Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » আই ড্রপ || Rana Chatterjee

আই ড্রপ || Rana Chatterjee

আই ড্রপ

ঘড়িতে বিকাল চারটে চল্লিশ বাজার সাথে সাথেই টেবিল জুড়ে আল্হাদে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ফাইল পত্তর গুছিয়েই স্টেশন মুখো হবার ক্ষিপ্রতা বেড়ে যায় বহুগুণ ।নিত্য দিনের এই অভ্যাসে পথ হাঁটা বেশ ভালোই লাগে ট্রেন পাবো তো আজ, চলে গেলো না তো এই সব প্রশ্নের বুদ্বুদ নিয়ে ।

রাস্তা হাঁটি আর দেখতে থাকি দুপুরে দোকান বন্ধ রাখার পর বিকালে খোলার তোড়জোড় ।পৌরসভার কলে জল নেবার জটলা, মফস্বল শহরের দুপুরে ভাত ঘুমের পর নাগরিক হাই ওঠা জীবন।দোকানের সামনে কেউ জল ছিপছিপ দিয়ে ঝাঁট দিচ্ছে, সামনেটা পরিষ্কার পরিছন্ন রাখার এক মানসিক প্রস্তুতি।এ নিয়ে পাশের দোকানের সাথে একটা সূক্ষ প্রতিযোগিতা বেশ উপভোগ করি নিজের মধ্যে ।সেই সঙ্গে হোমিও প্যাথি কলেজে পড়তে আসা উত্তরপূর্ব রাজ্যের ছেলে মেয়েদের ভিড় এই বীরভূমের সাঁইথিয়া শহরে ।তারা তাদের অভ্যস্ত জীবনের ভিন্নতর রঙিন খোলামেলা পোষাকে টুকি টাকি জিনিষ কিনতে হইচই করে বেরিয়ে পরে ।

এসব দেখা আর ভাবতে ভালো লাগা মন নিয়ে সেদিন স্টেশন পৌঁছে খবর পেলাম ট্রেন বেশ লেট । প্রতিদিন এই লেট শুনে আর কোনো বিকার আজকাল হয়না ।সেই অতীত দিনের কাঠের ওভার ব্রিজে উঠে, নয় আকাশ দেখা নয় প্যাসেঞ্জারদের গতিপ্রকৃতি, সময় টা কখন কেটে গিয়ে কানে আসে সান্ধ্য ধ্বনি। মন বুঝে গেছে এই লুপ লাইনে এর থেকে ভালো পরিষেবা পাওয়া মানে লটারি লাগার সমান ।

ততক্ষণে পরের ট্রেন, গণ দেবতা এক্সপ্রেসের প্যাসেঞ্জারদের ভিড় বেড়ে গেছে, উল্টো দিকে রামপুরহাট যাবার প্যাসেঞ্জারের ভিড়ে উপচে পড়ছে প্ল্যাটফর্ম ।আমিও গরম ভুট্টাতে কামড় দিচ্ছি আর অপেক্ষার প্রহর গুনছি ।হটাত্ নিচে ঠাসা ভিড়ে চোখ আটকে গেলো ।দেখছিলাম এক ভিখারী ঠাকুমা অনেক জনের কাছে থামছে আর ঘুর পাক খাচ্ছে হন্যে হয়ে ।দূর থেকে ঠিক ঠাহর করতে না পারলেও বুঝতে পারছিলাম, শুধু ভিক্ষা নিতে নয়, কি যেন একটা দেখাচ্ছে, হয়তো কিছু বলছেও । কিছুটা কৌতুহল বশে আর ট্রেন ধরতে যখন নামতেই হবে এটা ভেবে ওভার ব্রিজ থেকে নামতে নামতেই রামপুরহাট যাবার রাজগীর ফাস্ট প্যাসেঞ্জার এসে ভিড় বেশ খানিকটা পাতলা করে দিলো প্ল্যাটফর্মের । আমিও চট করে ওই ভিখারী ঠাকুমাকে খুঁজে পেয়ে গেলাম । খানিক তফাতে দাঁড়িয়ে লক্ষ্য করলাম, হাতে কি একটা যেন, ছোটো মতো দেখিয়ে কিছু একটা অনুরোধ করছে তখনও, আর প্রতিবারেই সবাই কেমন তাচ্ছিল্য ভরা প্রত্যাখান । বেশ নাড়া দিলো মনের মধ্যে পরিস্থিতিটা ।অনেকেই ও কাছে যেতে নাক সিঁটকে রুমাল চাপা দিয়ে দু চার পয়সা ছুঁড়ে দিচ্ছে বটে তবু সে অস্থির হয়ে যেনো সে সব কিছুই চায়না, অন্য কিছু চাহিদা ।

একটু পাশে গিয়ে বলেই উঠলাম, ‘কি হলো কি তোমার, কখন থেকে ঘুর ঘুর করছো ?” আমার গলা পেয়ে এগিয়ে এসে একটা ছোট্ট চোখের ড্রপার দেখালো !’ওমা একি গো, কাঁদছ কেনো !’হড় হড় করে চোখ দিয়ে জল ঝরছে দেখে বললাম, “আহা থামো, কি হয়েছে শুনি “বলতেই ওই চার ফুটের বেঁটে প্রায় সাতের কোঠায় পা দেওয়া চির বঞ্চিত ক্ষয়ে যাওয়া মানুষটা যা বললো স্তম্ভিত হয়ে গেলাম।আমতা আমতা উনি বললেন, “আর দেখো কেনো বেটা, ছানি কাটিয়েছি, এই ড্রপ টা চোখে না দিলে আমি আর কোনদিন যে দেখতেই পাবো না, কানা হয়ে যাব “এই বলে আবার ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো ।

“আরে এমন করে কেউ কাঁদে গো “বলে ইশারায় কাঠের ওভার ব্রিজের নিচে পাশের সিমেন্টের চেয়ারে ঠাকুমা কে বসতে বলে, ঝুঁকে পরম যত্নে ওনার চোখে ড্রপ দিলাম দু ফোঁটা করে ।কী জানি কেনো জানিনা সামান্য কাজটা করার পর বেশ হালকা লাগছিলো ভেতরে , এতো ছোটো কাজ তবু যেনো অনুপ্রাণিত করছিলো আমায় ।হয়তো ওনাকে উপকার করতে পেরেছিলাম বলেই এই অনুভব টা আনন্দ দিচ্ছিল আমাকে ।

হয়তো সেও বিশ্বাসই করতে পারছিল না, তাই তখনো স্বগতোক্তির মতো বিড় বিড় করে কি সব বলেই যাচ্ছিলো ।ওদিকে ততক্ষণে আমার ট্রেন শহীদ সুপার ফার্স্ট হেলতে দুলতে আসার খবর হতে সামনের দিকে পা বাড়ালাম ।

আজ প্রায় পাঁচ বছর অতিক্রান্ত, এখনো ট্রেন লেট হলে ব্রীজে, বা ওয়েটিং রুমে চুপ করে বসে থাকার হটাত্ মুহূর্তে সেদিনের ভিখারী ঠাকুমা ঠিক কিন্তু চিনতে পারে।তার কণ্ঠে ধ্বনিত হয় আজো এক কৃতজ্ঞতা আর স্নেহের পরশ ।সামনে দেখা হলেই বলে ওঠে “বেটা, ভালো আছো ?”ওর এই আন্তরিক ডাক আমায় ভীষণ ভাবে টানে। আর মন আমায় বলে, ও যদি গরীব ভিখারী না হয়ে অন্য কোনো ভদ্র, শিক্ষিত মানুষ হতো তাহলে চিনেও হয়তো চিনতো না ।এই সব ভাবতে ভাবতে ট্রেনের ভিড়ে আপন মনে অন্য ভাবনায় ডুব দিলাম ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress