Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » অবক্ষয় || Rana Chatterjee

অবক্ষয় || Rana Chatterjee

অবক্ষয়

“মার শালাকে, ঘাড় ধাক্কায় পিটিয়ে বের কর বুড়ো ভামটাকে,শালা ভিখারি এই বয়সে ধর্ষণ!”অশ্রাব্য গালিগালাজে উত্তেজিত মারমুখী জনতার ঔদ্ধত্ব দেখে টিউশন ফেরৎ তমাল বাকরুদ্ধ!

ভিড় ঠেলে উঁকি মারতেই দেখে,দুজন চ্যাঙদোলায় বাজারের মাঝখানে ছুঁড়ে ফেলেছে শান্ত, সাতে পাঁচে না থাকা ভিখারি দাদুকে।কেউ একজন উস্কানিতে হিরো সেজে বড়ো ভারী পাথরটা ছুঁড়ে থেঁতলে মারতেই আঁক করে গোঙানিতে আহারে মানুষটা! মুহূর্তে গল গল করে রক্তবমি,সব শেষ ! চোখের সামনে অনেক ভালো স্মৃতি জট পাকিয়ে খামচে ধরলো তমালকে। ততক্ষনে গর্বিত বীর পুঙ্গবের দল ‘দেখ কেমন লাগে’ বলে সরলো । বিশ্রী নিস্তব্ধতা ,চাপা গুঞ্জন গ্রাস করলো সকালের সবজি বাজার।

অজান্তে দু ফোঁটা জল বেরিয়ে এলো তমালের। যতবার সবজি বাজার এসেছে ওই গাছতলায় একটু জিরিয়ে নিত।এক অদ্ভুত মিষ্টি ছায়ায়,পাখির কুজনে শিকড়ে জট নামা কত স্মৃতিচিন্হ মেখে বট গাছের নিচে দাদু বসতো। খান কুড়ি স্থায়ী ও বেশ কিছু অস্থায়ী দোকান পাট নিয়ে এই সবজি বাজার । অপূর্ব প্রশান্তি মাখা ছিল ভিখারি দাদুর চোখের মুখে।কোনোদিন হাত পেতে ভিক্ষা করে নি ,যে যা দিত তাতেই কত্ত খুশি।

একবার বাবার একটা পুরানো ফতুয়া দিতেই কি খুশি,আশীর্বাদ করে ঝোলা থেকে দুটো ভুট্টা দিয়েই ছাড়বে নাছোড়বান্দা দাদু,নিঃস্ব মানুষের ভালোবাসার এক দারুন পরিতৃপ্তি ।

কি যে হলো এটা,নিমেষে সব শেষ ! দাদু কিভাবে ক্ষতি করতে পারে,কোথাও এদের ভুল হচ্ছে! তাবলে বীভৎস ভাবে প্রকাশ্যে খুন -এক রাশ প্রশ্নবাণ জর্জরিত করছে সিক্সে পড়া শিশু মন।
ছল ছল চোখে বাড়ি মুখো হতেই কানে এলো ফিসফিস ,কারা যেন বলছে ,”বেশ হয়েছে ,উচিত শাস্তি।”এই সবজি বাজারে ঘুরে বেড়ানো লালি ক্ষেপিকে নাকি দাদু ধর্ষণ করেছে! দূর তাই হয় নাকি,এটা কি সম্ভব! মনে,বিশ্বাস-অবিশ্বাসের এ এক সাংঘাতিক টানাপোড়েন ।

বাড়ি ফিরেই মা কে সব কিছু উগরে দেওয়ার চেষ্টা করতেই ব্যস্ততা দেখিয়ে শিবানী ইচ্ছা করেই এড়িয়ে বলল, “ওসব বাদ দিয়ে স্কুলের রেডি হও”। যেভাবে টিভি,পেপার খুললেই ধর্ষনের খবর, ছেলের সঙ্গে কি আর এ নিয়ে কথা বলবে !কদিনেই বিষয়টা থিতিয়ে গেল। প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে লালি ক্ষেপির সাময়িক চিকিৎসার খবর মানবিক মুখ হিসাবে মিডিয়া প্রকাশও করলো। গাছের ভাঙা বেদী সেজে বখাটে ছেলে ছোকরাদের আড্ডা,মদের ঠেকের রূপ নিলো।

সবে দিন দশ কেটেছে ,আজ বাজারে আর এক কান্ড! ঘড়িতে রাত নটা,হালকা ঠান্ডা আমেজ। কানে বাজছে আড্ডার ঠেকের উল্লসিত হাসি চটুল গানের রিংটোনে। সব স্তব্ধ করে এক সাংঘাতিক অনভিপ্রেত ঘটনায় সবাই হতবাক। চেলা কাঠ নিয়ে লালি ক্ষেপি বীভৎস রুদ্র মূর্তিতে রাতের বাজার পাহারাদারকে আচমকা এট্যাক করেছে এই বুঝি মেরেই ফেলবে। টিউশন পড়ে তমাল বাবার বাইকে ,এ দৃশ্যে তার তো চক্ষু ছানাবড়া!

স্তম্ভিত হতচকিত সকলে ,কে বাঁচাবে ওকে !মাথা ফেটে রক্ত ঝরছে। পড়িমড়ি করে পালাতে গিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ল, “আর আমি করবো না, আমার অন্যায় হয়েছে বাঁচাও” বললেও ,”মেরেই ফেলবো কেউ বাঁচাতে পারবে না, তোর জন্য ভালো মানুষটা বদনাম পেয়ে মরলো আমায় বাঁচাতে গিয়ে ! “

এ কার কথা বলছে ক্ষেপিটা ! তবে কি ভিখারি দাদুকে বদনাম দিয়ে উৎখাত করতে ষড়যন্ত্র ছিল! একটা ভারী পাথর ক্ষেপিটা তুলতেই সবাই রে রে করে আটকে বাঁচিয়ে দিল পাহারাদারকে । ভয়ে সে ঝর ঝর করে কাঁদছে।

তারপর বেশ কিছুদিন ক্ষেপিটা গায়েব । একদিন জেলেরা কাজলা দীঘিতে পচা-গলা অর্ধনগ্ন মহিলা দেহ উদ্ধার করে । পেটে বাচ্চা এসে যাওয়া লজ্জায় ওটা লালির আত্মহত্যা না বাচ্চার বাবার পরিচয় প্রকাশের ভয়ে পৃথিবী থেকে লালিকে সরিয়ে দেবার ঘৃণ্যতা এ প্রশ্নের জবাব অধরাই রয়ে গেল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress