আগন্তুকের মুশকিল আসান
সত্যজিত রায়ের “পথের পাঁচালী” ছিল এক স্বপ্ন জয়ের লড়াই। সত্যজিত বিক্রি করলেন বিজয়া রায়ের সব গহনা, জীবনবীমার পলিসি, নিজের দুষ্প্রাপ্য গানের রেকর্ডের সংগ্রহ… সব যোগ করেও সংগ্রহ হল না ফিল্ম তৈরীর সমস্ত টাকা।
এমন সময় ভগবানের ছদ্মবেশে এলেন সেই আগন্তুক – পশ্চিম বাংলার রূপকার ডঃ বিধানচন্দ্র রায়! কি করে করলেন সেই টাকার সংস্থান?… সেই মুশকিল আসান হল দীর্ঘ ইতিহাস!
সত্যজিত রায় টাকা জোগাড় করতে পারছেন না, দেখে সত্যজিতের মা দারুণ চিন্তায় পড়লেন। দেখা করলেন বন্ধু মুখ্যমন্ত্রী বিধান রায়ের সঙ্গে। বিধান রায় সব শুনে সত্যজিতের মাকে বললেন, “কাল তুমি ছেলেকে একবার আমার কাছে পাঠাও। দেখি কিছু করা যায় কিনা! ফিল্ম তৈরী করতে আজ পর্যন্ত ভারত সরকার কিংবা কোন রাজ্য সরকার টাকা দেয়নি। সরকার কি করে ফিল্ম প্রযোজনা করবে? আইনে যে আটকে যাবে? ঠিক আছে তবু ওকে কাল পাঠাও। দেখি কিছু করা যায় কিনা !”
পরদিন সত্যজিত এলে বিধান রায় তাকে বললেন, “গল্পটা ছোট্ট করে শোনাতে।
গল্প শোনার পর বিধান রায় চিফ সেক্রেটারিকে ডাকলেন। সব বললেন, দ্যাখো কিছু টাকাপয়সা দেওয়া যায় কিনা! চেনো ওকে? সুকুমার রায়ের ছেলে, উপেন্দ্রকিশোরের নাতি — সত্যজিত রায়। দেশের বিখ্যাত সিনে ক্লাব চালায়।
চিফ সেক্রেটারি বললেন, “সব জানি স্যার। কিন্তু এক্ষেত্রে সরকার কি করে টাকা দেবে!”
বিধান রায় হেসে মজা করলেন, “কি বিলেতে আই সি এস পড়ে এলে? আরে বাবা, আইনও আছে, আইনের ফাঁকও আছে।”
এবার সত্যজিতের দিকে তাকিয়ে বললেন, “গল্পের শেষটা একটু পাল্টাও। গ্রামের পঞ্চায়েত ব্যবস্থার উন্নয়নের কথা বলে একটু সরকারি প্রচার করো।”
সত্যজিত অবাক, সরকারের কাজের প্রচার করবে আমার ছবি? অসম্ভব! সত্যজিত নমস্কার জানিয়ে বললেন, ” গল্প পাল্টানো অসম্ভব।ছবি নিয়ে কোন কম্প্রোমাইজ করতে পারবো না। আমায় ক্ষমা করবেন। বিধান রায় হেসে বললেন, “আরে তোমার মনোভাবটা যাচায় করছিলাম। বাড়ি গিয়ে খাও আর ঘুমাও। সরকার টাকা দেবে।”
পরদিন সত্যজিতকে ডেকে বিধান রায়।বললেন, “সরকারের গ্রাম উন্নয়ন খাত থেকে এই টাকা দেওয়া হবে। কোনো প্রচার করতে হবে না।”
“পথের পাঁচালী” সিনেমা তৈরী করতে খরচ হয়েছিল ৭০০০০ টাকার মতো। ১৯৫৯ সালেই এ সিনেমা ১২ লক্ষ টাকা লাভ করেছিল! ১৯৫৫ সালে, ২৬ অগাস্ট ‘বসুশ্রী’ সিনেমা হলে এ ছবি মুক্তি পেয়েছিল।
আর ‘বীনা’ সিনেমায় বিধান রায় এ ছবি দেখে বলেছিলেন, “দারুণ ফিল্ম বানিয়েছো হে!, অস্কার না পেয়ে যাও!” কথা ফলে গিয়েছিল।এই আগন্তকের আবির্ভাবে লাইফ টাইম অস্কার পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছিলেন সত্যজিত রায়। বিধান চন্দ্র রায়ের ডাকনাম ‘ভজন’ ছিল। তাই তাঁর ভজনা করলে সব মুশকিল আসান।