Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

অন্নপূর্ণার শ্বশুরবাড়ি

অন্নর শ্বশুরের সাত ছেলে মেয়ে । বড়ো ননদের বিয়ে হয়েছে আগেই। বাকি সবাই অবিবাহিত। ছোটো ননদ আর ছোটো দুই দেওর – তখন পড়াশোনা করছে। অন্নর যখন বিয়ে হয় তখন তার ছোটো দেওরের বয়স মাত্র দশ বছর। এতগুলো লোকের সাথে ওইটুকু একটা মেয়ে কি ভাবে মানিয়ে নিয়েছিল জানা নেই। হয়ত অন্নর বাবার বাড়িতেও এতো লোক ছিল বলে তেমন অসুবিধা হয় নি।
বিয়ের কিছুদিনের মধ্যেই অন্নকে হেঁসেলে ঢুকতে হয়। তার শ্বাশুড়িমা করতেন বাইরের কাজ। গরুর দেখাশোনা, তাদের খেতে দেওয়া, জমির ধান উঠলে সেগুলো ঝেড়ে বেছে পরিষ্কার করা। তাই রান্নার কাজ অন্নকে দিয়ে তিনি নিশ্চিন্ত হয়েছিলেন। কিন্তু কয়েকমাস পর পর যখন অন্ন বাবার বাড়ি যেত সারাগায়ে কালি মাখা, উনুনের কালি আর নোংরা ঘামের সাথে মিশে গায়েই লেগে থাকত। পরিষ্কার করার সময় পেত না। মা আর কাকিমা মিলে অন্নকে ধরে ভালো করে স্নান করিয়ে দিতেন। অন্নর শ্বশুরবাড়িতে এতো লোক ছিল যে একটা সাবান আনলে তা দুদিনেই ফুরিয়ে যেত । তাই বেশ কয়েকদিন পর পর সাবান আনানো হত।
অন্নর শ্বশুর চাষী মানুষ । জমি গরু নিয়েই তাঁর কারবার। অজয় আর তার বড়ো দুই ভাই জমিতে লাঙ্গল দিত , বীজ বুনত। কিন্তু তার চিরদিনই একটু অন্য পথে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল। চাষ ছেড়ে ব্যবসা করতে চাইত। কিন্তু বাবাকে বলার সাহস পেত না। টিফিনের টাকা জমিয়ে, এটা ওটা করে বেশ কিছু টাকা শহরের এক লোকের কাছে সে রেখে দিয়েছিল। সেই লোক খুব বড়ো ব্যবসায়ী ছিলেন এবং অজয়কে খুব স্নেহ করতেন। সেই টাকা এবং বাবার দেওয়া কিছু টাকা মিলিয়ে বাড়ি থেকে একটু দূরে বড়ো রাস্তার ধারে একটা জমি কিনল অজয়। সেই জমিতে টিনের অ্যাডভ্যাস্টার দেওয়া একটা পাঁকা ঘর। অজয়ের নিজের দোকান। চাষবাস থেকে বেড়িয়ে এই পরিবারের প্রথম কোনো ব্যবসা শুরু ।
অজয়ের ছোটবেলাটা ছিল আরও বেশি সংগ্রামের । অজয়ের বাবা সুনীল বাবু আগাগোড়াই হাঁট থেকে বাজার করতেন এবং পরিবেশের উন্নতিতেও তাঁর এই স্বভাব কোনোদিন বদলায় নি। এই হাঁটের জামাকাপড় খুব একটা ভালো হতো না। সস্তার জিনিস আর কত ভালো হবে? অজয়ের মা জ্যোৎস্না দেবীর শাড়ী হতো পায়ের পাতা থেকে অনেকটা উঁচুতে অর্থাৎ ছোটো কাপড়। অজয় এবং তার ভাই বোনদের জন্য জামা-কাপড় ও অল্প দিনের মধ্যেই সেলাই খুলে যেত। অজয় পড়াশোনায় মোটামুটি ভালো হওয়া সত্বেও কোনোদিন ফার্স্ট বেঞ্চে বসে নি, যদি কখনো জামা প্যান্টের কোথাও অকস্মাৎ সেলাই খুলে যায়। বড়োবেলায় কথাগুলো মনে করে অজয়ের হাঁসি পেত আর এই হাসির গভীরে লুকিয়ে থাকা ছোটবেলার অসহায়তাও সে নতুন করে অনুভব করত।
দিনে স্কুল করেছেন আর বাকিটা সময় কাজ। কিশোর বয়সে অজয় বাড়িতে শোয়ার সুযোগ খুব কমই পেয়েছে। প্রতিদিন রাত দশটার মধ্যে খেয়ে দেয়ে কলঘরে চলে যেতো। কলঘর অর্থাৎ মাঠের মধ্যে একটা ঘর , যার মধ্যে একটা মোটর বসানো । সেই মোটর দিয়ে জল এসে জমির আলের সাহায্যে তা প্রতিটা জমিতে পৌঁছিয়ে যায়। রাত্রে যদি কখনো ইলেকট্রিক চলে যায় তবে জমিতে জল হবে না সেই জন্য কোনো একজনকে থাকতে হতো পুনরায় ইলেকট্রিক এলে মোটর চালানোর জন্য। এখানে বলে রাখি মাঠের ইলেকট্রিক অনেক আগে থেকেই এসেছিল এখানে, চাষবাস ভালো ভাবে করার জন্য সরকার থেকেই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কোনো বাড়িতে বিদ্যুৎ আসে নি। অন্নপূর্ণা এই গ্রামে আসার বছর দুয়েক পর পাকাপাকি ভাবে ইলেকট্রিক আসে মানুষের বাড়িতে। অজয়ের সাথে এই কলঘরে প্রতিদিন কেউ না কেউ থাকত। বেশিরভাগ তার বয়সি ছেলেরা । কারণ এই বয়সে সাহসটা একটু বেশি থাকে। তাই আশেপাশে এক কিলোমিটারের মধ্যে কোনো বাড়ি না থাকলেও এদের কখনো কোনো অসুবিধা হয় নি।
অজয় , তার মেজ ভাই , বড়ো বোন আর সেজ ভাই প্রত্যেকের বয়সের মধ্যে দু তিন বছরের পার্থক্য ছিল। তেমনই ছোটো বোন, ন’ ভাই আর ছোটো ভাইয়ের ও এই রকমই হবে। জ্যোৎস্না দেবী বলতেন হাতের পাঁচটা আঙ্গুল এক রকম হয় না। প্রমাণ তার নিজের পেটের সাত সন্তান । যেমন – অজয়ের বড়ো বোন ঠিক যতটা ফর্সা, তার ছোটো বোন ঠিক ততটাই কালো। এদিকে তার ছোটো ভাই যতটা ফর্সা, মেজ ভাই ততোধিক কালো। আবার আমার সেজ ভাই যতটা বেঁটে, মেজ ভাই আর ন’ভাই ততটাই লম্বা। অজয় আবার শ্যাম বর্ণ আর মাঝারি উচ্চতার। যেন সব বৈষম্য মিলে মিশে এক হয়ে এক জায়গায় ধরা দিয়েছে। কারণ জ্যোৎস্না দেবী ঠিক যতটা বেঁটে সুনীল বাবু উচ্চতায় প্রায় তার দ্বিগুণ। (ক্রমশঃ)

Pages: 1 2 3 4 5 6

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *