অপারেশন সাকসেসফুল
বেশ কিছুদিন ধরে সোমা উপলব্ধি করছে ও কানে কম শুনছে। সোমা একটু আধটু লেখালেখি করে থাকে, তাই মগজের মধ্যে অনেক গল্প, সারাক্ষণ কিলবিল করে। তাই বাড়ির লোকের কথা কানে অনেক সময় পৌঁছায় না।সোমা বাড়িতে জানিয়েছে সে কালা নয়। মাঝে মাঝে যন্ত্রণা একটু হয়।সব সময় গল্পের প্লট ভাবে।তাই অন্যমনষ্কতার জন্য কিছু কর্ণকুহরে প্রবেশ করে না। তিনটি অস্হি মেলিয়াস,ইনকাস,স্টেপিস সব ঠিকঠাক আছে। সংসারের সব কাজ শেষ করে সোমা আটটা বিয়াল্লিশের শান্তিপুর লোকাল ধরে।ব্যারাকপুর থেকে উঠে জানালার ধারে সিট মেলে। ফুরফুরে হাওয়া।মন মেজাজ খুব ভালো লাগছিল। এক সুন্দরী ভদ্রমহিলা এসে বলে সোমা তুমি! সোমা ভাবে কান গেছে সবাই বলছে, এবার ঘিলু ও শুকিয়ে গেছে!! ভদ্রমহিলা আমাকে সোমা সম্বোধন করে বলছেন কিন্তু আমিতো চিনতে পারছি না!!মনে মনে তাই বলি তোমাতে আমাতে দেখা হয়েছিল জানি না কবে কোথায় !! কিন্তু হেসে বললাম আরে! কিন্তু মাথাটা তখন হ-য-ব-র-ল, ঠাণ্ডায় কুল কুল করে ঘামছি।না চিনে ও চেনার চেষ্টা। সোমা তার অতীতের স্মৃতির অনেক কিছু এলোমেলো হয়েছে । হঠাৎ উনি বললেন লিমাদিকে ভুলতে পারো। তুমি যে আমার মস্ত…..। সোমা ভাবে মস্ত…???
কি বলতে চাইলেন। আচ্ছা লিমাদি তুমি এখানে কি করতে এসেছ গো। আরে সবাই যা করে আমিও তাই করতে এসেছি। “প্রেম” কবিতাটা বিড়বিড় করে বলছিলাম। আমাকে যদি কাজল পরতে হয় তোমার জন্য– শুধু তুমি দেখবে বলে গলার হার চুড়ি পরে সাজতে হয় যদি তলপেটের মেদ,যদি গলার ,চোখের তলার মেদ কায়দা করে লুকোতে হয় তাহলে তোমার সাথে আমার অন্য কিছু ! প্রেম নয় আমার। প্রেম হলে আজ যা কিছু এলোমেলো,খুঁত, ভুলভাল অসুন্দর থাক সামনে দাঁড়াব তুমি ভালো বাসবে। কে বলেছে প্রেম চাইলেই হয়! এত যে পুরুষ দেখি চারিদিকে প্রেমিক পাই কোথা! আরিব্বাস সোমা আমার কবিতা বেশ রপ্ত করেছ তো।
এতক্ষণে মাথা খোলে , উনিতো স্বনামধন্যা লেখিকা তসলিমা নাসরিন।বেশ বললে ভাই। নিজের লেখা অন্য কেউ মুখস্ত করে বললে ভীষণ ভীষণ ভালো লাগে। হঠাৎ একজনের ধাক্কা দিদি আপনার স্টেশন এসে গেছে।যা তাড়াহুড়ো করে প্ল্যাটফর্মে নেমে মনে হল …এ মা নাসরিন দিদিকে নামছি বলা হল না। এতটাই ফ্যান চলন্ত ট্রেনে পুনরায় উঠতে যাচ্ছি। একজন চেপে ধরে বলেন ঠিক আগের মত ছটফটে আছো! আমি বলি এতো নৈহাটি স্টেশন, আমিতো শান্তিপুর নামব।ঘুম চোখে হয়ত ট্রেন থেকে নেমে গেছিলাম।তাহলে তসলিমা নাসরিন ট্রেনে ছিল না।স্বপ্ন ছিল হয়ত। আমাকে ছাড়বেনতো মশাই।প্ল্যাটফর্মের মধ্যে চেপে ধরে আছেন। আমিতো এবার দম আটকে মরে যাব। চিৎকার করে লোক জড়ো করলে আমাকে চেনা বেরিয়ে যেত। সোমা ভাবে আমাকে সবাই চেনে!! আমিতো চুনোপুঁটি কবি।সবে লিখছি।এটাতো স্বপ্ন নয়।ওই যে ট্রেনটা কু ঝিক ঝিক করে প্ল্যাটফর্ম ছড়ে চলে যাচ্ছে। আবার চমকে উঠি অচেনা কার কণ্ঠস্বর, নার্সের গলা আরে জ্ঞান ফিরেছে। তাকিয়ে দেখি চেনা চেনা কত মুখ।কানে অপারেশন করে সবে ওটি থেকে বেডে দিয়েছে। এতক্ষণ সব অ্যানাস্থেসিয়ার অবচেতন ঘোর। উফ কানে বেশ ব্যথা হচ্ছে।সদ্য অপারেশন হলে যা হয়।তারপর ডাক্তারের নির্দেশ মতো ব্যথা কমানোর ইঞ্জেকশন দেয় নার্স। তারপর নিশ্চিন্ত ঘুম।।