আজাদী কা অমৃত মহোৎসব
‘হর ঘর তিরঙ্গা, আজাদী কা অমৃত মহোৎসব’ শুরু হয়ে গেছে। চারিদিকে সাজো সাজো রব। শৌনিকও তাড়াতাড়ি অফিস থেকে বেরিয়ে পড়েছে, পতাকা কিনবে বলে।
বাজারের পশ্চিমদিকটায় শিবশঙ্কর হালদারের প্রাচীন স্টেশনারী জিনিসের দোকান। গত চল্লিশ বছর ধরে পতাকা বিক্রি করছেন শিবশঙ্করবাবু। স্বাধীনতার সময় ওনার বয়স ছিল পাঁচ বছর। এখন আশি পেরিয়ে একাশি ছুঁই ছুঁই। শিবশঙ্করের বাবা হরিশঙ্কর দোকানের গোড়াপর্তন করেছিলেন। সৎ ও কর্মনিষ্ঠ থেকে এই প্রতিষ্ঠানটিকে এই জায়গায় দাঁড় করিয়েছেন। বাবার কাছে স্বাধীনতার অনেক গল্প শুনেছেন শিবশঙ্করবাবু। তাই পতাকা বিক্রি করাটা স্বাভিমানের চোখে দেখেন। গ্রাহকরাও জানে শিবশঙ্করবাবুর দোকান থেকে কিনলে ঠকার ভয় নেই।
শৌনক দোকানের সামনে এসে দাঁড়ালো। দোকানে খদ্দেরদের বেশ ভীড়। শিবশঙ্করবাবু ও উনার নাতনির দোকান সামলাতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে।
শৌনিকের দেখে ভাল লাগলো। অনেক স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা, টোটোওয়ালা দোকানে ভীড় জমিয়েছে। কেউ কেউ কেনা শেষ করে বাহনগুলো সাজাতে ব্যস্ত। চারিদিকে বেশ উৎসবের পরিবেশ।
এমন সময় তীব্র শব্দ করে একটি বাইক দোকানের সামনে এসে দাঁড়ালো। কম বয়সী যুবক। বিশ-বাইশ হবে। এক কানে দুল, চোখে রঙ্গীন চশমা, পরণে জিনসের প্যান্ট। প্যান্টের গায়ে অজস্র ছিদ্র। ওটাই নাকি এখনকার ফ্যাশন। বাইক থেকে না নেমেই হাঁক দিল। ‘এই যে শুনছেন, আমাকে একটা রঙ-বেরঙের তিরংঙ্গা পতাকা দিন। একই রকমের পতাকা আর কতো উড়াবো।’
শিবশঙ্করবাবু কথাটা শুনে বিষম খেলেন। মাথাটা কিছু সময়ের জন্য ব্ল্যাঙ্ক হয়ে গেলো। মনে মনে আওড়ালেন, পতাকা আবার রঙ-বেরঙের হয় নাকি। চেয়ারের হাতল ধরে নিজেকে সামলে নিলেন। নাতনি রুমকি দেরাজে রাখা জলের বোতল আনতে দাঁড়ালো। গ্রাহকেরা শিবশঙ্করবাবুকে ঘিরে জটলার সৃষ্টি করলো।
ছেলেটি ‘ডিসগাস্টিং’ বলে বাইক স্টার্ট দিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেলো।