মুক্তির সংগ্রামে আমি কাটিয়েছি তিরিশ বৎসর ;
করিনি চেষ্টার ত্রুটি দূরবর্তী দুর্গের রক্ষায় ;
ছিল না জয়ের আশা, তবু যুদ্ধে থেকেছি তৎপর;
ভাবিনি অক্ষত দেহে ঘরে ফিরে যাব পুনরায়।।
অহোরাত্র পাহারায় এক বারও ফেলিনি পলক ;
অসাধ্য লেগেছে নিদ্রা শিবিরের সামান্য শয়নে ;
অনিচ্ছায় ঢুল এলে, তৎক্ষণাৎ ভেঙেছে চমক
সৎসাহসী সঙ্গীদের সমস্বর নাসিকাগর্জনে ।।
মাঝে মাঝে মহানিশা ভ’রে গেছে সান্দ্র অবসাদে,
হৃদয়ে জেগেছে আর্তি- নির্বোধেরই ভয়-ডর নেই-
অশ্লীল গানের কলি সে-সময়ে ভেঁজেছি অবাধে ;
পুরেছে বিবিক্ত মৌন কখনও বা উদ্ধত শিসেই ।।
উন্নিদ্র সন্দেহ চোখে, শব্দভেদী অবধান কানে,
সজাগ বন্দুকে উষ্মা, কৌতূহলী অজ্ঞের প্রগতি
থামিয়েছি অর্ধপথে ; দেখিয়েছি অব্যর্থ সন্ধানে
সূচ্যগ্রপ্রমাণ যত লম্বোদর দাম্ভিকের গতি।।
কিন্তু সে-ক্লীবের দলে হেন শত্রু মিলেছে দৈবাৎ
সাংঘাতিক লক্ষ্যবেধে যে সব্যসাচীর প্রতিযোগী;
না মেনে উপায় নেই-সাক্ষী আছে বহু রক্তপাত,
অসংখ্য উন্মুদ্র ক্ষতে প্রতিপন্ন আমি ভুক্তভোগী ।।
অনাথ দূরান্ত দুর্গ; রক্তগঙ্গা আহত প্রহরী;
বন্ধুরা নিহত,কিংবা অগ্রগামী, নচেৎ বিমুখ;
মরণেও অপরাস্ত, অবশেষে খাতে ট’লে পড়ি;
ভাঙেনি আমার অস্ত্র,শুধু জানি ফেটে গেছে বুক ।।
–হাইন্রিখ্ হাইনে