Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

মেজমামা বললেন, এ পাড়ায় কি একটাও ভালো ফোন আছে? কোনো জায়গা থেকে ফোন করা যাবে?

আমি বললুম, মোড়ের মাথায় একটা ওষুধের দোকান আছে। ওদের ফোনটা ব্যবহার করতে দেয়।

মা বললেন, থাক, আর ফোন-টোন করতে হবে না। যথেষ্ট হয়েছে। অমন চাকরির কোনো দরকার নেই। ইস, ছেলেটাকে এমন ভাবে মেরেছে। ঠোটের পাশটায় কেটে গেছে কতটা! ছি ছি ছি ছি!

আমি বললুম, মা, চাকরির ব্যাপারটা আলাদা, আর মার খাওয়ার ব্যাপারটা আলাদা। এটা তো সাধারণ গুণ্ডাদের ব্যাপার। ঐ সুরঞ্জনবাবু আরও বেশি বড় গুণ্ডা! মা বললেন, তবু ঐ অলক্ষুণে চাকরির জন্যই তো তোকে ঐ বাজে পাড়াতে যেতে হয়েছিল!

মেজমামা বললেন, না, ছোড়দি, সুরঞ্জনকে আমি ছাড়ব না। আমার বন্ধু হয়ে সে এরকম নিমকহারামের মতন কাজ করল? এর চেয়ে তো নির্মল আর রথীন অনেক ভালো, তারা সরাসরি পারবে না বলে দিয়েছে। আর ঐ সুরঞ্জনকে আমরা কিছু বলিনি। সে এমনি একখানা তিন হাজার টাকার থালায় করে একটা চাকরি সাজিয়ে দিল আমার ভাগ্নের জন্য। হারামজাদার পেটে পেটে এত শয়তানি বুদ্ধি ছিল?

মা বললেন, থাক, যা হবার তা তো হয়েই গেছে। আর ওসব লোককে ঘাঁটাবার দরকার নেই! ওসব লোকের পুলিশ-টুলিশ হাত করা থাকে।

মেজমামা বললেন, কী, আমি ওকে ভয় পাব? আমি পিনাকপানি ব্যানার্জি ভয় পাব ঐ একটা ছুঁচোকে? টেলিফোন করারও দরকার নেই, চল তো নীলু, ওর বাড়ি গিয়েই বলে আসি। ট্যাক্সি পাওয়া যাবে নিশ্চয়ই!

মায়ের আর কোনো আপত্তিতে কর্ণপাত না করে মেজমামা আমার হাত ধরে টেনে নামাতে লাগলেন সিঁড়ি দিয়ে।

আমারও ইচ্ছে করছে সুরঞ্জন দত্তরায়ের ওপর কিছুটা গায়ের ঝাল ঝেড়ে আসতে। আমি একা কিছু করতে পারব না, মেজমামা থাকতে থাকতেই প্রতিশোধ যা নেবার নিতে হবে।

ঝট করে একটা ট্যাক্সিও পাওয়া গেল। তাতে উঠে বসে মেজমামা বললেন, ও ব্যাটা থাকে যোধপুর পার্কে। ওদিকটার রাস্তা আমি ভালো চিনি না। তুই চিনতে পারবি তো নীলু!

—একটু সময় লাগলেও খুঁজে বার করা যাবে!

—শোন, আমার মাথায় রক্ত ফুটছে টগবগ করে। রাগ না চণ্ডাল। যদি দেখিস আমি সুরঞ্জনের গলা টিপে ধরেছি, তা হলে আমার কানের কাছে দু’বার বলবি, প্রিমিয়াম! প্রিমিয়াম!

—তার মানে?

–তোর মানে বোঝার দরকার নেই। শুধু দু’বার বলবি ঐ কথাটা!

—মানে না বুঝলে হয়তো কথাটা আমার মনে থাকবে না। আমি হয়তো ওর বদলে বলে ফেলব, স্কচ! স্কচ!

-ওঃ হো, ঠিক আছে, তোকে বুঝিয়ে দিচ্ছি। আমি একটা বড় গোছের ইনসিওরেন্স করিয়েছি, আর দুটো অ্যানুয়াল প্রিমিয়াম বাকি আছে। সুরঞ্জনটার গলা টিপে ধরে যদি শেষ পর্যন্ত ওকে মেরেই ফেলি, তাহলে আর আমি ফাঁসির আসামী হিসেবে ঐ টাকাটা পাব না। ফাঁসির আসামীর বউও ইনসিওরেন্সের টাকা পায় না। সুতরাং ঐ দুটো দেবার আগে আমার ফাঁসি যাওয়াটা ঠিক হবে না!

—সুরঞ্জনকে একেবারে মেরে ফেলার দরকার নেই, মেজমামা। ওর একটা চোখ শুধু কানা করে দিলে হয় না? লোকে এর পরে ওর নাম দেবে কানা শয়তান!

—ঠিক আছে, আমি গলা টিপে ধরব, তুই একটা দেশলাই কাঠি জ্বেলে ওর চোখে চেপে দিবি। পারবি না?

ট্যাক্সিচালকটি বাঙালি, সে ঘাড় ঘুরিয়ে আমাদের দিকে তাকাল।

মেজমামা আস্তে কথা বলতে পারেন না, তিনি ওর তাকানোটার তোয়াক্কাও করলেন না। আমাকে আবার জিজ্ঞেস করলেন, হ্যাঁরে, নীলু, তুই ঠিক জানিস, যারা তোকে মেরেছে আর ঘড়ি-ফড়ি কেড়ে নিয়েছে, তারা ঐ ইউনিয়ানের লোক নয়!

—না, না, ওরা কেন হতে যাবে? শেষে আমি দুটো সাধারণ ছিনতাইবাজের হাতে পড়েছিলুম!

–ঐ যে কী নাম, দীনেন বোস না কী বললি, তার বাড়ি থেকে বেরুবার পর ইউনিয়ানের লোকেরা তোকে ফলো করতে পারে। তোকে ভালোমতন শিক্ষা দেবার জন্য তারাও পেঁদিয়ে দিতে পারে।

—তারা মারবে কেন? আমি তো বলেই এসেছি, আর জীবনে কখনো ঐ অফিসে পা দেব না!

—বিশ্বাস করেছে কি? আজকালকার বাজারে একটা চাকরি পেয়েও কি কেউ এককথায় ছেড়ে দেয়? র‍্যাট রেস! র‍্যাট রেস!

—ওরা নিশ্চয়ই বিশ্বাস করেছে। ওরা আমার সঙ্গে সবসময় ভালো ব্যবহার করেছে।

—জোর করে রাস্তা থেকে ট্যাক্সিতে তুলে নিয়ে যাওয়া মানে ভালো ব্যবহার?

—ওরকম নাটক অবশ্য না করলেও চলত। আগে আমাকে সব ব্যাপারটা বুঝিয়ে বললে আমি নিজেই ওদের সঙ্গে যেতুম।

—ঐ দীনেন বলে লোকটার বউয়ের দুটো বাচ্চা?

—হ্যাঁ মেজমামা, কী সুন্দর যমজ। দেখলেই আদর করতে ইচ্ছে করে।

—ঐ সুন্দর দুটো বাচ্চাকে ফেলে ও হারামজাদা সাধু হয়ে যেতে চেয়েছিল? যারা বউ-বাচ্চা ফেলে সাধু হবার জন্য পালায়, তাদের শাস্তি দেবার কোনো ব্যবস্থা নেই? আমার তো ইচ্ছে করছে, ঐ দীনেন হারামজাদার বাড়িতেও একবার যাই। বাচ্চা দুটোকে আদর করে আসি। আর বাবাটার মাথায় গোটা কতক রাম গাট্টা মারি।

-লোকটা খারাপ না। একটু অভিমানী ধরনের। পৃথিবীর বেশির ভাগ লোককেই কাওয়ার্ড বললে প্রতিবাদ করে। ও কিন্তু বলল, হ্যাঁ, আমি কাওয়ার্ড!

—আসল কাওয়ার্ড হচ্ছে ঐ সুরঞ্জন। তোকে কাল ঐ অফিসের খাঁচার মধ্যে ভরে দিয়ে নিজে পালিয়েছিল।

.

যোধপুর পার্কের ভেতরের রাস্তাগুলো এক রকমের। ঠিকানা খুঁজে বার করা বেশ মুশকিল। বিভিন্ন লোককে জিজ্ঞেস করে করে শেষ পর্যন্ত পৌঁছোনো গেল।

একটা বেশ সুন্দর দোতলা বাড়ি। সামনে লোহার গেট, তারপর ছোট বাগান, মূল দরজার দু’পাশে দুটি অজন্তার স্টাইলে নারীমূর্তি আঁকা।

বেল বাজাবার পর একজন উর্দিপরা আর্দালি দরজা খুলে দিল।

মেজমামা হুঙ্কার দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, সুরঞ্জন বাড়ি আছে?

আর্দালিটি বলল, সাহেব এইমাত্র উপরে গেলেন বিশ্রাম করতে। এই সময় তো কারুর সঙ্গে দেখা করেন না। আপনাদের অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে?

মেজমামা বললেন, ওকে বলো গিয়ে ওর যম এসেছে! যমের সঙ্গে অ্যাপয়েন্টমেন্ট লাগে না!

আর্দালিটিকে ঠেলেই ভেতরে ঢুকে পড়লেন মেজমামা।

আর্দালিটি অভিজ্ঞ লোক, সে জানে কোন ধরনের মানুষদের ফেরানো যায় না। সে এবার বিনীত ভাবে জিজ্ঞেস করল, আপনার নাম কী বলব, সাহেব?

—বলো, সিঙ্গাপুরের পিন্টু সাহেব এসেছে। তোমার সাহেবের বন্দুক আছে?

—বন্দুক? আজ্ঞে না স্যার!

—তবে ঠিক আছে, যাও!

বসবার ঘরের মেঝেটি কালো-সাদা মারবেলের, এক পাশে একটা কার্পেট পাতা। দু’দিকে দু’রকম বসার ব্যবস্থা। যেদিকে সোফা-সেট, তার সেণ্টার টেবিলে একটা পোরসিলিনের বোলে অনেকগুলি আপেল ও সিঙ্গাপুরী কলা রাখা আছে।

ঝপাস করে একটা সোফায় বসে পড়ে ফলগুলোর দিকে হাত বাড়িয়ে মেজমামা বললেন, শালা, মাটির নাকি?

তারপর বললেন, নাঃ, রিয়েল। নে নীলু, কলা খা! এই কলাগুলোকে এখানে সিঙ্গাপুরী কলা কেন বলে রে? ওখানে কোনোদিন এরকম কলা দেখিনি।

—কী জানি! সবাই তো বলে।

—আপেল-ফাপেল সব শেষ করে দে! ওঃ, আবার কায়দা করে দেয়ালে যামিনী রায়ের ছবি টাঙানো হয়েছে! ওটা খুলে নিয়ে যাব!

-এই সুরঞ্জনবাবু তোমার কী রকম বন্ধু? তোমার কাছ থেকে কখনো কোনো উপকার পেয়েছে কিংবা টাকা ধার নিয়েছে?

—টাকা ও ধার নেবে না, ওদের অবস্থা আমাদের চেয়ে অনেক ভালো ছিল। নর্থ ক্যালকাটায় অনেক সম্পত্তি ছিল, তারই একটা বাড়ি বেচে এখানে এই বাড়ি বানিয়েছে। উপকার, অ্যাঁ, উপকার আমি কারুর কখনো করি না। তবে, কলেজে পড়ার সময় একবার পিকনিকে গেসলুম বোটানিকসে। সেই সময় এই সুরঞ্জনটা, ও একদম সাঁতার জানে না, ক্যারদানি করে নৌকোয় চড়তে গেল, তখন জোয়ার ছিল, হঠাৎ নৌকোটার একটা ধার কাত হতেই সুরঞ্জন একটা পেপার ওয়েটের মতন টপাৎ করে ডুবে গেল। গঙ্গায় যখন জোয়ার আসে, কী রকম সাঙ্ঘাতিক চেহারা হয় দেখেছিস তো, পাড়ের কাছে পর্যন্ত মানুষ দাঁড়ায় না, নৌকোয় আরো তিনজন ছিল, কোনো ব্যাটার সাহস হয়নি সেই জোয়ারের জলে ঝাঁপিয়ে পড়ার। শুধু পিনাকপানি ব্যানার্জি, ইন্টার-কলেজ সুইমিং চাম্পিয়ন, এই পিনাকপানি সঙ্গে সঙ্গে লাফ মেরেছিল জলে, বুঝলি! ওর গলা ধরে টেনে তুলেছি। আর একটু হলে সুরঞ্জনটা মরেই যেত সেদিন, পেটে এত জল ঢুকেছিল যে হাসপাতালে রাখতে হয়েছিল তিন দিন। একে কি উপকার বলা যায়?

—যে যেমন ভাবে নেয়!

—ঠিক বলেছিস, যে যেমন ভাবে নেয়। এখন যদি পুরো ব্যাপারটাই ভুলে মেরে দিয়ে থাকে, আমি কি জোর করে মনে করাতে পারি?

বসবার ঘরের মাঝখান দিয়েই উঠে গেছে দোতলার সিঁড়ি। পুরো পাঁচ মিনিট বাদে সেই সিঁড়ি দিয়ে নামতে লাগলেন সুরঞ্জন দত্তরায়, বাংলা সিনেমার নায়িকার বাবাদের মতন একটা ভেলভেটের ড্রেসিং গাউন পরা, মুখে পাইপ, এক হাতে গেলাশ ভর্তি রঙিন পানীয়। এই ওঁর বিশ্ৰাম!

নামতে নামতেই তিনি বললেন, ওপর থেকেই গলার আওয়াজ পেয়েছি। প্রথম দিনটা তোর ভাগ্নেকে খুব জ্বালাতন করেছে তো? ওরকম তো হবেই। বী ব্রেইভ ইয়াং ম্যান! আমি অফিসে ছিলুম না আজ, কিন্তু ভেতরে আমার স্পাই আছে, সে খবর দিয়েছে, ইউনিয়ানের লোকেরা আজ ওর সঙ্গে কোঅপারেট করেনি!

জল্লাদের মতন উঠে দাঁড়িয়ে মেজমামা গম্ভীর ভাবে বললেন, সুরঞ্জন, তোর বউ কোথায়?

সুরঞ্জন দত্তরায় বললেন, প্রতিমা তো এইমাত্র বাপের বাড়ি গেল! তোর সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেওয়া হয়নি এখনো। তুই আছিস তো কয়েকদিন, এর মধ্যে একদিন তোকে খেতে ডাকব, সেদিন আলাপ হবে।

–বাপের বাড়ি কত দূরে?

—এই তো কালীঘাটে। কেন বল তো?

—টেলিফোন করে ডেকে আনা যায় না?

—তা যায় বটে। এখনো বোধহয় গিয়ে পৌঁছোয়নি। কেন, প্রতিমার সঙ্গে তোর হঠাৎ কী দরকার পড়ল।

—তাকে তুই শেষবার দু’চোখ ভরে দেখে নিবি!

—আমার বউকে আমি দু’চোখ ভরে দেখব, না তুই দেখবি? প্রতিমাকে অনেকে এখনো সুন্দরীই বলে।

—আমি বলছি, তুই শেষবার দু’চোখ ভরে দেখে নিবি। তুই আমার ভাগ্নে নীলুকে আজ চরম অপমানের মধ্যে ফেলেছিস। তুই একটা লোকের শুধু শুধু চাকরি খেয়ে সেখানে ওকে বসিয়েছিস। তুই সব জেনেশুনে…কেন রে শালা, আমরা ভিখিরির মতন তোর কাছে চাকরি চেয়েছিলুম? চাকরির কথা একবারও উচ্চারণ করেছি? তুই নিজে সেধে সেধে, ইচ্ছে করে, ওকে বিপদের মধ্যে পাঠিয়েছিস! এই সুযোগে তুই আমাকেও ইনসাল্ট করলি। আমার ওপর তোর বরাবরের হিংসে! কিন্তু আমরা এমনি তোকে ছেড়ে দেব ভেবেছিস! আমরা দু’জনে মিলে ডিসাইড করেছি, তোর একটা চোখ গেলে দেব!

প্রথমটায় বেশ অবাক হয়ে সুরঞ্জন দত্তরায় ভুরু তুলে রইলেন। তারপর মুখে একটা পাতলা হাসি ছড়িয়ে পড়ল। তিনি বললেন, তুই আমার বাড়িতে ধেয়ে এসেছিস আমার একটা চোখ নষ্ট করে দেবার জন্য?

মেজমামা দৃঢ়স্বরে বললেন, হ্যাঁ। নাথিং লেস দ্যান দ্যাট।

সুরঞ্জন দত্তরায়, নীচের ঠোঁট কামড়ে কয়েক মুহূর্ত চিন্তা করলেন। তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, দ্যাখ পিন্টু, তোর বোধহয় মনে নেই, কিন্তু আমি আজও মনে রেখেছি, তুই একবার আমার জীবন বাঁচিয়েছিলি। শিবপুরে আমি গঙ্গায় ডুবে গেসলাম। তুই আমার জীবন বাঁচিয়েছিলি, এখন তুই এসে যদি আমার একটা চোখ নিয়ে নিতে চাস, তাতে আমি আপত্তি করতে পারি না। আমি এত যভদ্র নই। ঠিক আছে, কোন্ চোখটা চাই? ডান চোখ, না বাঁ চোখ! ডান চোখ, না বাঁ চোখ! ইউ ডিসাইড!

মেজমামা আমার দিকে একবার তাকিয়ে বললেন, বাঁ চোখটাই ভালো? কি বল?

সুরঞ্জন দত্তরায় আবার জোরে জোরে বললেন, ডান চোখ, না বাঁ চোখ? ডান চোখ, না বাঁ চোখ? ভেবে বল্!

মেজমামা বললেন, বাঁ চোখ, বলছি তো!

সুরঞ্জন দত্তরায় এবার এমন জোরে অট্টহাস্য করে উঠলেন যে আমরা দু’জনে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলুম। দেয়াল ফাটিয়ে হাসছেন, হাসি থামতেই চায় না।

মেজমামা এগিয়ে গিয়ে ওর কাঁধ ধরে একটা ঝাঁকুনি দিলেন।

সুরঞ্জন দত্তরায় চোখ থেকে চশমাটা খুলে বললেন, এবারও হেরে গেলি পিন্টু! বাঁ চোখটা দ্যাখ ভালো করে। পাথরের। ইউরোপে একবার আমার খুব বড় অ্যাকসিডেন্ট হয়েছিল মনে নেই? তোকে চিঠিতে জানিয়েছিলুম! কার অ্যাকসিডেন্টে এই বাঁ চোখটা একেবারে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তবে ওদেশের খুব ভালো ব্যবস্থা আছে, এমন পাথরের চোখ বসিয়ে দিয়েছে যে বোঝাই যায় না। আমার কোনো খরচই লাগেনি।

আমরা দু’জনেই কাছে গিয়ে দেখলুম, কথাটা মিথ্যে নয়। ওঁর বাঁ চোখটা একেবারে স্থির।

সুরঞ্জনের দৃষ্টিতে কিছু একটা অস্বাভাবিক ব্যাপার ছিল, আমার অবচেতনে খটকা লেগেছিল, সেই জন্যই কি ওঁর চোখ গেলে দেবার কথা মনে হয়েছিল আমার?

উনি বললেন, বোস্ বোস্! কী খাবি বল। আমার এই অ্যাকসিডেন্টটা হয়েছিল বিয়ের আগে। সুতরাং আমার বউ প্রতিমাকে কোনোদিনই আমি দু’চোখ ভরে দেখিনি। এক চোখ দিয়ে দেখি বলেই বোধহয় বেশি সুন্দর লাগে। এতদিন ধরে লাগছে!

সোফায় বসে পড়ে তিনি হাঁক দিলেন, বেয়ারা ড্রিংকস লাগাও! ওপর থেকে স্ন্যাকস দিতে বলো।

পাইপটা আবার টানতে টানতে তিনি বললেন, তোকে একটা কায়দা শিখিয়ে দি। একে বলে ফোর্সিং। সাইকোলজিক্যাল ফোর্সিং! তোরা আমার বাঁ চোখের বদলে ডান চোখটাও তো চাইতে পারতি! কিন্তু ঐ যে বার বার বলতে লাগলাম, ডান চোখ না বাঁ চোখ, ডান চোখ না বাঁ চোখ। অধিকাংশ লোক শেষেরটাই বেছে নেয়। আমি যদি বলতুম, চাঁপা না গোলাপ, চাঁপা না গোলাপ, তুই বলতি গোলাপ

মেজমামা গোমড়া মুখ করে বললেন, হুঁ! তাই বুঝি?

বেয়ারা কয়েকটি গেলাশ, সোডা, জলের বোতল ও ডিকাণ্টার নিয়ে এল। কলকাতার বড় বড় কোম্পানির ম্যানেজার সাহেবদের বাড়িতে প্রিমিয়াম স্কচ খাওয়ানোই এখন রেওয়াজ, কিন্তু ডিকান্টার রাখা খুব বেশি কায়দা!

একটা গেলাশে শুধু পানীয় ঢেলে সুরঞ্জন দত্তরায় বললেন, এত রাগারাগি কিসের? এখন ওয়েস্ট বেঙ্গলের যা অবস্থা, তাতে যে-কেউ নতুন চাকরিতে জয়েন করলেই সহকর্মীরা গোড়ার দিকে হোস্টাইল থাকে। ভাবখানা যেন এই, এ আবার কে উড়ে এসে জুড়ে বসল রে বাবা! দু’চার দিন একটু মানিয়ে চলতে হয়!

মেজমামা বললেন, দু’চারদিন? প্রথম দিনই ওকে জোর করে ধরে নিয়ে গিয়েছিল এক জায়গায়!

সুরঞ্জন দত্তরায় হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে বললেন, জোর করে ধরে নিয়ে গিয়েছিল? কোথায়? কারা? এ খবর তো আমার কানে আসেনি? ইউনিয়ানের ছেলেরা ধরে নিয়ে গেলে চমৎকার পুলিশ কেস হবে।

মেজমামা বললেন, ওকে দীনেন বোসের বাড়িতে ধরে নিয়ে গিয়েছিল!

—দীনেন বোস? ঐ স্কাউণ্ড্রেলটা আবার গুণ্ডাও পোষে বুঝি?

—শাট আপ! ওর দুটো ফুটফুটে যমজ বাচ্চা আছে, ওকে তুই স্কাউণ্ট্ৰেল বলছিস কোন্ সাহসে! তোর নিজের ছেলেপুলে নেই? তুই কোন্ কাণ্ডজ্ঞানে ওকে সাসপেণ্ড করলি?

–দ্যাখ পিন্টু, সুন্দর দেখতে ছেলেপুলে থাকা বুঝি কোনো অফিস ওয়ার্কারের কোয়ালিফিকেশান হতে পারে? ওর যমজ বুঝি? সেটা জানতুম না। কিন্তু অনেকের তো তিন চারটে ছেলেমেয়েও থাকতে পারে। সো হোয়াট? ঐ দীনেন বোস কী করেছে জানিস?

—কী করেছে?

—কেউ কাজে ভুল করলে শাস্তি দেওয়া যাবে না? এই জন্যই তো এদেশের অফিস-টফিসের কাজকর্মের এই অবস্থা! কেউ কাজ করবে না, ফাঁকি মারবে। কিন্তু কিছু বলতে যাও, অমনি স্ট্রাইক। ওয়ার্ক কালচার বলতে কিছু নেই।

-লেকচার মারিস না, রঞ্জু! এই কেসটা কী হয়েছে, সেটা বল।

—দীনেন বোসের কেসটা শুনবি! ঐ দীনেন বোস, ও ধরাধরি করে কাজ পেয়েছিল। মোস্ট ইনএফিসিয়েন্ট! ফাঁকিবাজ, সীটে থাকে না। সেসবও না হয় সহ্য করা গেল। কিন্তু কত চিঠি যে হারায় তার ঠিক নেই। এর মধ্যে দুটো চিঠি হারিয়েছে, তার মধ্যে একটা সাত লাখ আর একটা একুশ লাখ টাকার অর্ডার সাপ্লাইয়ের ব্যাপার ছিল। তুই জানিস নিশ্চয়ই অর্ডার সাপ্লাইয়ের ব্যাপার টাইম বাউণ্ড হয়, ঠিক সময়ের মধ্যে মাল ডেলিভারি না দিতে পারলে অর্ডার ক্যানসেল তো হয়েই যায়, উপরন্তু খেসারত দিতে হয়। এতগুলো টাকার ক্ষতি হয়ে গেলেও কোম্পানি ওকে কোনো শাস্তি দেবে না, কোলে বসিয়ে আদর করবে?

–সত্যি তোদের কোম্পানির অত টাকা ক্ষতি হয়েছে?

-অফ কোর্স! তাও তো ওকে আমি জেলে না দিয়ে শুধু সাসপেণ্ড করেছি। মালিক বলেছিল, ও ইচ্ছে করে চিঠি দুটো গাপ্ করেছে, এই অভিযোগ দেখিয়ে ওর নামে থানায় ডায়েরি করতে।

—মালিক জানে যে ওর দুটো ফুটফুটে, সুন্দর, যমজ বাচ্চা আছে? সে বেচারারা তো কোনো দোষ করেনি?

—দ্যাখ পিন্টু, এরকম অদ্ভুত কথা বলিসনি। কারুর যদি খুনের দায়ে ফাঁসি হয়, তখন কি বিচারক দেখতে যাবে যে সেই খুনীর সংসারে বাচ্চা ছেলেমেয়ে আছে কিনা! তাহলে তো আইন-শৃঙ্খলা বলে কিছু থাকেই না। যাদেরই ছোট ছোট ছেলেমেয়ে আছে, তারা মহা আনন্দে যত খুশী বে-আইনি কাজ করে যাবে!

মেজমামা আর কোনো যুক্তি খুঁজে না পেয়ে নখ খুঁটতে লাগলেন।

সুরঞ্জন দত্তরায় এবার আমার দিকে তাকিয়ে ঠোঁট বেঁকিয়ে বললেন, ইউনিয়ানের ছেলেরা বলছে, ঐ দীনেনের জায়গায় অন্য কোনো লোককে অ্যাপয়েন্টমেন্ট দিতে দেবে না। আলবাৎ দেব! আমাকে অফিস চালাতে হবে না? আমি আশা করেছিলাম, তোমার বুকের পাটা আছে, তুমি দাপটের সঙ্গে নিজের জায়গা বুঝে নেবে! তুমি একটুতেই ব্যাক আউট করবে? হেরে গেলে?

সুরঞ্জন দত্তরায়কে এত সহজে জিততে দেওয়া যায় না।

আমি এবার বললুম, আপনি আমাকে ব্যাকগ্রাউণ্ডটা আগে জানাননি কেন? অন্য একজনের অন্ন মেরে আমি চাকরি করতে চাইব, একথা আপনাকে কে বলেছে? এখানে বুকের পাটার কোনো প্রশ্নই আসে না!

মেজমামা আবার নবোদ্যমে ঝাঁপিয়ে পড়ে বললেন, ঠিক ঠিক! একশোবার ঠিক! সাপ্রেশান অফ ফ্যাক্‌ট ইজ আ ক্রাইম! এই চাকরির পেছনে যে এত ঝঞ্ঝাট আছে, সে কথা তুই আগে বলিসনি কেন? অফিসের অন্য সব স্টাফ দীনেনকে সাপোর্ট করছে, সেখানে নতুন কেউ পোস্টে গিয়ে কাজ করতে পারে? আমার ভাগ্নে কি ভিখিরি, খেতে পায় না? তোর পায়ে ধরে চাকরির জন্য সেধেছিল?

—সব চাকরিতেই এরকম কিছু না কিছু ঝঞ্ঝাট থাকেই!

–তোর ছেলে আছে? বল, তোর ছেলে আছে?

-হ্যাঁ, আছে। এবার পার্ট টু দেবে!

–বেশ, ভালো কথা। তুই অফিসের ম্যানেজার হিসেবে একজনের কাজের গাফিলতির জন্য সাসপেণ্ড করেছিস। বুঝলুম সেটা। কিন্তু ঐ রকম একজনকে সাসপেণ্ড করা পোস্টে কি তুই তোর ছেলেকে চাকরিতে বসাবি কখনো?

সুরঞ্জন দত্তরায় উত্তর দিতে একটু ইতস্তত করতেই মেজমামা তাঁকে আরও চেপে ধরে বললেন, দিতি কি না বল! ইয়েস অর নো? ইয়েস অর নো? ইয়েস অর নো?

—নো!

—হা-হা-হা-হা! সাইকোলজিক্যাল ফোর্সিং। একটু আগে তোর কাছ থেকেই শিখেছি। ডান চোখ না বাঁ চোখের মতন, তুইও ইয়েস আর নো-র মধ্যে দ্বিতীয়টা বেছে নিলি। নিজের ফাঁদে নিজেই পা দিয়েছিস চাঁদু! যে-রকম জায়গায় তুই নিজের ছেলেকে পাঠাতিস না, সে-রকম জায়গায় তুই আমার ভাগ্নেকে পাঠালি কেন? বল, বল, উত্তর দে!

এবার সুরঞ্জন দত্তরায়ও চুপ করে গেলেন।

মেজমামা বললেন, তা হলে তুই আমাদের সঙ্গে চিটিং করেছিস, এটা স্বীকার করছিস?

সুরঞ্জন দত্তরায় এক চুমুকে নিজের গেলাশের পানীয় শেষ করে বললেন, তুই কিছু খাচ্ছিস না, পিন্টু? সিভাস রিগ্যাল!

মেজমামা বললেন, আমাকে স্কচের লোভ দেখাসনি! আমাদের দেশে শস্তার বাংলা মদ যা, সিঙ্গাপুরে স্কচও তাই। তুই যখন আসবি, তখন তোকে প্রিমিয়াম স্কচে চোবাবো! এখন বল, তুই আমাদের সঙ্গে এরকম ব্যবহার করলি কেন? নীলু বেচারা এমন শক পেয়েছে, বাড়িতে এসে বলছে যে, জীবনে আর কোনো দিন কোনো চাকরিতে যাবে না!

—আই মাস্ট কম্‌পেনসেট দেন। আমি আর একটা প্রস্তাব দেব?

–কী শুনি?

—আজ আমাদের কোম্পানির গোডাউনে ইনস্পেকশনে গিয়েছিলুম। ওখানে জনা বারো স্টাফ আছে। আজ গিয়ে বুঝলুম, ওখানে একটা টাইম কীপারের পোস্ট ক্রিয়েট করা দরকার। একজন কেউ অফিসার শ্রেণীর থাকবে, যে অন্য স্টাফদের আসা-যাওয়ার দিকে নজর রাখবে!

—শুনেই মনে হচ্ছে বাজে কাজ!

–না রে, না! একটা আলাদা ঘর থাকবে গোডাউনের গেটের কাছে। কাজ খুব হালকা। শুধু বসে থাকা। যে-যখন আসবে-যাবে টাইম নোট করে রাখা। অন্য সময়ে সে ইচ্ছে করলে গল্পের বই পড়তে পারে। এই কাজটা নীলু করতে পারবে না? মাইনে একই পাবে!

মেজমামা ও সুরঞ্জন দত্তরায়ের পরবর্তী কয়েকটা সংলাপ আমি শুনতে পেলুম না। আমার চোখ চলে গেছে সিঁড়ির দিকে। নীল শাড়ি পরে কেউ নেমে আসছে ওপর থেকে, প্রথমে দেখা যাচ্ছে শুধু পা। বুকটা ধক করে উঠল। নীলা? এখানে, এই বাড়িতে নীলা কী করে আসবে, সে প্রশ্নও আমার মনে জাগল না।

মেজমামা আমার গায়ে একটা ধাক্কা দিয়ে বললেন, কী রে, তুই শুনছিস না? এ প্রস্তাবটা তো ভালোই মনে হচ্ছে!

আমি চমকে উঠে বললুম, কী?

মেজমামা বললেন, দমদমের এই পোস্টটা। তুই একলা একটা ঘর পাবি। কেউ তোকে ডিসটার্ব করবে না। সব সময় মাথার ওপর কোনো বস্ত্ত থাকবে না। ছোড়দি কত খুশি হবে বল্। ছোট ছেলে চাকরি পেয়েছে শুনে তোর মা কাল যেমন খুশিতে ডগবগ করছিল, আজ তেমনি নিরাশ হয়ে গিয়েছিল। এখন গিয়ে বলতে পারব, নীলুর চাকরি ঠিকই আছে। নীলু সম্মানের সঙ্গেই চাকরি করবে।

সুরঞ্জন দত্তরায় বললেন, এই চাকরিটা তুমি নিশ্চিন্তে নিতে পারো, নীলু। একদম নতুন পোস্ট। তোমার মনে কোনো গিল্টি কমপ্লেক্স থাকবে না। তা ছাড়া, যত ছোট অফিস, তত ঝামেলা কম।

—তুই ঠিক বলছিস, রঞ্জু? এ চাকরির পেছনে কোনো গ্যাঁড়াকল নেই?

—আই প্রমিস! ঠিক আছে, এক কাজ করা যেতে পারে। কাল সকালে আমার গাড়িতে তোকে আর নীলুকে তুলে নেব। আমি নিজে নীলুকে সব কাজ বুঝিয়ে দিয়ে বসিয়ে আসব চেয়ারে। তুইও দেখেশুনে বুঝে আসতে পারবি, পি, অবস্থাটা।

—তাহলে তো খুব ভালো কথা। আমি নিজে দেখলে অবস্থাটা ঠিক বুঝতে পারব!

–তোর দিদির বাড়িতে আমি হাজির হব ঠিক পৌনে আটটার সময়!

আমার চোখ চলে গেছে আবার সিঁড়ির দিকে। নীল শাড়ি নয়, চওড়া নীল পাড়, বাকি অংশটা জংলা ধরনের। যে নেমে আসছে, সে নীলা নয়। অন্য একজন।

এবার আমার স্থির দৃষ্টি অনুসরণ করে মেজমামা এবং তাঁর বন্ধুও মুখ ফেরালেন। মেজমামা চমকে উঠে বললেন, ও কে?

সুরঞ্জন দত্তরায়ের মুখে যেন একটা মেঘের ছায়া পড়ল। তিনি আস্তে আস্তে বললেন, আমার বড় মেয়ে!

মেজমামা বললেন, অবিকল যেন তোর মায়ের মুখখানা বসানো! শেষ যে—বার তোর মাকে দেখি, তখনো যেন তাঁর একটুও বয়েস বাড়েনি!

সুরঞ্জন দত্তরায় আরও আস্তে, করুণ গলায় ফিসফিস করে বললেন, আমার মেয়ে শ্রেয়া, ঠিক সুস্থ নয়। শী ইজ আ মোঙ্গল চাইল্ড, অনেক জিনিসই এখনো বোঝে না। ও যদি তোদের সঙ্গে ঠিক মতন ব্যবহার না করে, তোরা কিছু মনে করিস না। আমারও সমস্যা কম নয় রে, পিন্টু!

তারপর তিনি মুখ তুলে বললেন, শ্রেয়া এদিকে এসো। তোমার একজন আংকল এসেছেন বিদেশ থেকে।

মেয়েটি কোনো ভ্রূক্ষেপও করল না। মাটির দিকে চেয়ে, কিছু যেন একটা খুঁজতে খুঁজতে বসবার ঘরে দু’-এক পাক ঘুরল, তারপর চলে গেল পেছনের একটা দরজা খুলে।

তার বাবা ও মেজমামা আরও দু’-একবার তাকে ডাকলেন কাছে। কিন্তু সে যেন শুনতেই পেল না কোনো ডাক।

এরপর ওঁরা দু’জনে ছেলেমেয়েদের সমস্যা নিয়ে কথা বলতে লাগলেন একটুক্ষণ। আমি চিন্তা করতে লাগলুম নীলার কথা।

নীলা আজ শেষ কথা বলেছিল, আমাকে ধরে রাখো, চলে যেতে দিও না!

আমি সে কথার অর্থ বুঝতে পারিনি।

একটু বাদে মেজমামা উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, চল নীলু, এবার বাড়ি যাওয়া যাক।

সুরঞ্জন দত্তরায় বললেন, তা হলে ঐ কথাই রইল, কাল সকালে আমি তোদের তুলে নিচ্ছি। নো মোর ব্যাড ফিলিংস?

মেজমামা বললেন, নো মোর ব্যাড ফিলিংস! তবে, একটা শুধু খটকা রয়ে গেল, রঞ্জু! তুই যে ফোর্সিং-এর কথা বললি তখন, ওটা সব ক্ষেত্রে নিশ্চয়ই খাটে না। আমি যদি বলতুম, তোর ডান চোখটা চাই। তাহলে তুই কী করতিস?

সুরঞ্জন দত্তরায় বললেন, সে উত্তরটাও আমার রেডি ছিল। ভেরি সিম্‌পল! তুই বাইচান্স ডান চোখ চাইলি তখনো আমি চশমাটা খুলে বাঁ চোখটা দেখাতুম। তারপর বলতুম, ডান চোখটা খুবলে নিলে আমি একেবারে অন্ধ হয়ে যাব। তোরা তো আমাকে শুধু কানা করতে চেয়েছিস, অন্ধ করতে তো চাসনি। ডান চোখটা নিলে তোদের কথার খেলাপ হয়ে যাবে!

মেজমামা বললেন, নিয়তির কি বিচিত্র কারখানা! এক এক সময় একটা পাথরের চোখও কত কাজে লেগে যায়!

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *