Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

সুলেখার সংগ্রাম

সুলেখার বারো বছর বয়সে বিয়ে হয় পাবনার এক চাকুরীজীবী রমেনের সাথে। বাড়ির বড়ো বউ – বড়ো দায়িত্ত্ব। ব্যাপার বাড়ির সমস্ত মায়া কাটিয়ে , ছোটো ভাই প্রসাদকে সৎ মায়ের কাছে রেখে সুলেখা নতুন সংসারের দায়িত্ব কাধে তুলে নেয়। রমেরনরা তিন ভাই, এক বোন আর শ্বশুর শ্বাশুড়ি, বাকি চার বোন বিয়ে করে গেছে শ্বশুর বাড়ি – বেশ সুখের সংসার। কিছুদিন পর মেজ দেওরের বিয়ে হল । সুলেখাকে সাহায্য করতে এলো প্রমীলা। এর মধ্যে সুলেখার কোলে এসেছে দুটো কন্যা সন্তান। সবাই মিলেমিশে দিনগুলো বেশ সুখেই কাটছিল। মাঝে মাঝে ভাইবোন গুলোকেও দেখতে যায় বাবার বাড়ি।
কিন্তু এর মধ্যে এলো এক মহাবিপদ। ওপার বাংলায় মেয়ে বউ নিয়ে থাকা হল দুষ্কর। ধানের জমিতে জোয়ান ছেলের কাটা মাথা, ঝোপের মধ্যে আইবুড়ো মেয়ের নগ্ন শরীর। ভয়ে কেপে উঠল গোটা দেশ। ভালো মানুষ সকালে কাজে বেড়িয়ে আর বাড়ি ফেরে না – ফেরে তার নিথর শরীর। শুরু হয় হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা। সংখ্যালঘু হিন্দুরা প্রাণ আর ইজ্জত বাঁচাতে রাতারাতি জমি , বাড়ি আর ভালো চাকরি ছেড়ে নিঃস্ব হাতে পালাতে লাগল দেশ ছেড়ে। সুলেখাও পালালো – রমেনের চাকরি, গোছানো বাড়ি ঘর আর কয়েক বিঘা জমি ছেড়ে রাতারাতি কাঁটাতারের বেরা পাড় হয়ে এল।
তবে ভাগ্য কিছুটা ভালো ছিল। বেশ কিছু নগদ টাকা হাতে থাকায় এদেশে এসে খুব অল্প দিনের মধ্যেই কিনে নিল জমি। শুরু হল পরিশ্রম – রাত দিন এক করে রমেন খাটতে থাকে। দই দুধ আর ঘির ব্যবসা শুরু করল। কাধে করে সারাদিন নানা গ্রাম ঘুরে বিক্রি করত সেগুলো। রমেন আর দেবেন করে বাইরে পরিশ্রম আর সুলেখা ও প্রমীলা ঘরে। খতনিতে ভয় পায় নি কেউ। যেন সংকল্প করেছিল সংসারটাকে আবার আগের মত বানাতে হবে। তাই পরিশ্রমের জোরে ভাগ্য গেল ফিরে। আর আঁধ পেটা খেয়ে থাকতে হল না তাদের।
ওদেশ থেকে আসার সময় রমেনের বিবাহিত চার বোন ও এসেছিল সঙ্গে। তাদের ছেলে মেয়ে সব বড়ো বড়ো। নিজেদের বাড়িতেও হাড়ির হাল তাই মামার বাড়িই তাদের ঠিকানা। ভাগ্নে গুলো মামাদের সাথে কাজে হাত লাগায়। খাওয়াদাওয়া ও করে সেখানেই। দই দুধের খাটনি থেকে একটু রেহাই পেয়েই আবার উল্টো খাটনি শুরু হয় সুলেখার। দুই বউ রান্না ঘর থেকে বেরোনোর সময় পায় না। সারাদিন চলে হেঁশেল। ছয় বছর বয়স থেকে শুরু হওয়া সংগ্রাম কবে শেষ হবে সুলেখার অদৃষ্টই জানে। (ক্রমশঃ)

Pages: 1 2 3 4 5 6

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress