহজে এসেছে যথারীতি
এবং নিজের বাড়ি, সাজানো বাগান, ধরা যাক,
গাজরের ক্ষেত, মুরগি ইত্যাদির স্বচ্ছন্দ বিন্যাসে
মানবজীবন ধন্য। শৈশবের সাধের কল্পনা
নকশা অনুসারে, ধরা যাক, একে একে ঘটল সবি।
অনেক সমুদ্র ঘুরে কত বন্দরের গন্ধ মেখে
একদিন সার্থবাহ বার্ধক্যের অবসন্ন ঘটে
ফিরে আসে পণ্যবাহী সার্থক জাহাজ, পালতোলা,
গলাফোলা নাবিকের গানে গুঞ্জরিত। মূর্খ যত
চেঁচিয়ে মরুক তারা, পূর্ণতার স্তবে রাত্রিদিন
জপেছি ভীষণ মন্ত্র ক্ষয়ে ক্ষয়ে… কিন্তু তারপর?

আড় হয়ে বিকেলের রোদ পড়ে চায়ের আসরে;
কয়েকটি সুবেশ তরুণ-তরুণীর সংগত সংলাপে
গোলাপ বাগান জ্বলে রক্তিম কুঁড়ির জাগরণে
মুহূর্তের অতন্দ্র মালঞ্চে। টেবিলের ফুলদানি
জ্যোৎস্নার বিস্ময়ে ফোটে মহিলার অন্ধকার ঘরে।
নিয়ন আলোর মতো কারুর হাসির শত কণা
জাগায় স্মৃতির শব, হাড়হিম দেহে লাগে তাপ।
আমি নই ইডিপাস, তাহলে কী করে উচ্চরোলে
সভাসদ মাঝে করি উচ্চারণ ‘অবশেষে বলি
ভালো সবকিছু ভালো?’
অসংগতি, না আমার মধ্যে নেই, রয়েছে সেখানে
রেস্তোরাঁয়, অন্ধকারে দেয়ালে আমার চতুর্দিকে,
বলতে পারো বরং নিজেই আমি নিমজ্জিত, ওহে,
এ-অসংগতির মধ্যে। লিপস্টিক ঘষে মুছে-ফেলা
ঠোঁটের মতন আত্মা নিয়ে কী আশ্বাসে বাঁচায় যায়
যন্ত্রণার অগ্নিকুণ্ডে, বিরক্তির মাছির জ্বালায়?

যেহেতু উপায় নেই ফেরবার, আমার সম্মুখে
দুটি পথ অবারিত, আমন্ত্রণে প্রকট চটুল-
গলায় বিশ্বস্ত ক্ষুর কিংবা অলৌকিক বিশ্বাসের
রাজ্যে শুধু অন্ধের স্বভাবে বিচরণ, সায় দেয়া
কবন্ধের শাস্ত্রের শাসনে, পরচুলা খ’সে পড়া
ক্রমাগত অনর্থক যুক্তিহীন মাথা নেড়ে-নেড়ে।

ঈশ্বর কি শিউরে ওঠেন মলভাণ্ডে? উনুনের
কড়াইয়ের তীব্র জ্বালে কুঁকড়ে যান কাগজের মতো?
যদি বলি প্রবঞ্চনা ঈশ্বরের অন্য নাম তবে
সত্য থেকে সঠিক ক’গজ দূরে আমার সংশয়ী
পদক্ষেপ? তা হলে বিশ্বস্ত ক্ষুর গলায় ছোঁয়ালে
অথবা ক’ফোঁটা বিষ কণ্ঠ বেয়ে নেমে গেলে এই
জ্বঠরের পাকে পাকে, পার্থক্যের কী জটিল সূত্র
উন্মোচিত হবে পরিণামে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *