অপত্য স্নেহ
রতনবাবু আর রিনিদির একমাত্র ছেলে বসন্ত ।
বসন্ত বিদেশে চাকরি করতে যাবার আগে —-রিনিদি ছেলের বিবাহ দেন—বৌমা ও সজলবাবু ও পম্পাদির একমাত্র কন্যা।
ছেলে বৌমা প্রায় চার বছর বিদেশে—মাঝে বৌমা—- নাতি হয়ে যাবার পর এসেছিল—দিনকয়েক এ বাড়ি ও বাড়ি থেকে চলে যায়—-ছেলে নানান কাজে আর আসতে পারি নি।
আগেরবার পূজায় আসবে বলেছিল—শেষে কাজের চাপে আর আসে নি।
দিন চলছে রিনিদি পাড়ার অনেক মহিলা নিয়ে বেশ আনন্দে কাটছে।
তাও কি ছেলে,নাতির কথা ভুলতে পারে??
রিনিদির ছেলে এবার পূজায় আসছে—বেশ লম্বা ছুটি পেয়েছে—কলকাতায় বেশ আনন্দ করা যাবে—-ছেলে এয়ারপোর্ট থেকে ফোন করে —-মা আমরা আসছি বাড়ি।
রিনিদি বলে বাবা আমরা বাড়ি নেই— তুই শ্বশুরবাড়িতে ওঠ–আমি তোর বাবা— পাড়ার বন্ধুদের নিয়ে দীঘায় বেড়াতে এসেছি—-ভাবলাম এবার ও আসবিনা।এয়ারপোর্টে এসে বলছিস।
বসন্তরা শ্বশুরবাড়ি ওঠে—-চারদিন হইহই করে কাটায়। বসন্ত অভিমান করে মা ও বাবার খোঁজ করেনা।বৌ এই নিয়ে বসন্তকে শ্বশুর ও শাশুড়ির নামে নানান কটুকথা শোনায়।
বসন্ত একাদশীর দিন— পাড়ার ছোটবেলার বন্ধু রাজকে ফোন করে ..”শুভ বিজয়া” জানায়।
রাজ বলে —“তুই এর মধ্যে আসতে পারবি না”??
-বসন্ত বলে নারে খুব কাজ-।
রাজ বলে আসলে ভালই করতিস—কাকুর যা অবস্হা—-কাকীমাই তো একা একা সামলাচ্ছেন।
বসন্ত বলে—না রে রাজ—- মা ও বাবা দীঘায় বেড়াতে গেছেন ।
তখন রাজ বলে কি যে বলিস??তোর বাবা তো মানসিক রুগী—কাল দমদম থেকে নিয়ে এসেছেন। কাকু তো শুধু তোর কথায় বলেন।
বসন্ত বলে বাবার নামে কি রসিকতা করছিস ??-
রাজ বলে তোর বাবা তো একবছর ধরে হাসপাতাল আর বাড়ি করছেন।
বসন্ত বলে—বাবা যদি অসুস্থ হন—তাহলে ফোনে কে কথা বলে??
রাজ বলে—“তা জানি না”।
তবে তোর ছোটমামা —মাসীমাকে খুবই সাহায্য করেন।
বসন্ত—ঘটনার হিসাব করতে পারেনা—মামাকে ফোন করে—
হঠাৎ ফোনটা কে যেন ধরল…কোনো কথা নেই—তবে চিৎকার শুনতে পায়–..আমার বসন্ত পড়তে বসেনি??—কোথায় গেছে-??-ওকে আজ আমি মারবই।
তারপর মায়ের চিৎকার —-ওগো আমি বসন্ত নয়—-আমায় আর মেরোনা।
শোনো তুমি এরকম পাগলামি করো না।তোমার ছেলে এখন কোলকাতায়।তোমার এরকম অবস্থা দেখলে আমাদের ছেলে কিছুতেই সহ্য করতে পারবে না।
বসন্ত কাউকে কিছু না বলে ট্যাক্সি করে সোজা বাড়ির দিকে ছোটে।
বসন্ত বাড়িতে আসে।বাবাকে জড়িয়ে ধরে।কোথায় বাবার পাগলামি।ছোট্ট শিশুর মত হাউমাউ করে কাঁদছিল বাবা।বসন্ত বুঝতে পারে মা তো পাড়ায় বন্ধুদের নিয়ে সময় কাটাতে পারে আর অবসর প্রাপ্ত বাবা একাকিত্বের শিকার হয়েছেন।
ছোট্ট শিশু যেমন ফুঁপিয়ে কাঁদে—ঠিক বসন্তের বাবা ও শিশুর মতো কাঁদতে থাকে।
ছেলের প্রতি বিগত চার বছরের যে অভিমানের পাহাড় জমেছিল।সব বরফ যেন গলে পড়ছিল।
জীবন মানেই রৌদ্রছায়া—ছোটবেলায় সন্তানের ছত্রধারী হন বাবা ও মা—জীবনের প্রতি পদক্ষেপে পক্ষী যেমন শাবকদের নিজ ডানার সাহায্যে আগলে রাখে—তেমনি বাবা ও মা সন্তানদের নানা ধূপ ও ছায়া থেকে রক্ষা করেন।আর বার্ধক্যে সুসন্তানরা বৃদ্ধ ও বৃদ্ধা বাবা মা কে দেখেন।
“চক্রবৎ পরিবর্তন্তে সুখানি চ দুঃখানি চ”—সুখ ও দুঃখ চাকার মতো ঘোরে তেমনি জীবনের প্রতি কদমে আসে রৌদ্রছায়া।
তাই তো জীবন মানেই রৌদ্রছায়া