প্রতিষ্ঠার লড়াই
অজয়ের সেজ ভাই ভাত খেতে খুব ভালো বাসত কিন্তু অধিকাংশ দিনই অজয় মাঠে জলখাবার নিয়ে যেত রুটি। কারণ তখনকার দিকে চালের থেকে আটা বা যব অনেক সস্তা ছিল। অজয়ের দুই বোন মাঠে ছাগল চড়াতে যেত। বড়ো বোনের অবশ্য অল্প বয়সেই বিয়ে হয়ে যায় তাই সে পড়াশোনা বেশি করতে পারেন নি। কিন্তু ছোটো বোন বেশ খানিকটা পড়াশোনা করেছে। এখানেও ছিল আর এক সমস্যা। গ্রাম থেকে তিন কিলোমিটারের দূরত্বে ছিল হাই স্কুল। আর এই তিন কিলোমিটার রাস্তার দেড় কিলোমিটার ছিল ঘনও জঙ্গল। রাস্তার দুই পাশে জঙ্গল এতো গভীর যে দিনের আলো প্রবেশ করতে পারতো না ওই রাস্তাটুকুতে এবং এই পুরো রাস্তাটা রোজ দীপাকে হেঁটে হেঁটে পার করতে হতো । কারণ ছোটো মেয়ের জন্য আলাদা করে সাইকেলে কেনার সামর্থ্য ছিল না সুনীল বাবুর। তখন গ্রামে পড়াশোনার ওতো রেওয়াজও ছিল না , গ্রামের বেশিরভাগ মেয়ে ঘরের কাজ করত। দীপাকেও করতে হতো কিন্তু তাও সে পড়াশোনাটা ছাড়ে নি। হাতে নাতে এর ফল ও সে পেয়েছে । বিয়ের সতেরো বছর পর সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে পেয়েছে চাকরী। কথায় আছে না – শিক্ষা কখনো বিফলে যায় না। কিন্তু সেই সময় এই পড়াশোনা চালানোর জন্য তাকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে।
অজয় কিন্তু থেমে থাকে নি। কি করে নিজের পায়ে দাঁড়াবে , কি করে নিজেদের অবস্থার উন্নতি করবে সেই নিয়েই ভাবতে থাকে। এক চিলতে জমি তারউপর ইটের গাঁথুনি আর ছাদের উপর অ্যাডভেস্টারের চাল। শুরু হল ব্যবসার প্রথম ধাপ। শহর থেকে জিনিসপত্র কিনে এনে খুব সস্তায় বিক্রি করতে লাগল নিজের দোকানে। আগেই বলেছি অজয়ের ব্যবসায়ী বুদ্ধি ছিল খুব ভালো। তাই কি করে ক্রেতার সংখ্যা বাড়ানো যায় সেটা ভালো করেই জানত। তবুও ব্যবসা শুরু করলেই তো আর লাভের মুখ দেখা যায় না। অপেক্ষা করতে হয় – ক্ষীর পেতে গেলে দুধ তো একটু বেশি জ্বাল দিতেই হবে। (ক্রমশঃ)