ওগো , তোরা বল্ তো এরে
ঘরে বলি কোন্ মতে ।
এরে কে বেঁধেছে হাটের মাঝে
আনাগোনার পথে ।
আসতে যেতে বাঁধে তরী
আমারি এই ঘাটে ,
যে খুশি সেই আসে—আমার
এই ভাবে দিন কাটে ।
ফিরিয়ে দিতে পারি না যে
হায় রে—
কী কাজ নিয়ে আছি , আমার
বেলা বহে যায় যে , আমার
বেলা বহে যায় রে ।
পায়ের শব্দ বাজে তাদের ,
রজনীদিন বাজে ।
ওগো , মিথ্যে তাদের ডেকে বলি ,
‘ তোদের চিনি না যে ! ‘
কাউকে চেনে পরশ আমার ,
কাউকে চেনে ঘ্রাণ ,
কাউকে চেনে বুকের রক্ত ,
কাউকে চেনে প্রাণ ।
ফিরিয়ে দিতে পারি না যে
হায় রে—
ডেকে বলি , ‘ আমার ঘরে
যার খুশি সেই আয় রে , তোরা
যার খুশি সেই আয় রে । ‘
সকালবেলায় শঙ্খ বাজে
পুবের দেবালয়ে—
ওগো , স্নানের পরে আসে তারা
ফুলের সাজি লয়ে ।
মুখে তাদের আলো পড়ে
তরুণ আলোখানি ;
অরুণ পায়ের ধুলোটুকু
বাতাস লহে টানি ।
ফিরিয়ে দিতে পারি না যে
হায় রে—
ডেকে বলি , ‘ আমার বনে
তুলিবি ফুল আয় রে তোরা ,
তুলিবি ফুল আয় রে । ‘
দুপুরবেলা ঘণ্টা বাজে
রাজার সিংহদ্বারে ।
ওগো , কী কাজ ফেলে আসে তারা
এই বেড়াটির ধারে ।
মলিনবরন মালাখানি
শিথিল কেশে সাজে ,
ক্লিষ্টকরুণ রাগে তাদের
ক্লান্ত বাঁশি বাজে ।
ফিরিয়ে দিতে পারি না যে
হায় রে—
ডেকে বলি , ‘ এই ছায়াতে
কাটাবি দিন আয় রে তোরা ,
কাটাবি দিন আয় রে । ‘
রাতের বেলা ঝিল্লি ডাকে
গহন বনমাঝে ।
ওগো , ধীরে ধীরে দুয়ারে মোর
কার সে আঘাত বাজে ।
যায় না চেনা মুখখানি তার ,
কয় না কোনো কথা ,
ঢাকে তারে আকাশ – ভরা
উদাস নীরবতা ।
ফিরিয়ে দিতে পারি না যে
হায় রে—
চেয়ে থাকি সে মুখ – পানে—
রাত্রি বহে যায় , নীরবে
রাত্রি বহে যায় রে ।