অপরাহ্ন – 14
গরুর গাড়ি হেলেদুলে চলছে। নিচে বেঁধে-দেওয়া লণ্ঠন থেকে আলো এসে চারদিক যেন আরো অন্ধকার করে দিচ্ছে। একটা কাঁথায় সমস্ত শরীর ঢেকে শুয়ে আছে মনিরউদ্দিন। সে বোধহয় ঘুমিয়েই পড়েছে। মাঝেমাঝে তাকে ডেকে কথা বলছেন খবির হোসেন। সাপে-কাটা রুগীকে কিছুতেই ঘুমুতে দেওয়া যাবে না। জাগিয়ে রাখতে হবে।
ও মনির। মনির। মনিরউদ্দিন।
জ্বি।
ঘুমাইও না। কথা কও। মনির। ও মনিরউদ্দিন।
জ্বি।
ঘুমাইও না। এট্টু উইঠা বস।
মনিরউদ্দিন উঠেবসে না। ঝিম ধরে থাকে। ভোরবেলার স্বপ্নটা আবার যেন দেখতে পায়। ভোরবেলার স্বপ্নে একটি নারীর কোমল মুখ ছিল। দুটি জলভরা মিগ্ধ চোখ ছিল। সেই নারীকে সে চেনে, আবার চেনেও না। কে সেঃ মনিরউদ্দিনের বড় জানতে ইচ্ছা করে।
খবির হোসেন গাড়ির পেছনে পা ঝুলিয়ে বসেছেন। তিনি দেখতে পাচ্ছেন অন্তু মিয়া আসছে গাড়ির সঙ্গে-সঙ্গে। সে ঘন-ঘন হাতের তালু দিয়ে চোখ মুছছে। খবির হোসেন একবার ভাবলেন, ছেলেটাকে বাড়ি চলে যেতে বলবেন। কিন্তু বললেন না। আসুক। এক সময় গ্রামের শেষ সীমায় এসে নিজেই থেমে যাবে। মানুষকে কোথাও-না-কোথাও থামতে হয়।
বেশ শক্ত বাতাস দিচ্ছে। ঠাণ্ডা কনকনে হাওয়া। হয়তো বৃষ্টি হচ্ছে কোথাও। খবির হোসেন তাকিয়ে আছেন অন্তুর দিকে। অন্তু ছোট-ছোট পা ফেলে এগুচ্ছে, যেন কেউ তাকে থামাতে পারবে না।