সুলেখার প্রথম জীবন
অন্নপূর্ণার মা সুলেখা দেবী বাংলাদেশের পাবনা জেলার মেয়ে। সব ভাইবোন মিলিয়ে পাঁচ ছ’টা হবে। সবার শেষ ছোটো ভাইটাকে জন্ম দিয়ে তার মা মারা যান। সুলেখার বয়স তখন বছর সাত হবে। বছর খানেক আগে এক সিদ্ধ পুরুষ তাদের বাড়ি আসেন এবং সুলেখার মা কে দেখে বলে যান তার শেষ সন্তান ছেলে হবে এবং তার নাম যেনো প্রসাদ রাখা হয়। আর এই সন্তান জন্মের কিছুদিনের মধ্যেই সুলেখার মা মারা যাবেন এবং হলোও তাই। সন্তান জন্মের পর দুদিনের জ্বরে আতুর ঘরের মধ্যেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ছোটো ভাইটাকে মানুষ করার দায়িত্ত্ব গিয়ে পড়ল ওই টুকু সুলেখার উপর। সত্যিই ভাবা যায় না চার পাঁচ দিনের একটি শিশুর দায়িত্ত্ব নিচ্ছে ছয় বছরের এক মাতৃহারা দিদি ।
সুলেখার বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করে । সৎ মা ভালো খারাপ মিশিয়ে ভালোই হলো। কিন্তু যে মেয়ে ছয় বছর বয়সে মাতৃহারা হয়, পাঁচ দিনের ভাইয়ের দায়িত্ত্ব যার উপর, সৎ মা যার বাড়ি সেই মেয়ের দুর্ভাগ্য তো সেখান থেকেই শুরু হয়। সুলেখার বাড়িতে কোনো টিউবওয়েল ছিল না তাই একটু বড়ো হতেই অনেকটা দূরের কুয়ো থেকে জল আনতে হত তাকে। সংসারের কাজ ও করতে হতো। নতুন মা গর্ভবতী হলে সুলেখার কাজ আরও বেড়ে যেত। রান্না করা , জমা কাপড় কাঁচা, ভাই বোনদের স্নান করানো খাওয়ানো সব। এদিকে সুলেখার বাবা দই এর ব্যবসা করতেন। গ্রামে গ্রামে বাঁকে করে দই বিক্রি করতে বেড়িয়ে পড়তেন সকালে তাই আগের দিন রাতে দুধ জ্বাল দিয়ে ঠিক ভাবে দই পাততেও বাবাকে সাহায্য করতে হতো তাকেই।
একটু বড়ো হতেই বিয়ের সম্মন্ধ আসতে থাকে । যে সময়ের কথা বলছি তখনকার দিনে মেয়েরা রান্নবাটি খেলার বয়সে শশুর ঘরে গিয়ে হাড়ি ধরত। এদিকে মেয়ের বয়স প্রায় দশ পেরিয়ে গেল। সুলেখার বাবার মাথায় হাত দেওয়ার মত অবস্থা। একবিংশ শতকে দাড়িয়ে কি ভীষণ অবাস্তব আর হাস্যকর এই ঘটনা আর ততটাই মর্মান্তিক। কিন্তু সেই সময়ে এটা অতি সাধারণ একটি ঘটনা , যা প্রতিটা ঘরে ঘরে ঘটত । যাইহোক ছোটো ছোটো ভাই বোনকে ছেড়ে অন্য কোথাও যেতে সুলেখা রাজি ছিল না। তার মনে হতো তার মা নিজে হাতে ভাইবোন গুলোর দায়িত্ব দিয়ে গেছে তার উপর, মাঝপথে সেই দায়িত্ব কাধ থেকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে কি ভাবে অন্য কোথাও নিজের সংসার সাজাবে? কিন্তু কেই বা শুনবে তার কথা। যুগে যুগে তো মেয়েদেরই তাদের ইচ্ছার বলি চড়াতে হয়। (ক্রমশঃ)