Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » অন্ধকারের গান (১৯৯৭) || Humayun Ahmed » Page 8

অন্ধকারের গান (১৯৯৭) || Humayun Ahmed

অন্ধকারের গান (১৯৯৭) – Ondhokarer Gaan – 8

ডারমাটোলজিস্ট প্রফেসর বড়ুয়া হাসতে হাসতে বললেন, এটা তো কিছুই না। এক ধরনের ফাংগাস। নিম্নশ্রেণীর এককোষী উদ্ভিদ।

বোরহান সাহেব বললেন, ভাই ভালো করে দেখুন।

ভালো করেই দেখেছি। এইসব ফাংগাসরা অনেক জায়গায় বংশ বিস্তার করতে পারে। মানুষের চামড়া তাদের বংশ বিস্তারের জন্যে ভালো জায়গা। আমি একটা মলম দিচ্ছি গোসলের পর চামড়ায় লাগাতে হবে।

অলিক বলল, লাগালেই সেরে যাবে?

অবশ্যই সারবে।

কতদিন লাগবে সারতে?

এই ধর সাত দিন। দাগ পুরোপুরি মেলাতে দশ পনের দিন লাগতে পারে।

অলিক বলল, আপনি কি ভালোমতো দেখেছেন ডাক্তার সাহেব?

প্রফেসর বড়ুয়া খানিকটা গম্ভীর হয়ে গেলেন। এক জন এম আর সি পি ডাক্তারকে ঘন ঘন যদি বলা হয় আপনি কি ভালোমতো দেখেছেন তাহলে খুব সঙ্গত কারণেই তাঁর রাগ হবার কথা।

বোরহান সাহেব মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন, মা তুমি একটু বাইরে যাও আমি উনার সঙ্গে একটু কথা বলব।

অলিক বলল, আমার সামনেই বল। তোমার এমন কোনো কথা নেই যা আমার সামনে বলা যাবে না। মার কথাই তো তুমি বলবে তাই না?

হ্যাঁ।

বল। আর তোমার যদি বলতে অস্বস্তি লাগে তাহলে না হয় আমিই বলি।

বোরহান সাহেব চুপ করে গেলেন। স্ত্রীর প্রসঙ্গে কথা বলতে আসলেই তাঁর অস্বস্তি হচ্ছে। অলিক খানিকক্ষণ অপেক্ষা করে বেশ সহজভাবেই বলল, ডাক্তার সাহেব আমার মায়ের চামড়াতেও ঠিক একই রকম হলুদ রঙের দাগ হয়েছিল, তারপর সেগুলো হয়ে গেল কালচে। এখানকার ডাক্তাররা বললেন কিছুই না—এক ধরনের ছত্রাকের আক্রমণ। ওষুধ দিলেন। কিছুই হল না। ওষুধ বদলানো হল—কিছুই না, দাগ বাড়তে লাগল, শুরু হল যন্ত্ৰণা। মাকে আমরা বিলেত নিয়ে গেলাম। সেখান থেকে আমেরিকার জন হপকিন্স হাসপাতালে। ডাক্তাররা বললেন—এটা একটা অজানা চর্মরোগ। এই অসুখেই মা মারা যান।

প্রফেসর বড়ুয়া তাকিয়ে আছেন।

বোরহান সাহেব বললেন, এখনো কি আপনার ধারণা আমার মেয়ের গায়ে যে দাগ সেগুলো ফাংগাসের জন্যে?

অবশ্যই। আপনার স্ত্রীকে আমি দেখি নি কাজেই তাঁর কী হয়েছিল আমি বলতে পারব না। এই মেয়েকে আমি দেখেছি। ওষুধ লিখে দিলাম। আচ্ছা থাক ওষুধ কিনতে হবে না, আমি দিয়ে দিচ্ছি। আমার কাছে স্যাম্পল আছে। আপনি সাত দিন পর আসবেন। অবশ্যই আসবেন।

আসব।

যে সব প্রেসক্রিপশন আপনার স্ত্রীকে ডাক্তাররা করেছিলেন সেগুলো কি আছে?

থাকার কথা নয়। আমি খুঁজে দেখতে পারি।

অলিক বলল, ডাক্তার সাহেব আমার অসুখটা যদি আপনার কাছে এতই সহজ মনে হয় তাহলে আপনি মার প্রেসক্রিপশন যুঁজছেন কেন?

তোমার চিকিৎসার জন্যে খুঁজছি না। আমি খুঁজছি আমার একাডেমিক ইন্টারেস্টে। তোমার নাম কি খুকী?

অলিক।

সাত দিন পর দেখা হবে।

ডাক্তারের চেম্বার থেকে বের হয়েই অলিক বলল, মাত্র সাড়ে চারটা বাজে। আমার বাসায় ফিরতে ইচ্ছা করছে না বাবা। চল কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করা যাক।

কোথায় ঘুরবি?

ঢাকা শহরে কি কোথাও শিমুল গাছ আছে? আমার একটা শিমুল গাছ দেখতে ইচ্ছা করছে।

শিমুল গাছ?

হ্যাঁ। শিমুল গাছ SilkCottonPlant. শিমুল গাছ নিয়ে অপূর্ব একটা কবিতা পড়লাম। শব্দ করে বিচিগুলো ফাটে তারপর বাতাসে ভাসতে ভাসতে তুলা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে সত্যি বাবা?

আমি বলতে পারছি না আমার অবস্থাও তোর মতো, শিমুল গাছ দেখা হয় নি। বা দেখলেও কী ভাবে কি হয় জানি না।

কোন সময়টা তুলা বের হয় তা জান?

তাও জানি না। চল বোটানিক্যাল গার্ডেনে গিয়ে খোঁজ নেই।

বাগানের সাজানো গাছ দেখতে ইচ্ছা করছে না বাবা। বাগানের সাজানো গাছ মানে পোষ গাছ। আমি দেখতে চাই বন্য গাছ।

তাহলে খোঁজ খবর করে একটু গ্রামের দিকে যেতে হয়।

বেশ তাই চল।

আজ তো আর হবে না।

আগামীকাল চল। আজ তুমি আমাকে একটা জায়গায় নামিয়ে দিয়ে বাসায় চলে যাবে। রাতে ফিরতেও পারি নাও ফিরতে পারি।

তার মানে।

যদি থাকতে ইচ্ছা করে থেকে যাব।

কার বাসা?

বীণাদের বাসা। যদি রাতে থেকে যাই তোমার আপত্তি হবে না তো?

আপত্তি হবে কেন? আমি বরং রাত দশটার দিকে গাড়ি পাঠাব, তোর যদি আসতে ইচ্ছা হয় চলে আসবি। আসতে ইচ্ছা না হলে গাড়ি ফেরত পাঠাবি।

গাড়ি পাঠাতে হবে না বাবা। তোমার ভয় নেই, রাত দশটায় আমি একা একা রওনা হব না।

বোরহান সাহেব মেয়েকে বড় রাস্তায় নামিয়ে দিলেন এবং বললেন, ওষুধটা আজ রাত থেকেই শুরু করিস মা।

করব। আজ রাতে থেকেই শুরু হবে।

বীণাদের বাড়িতে এর আগে একবারই এসেছিল—এত বছর পর ঠিকানা ছাড়া সেই বাড়ি খুঁজে বের করা অসম্ভব ব্যাপার। ঢাকা শহর সাপের মতো বছরে একবার খোলস ছেড়ে নতুন হচ্ছে। অলিক পুরোপুরি ধাঁধায় পড়ে গেল। আগে গ্রামগ্রাম একটা ভাব ছিল, এখন রীতিমতো শহুরে এলাকা। শুধু রাস্তা বেশি বদলায় নি। রাস্তাটা চেনা যাচ্ছে।

অলিক বীণার বাবার নাম জানে না জানলে দোকানে বা লন্ডিতে জিজ্ঞেস করা যেত—অমুক সাহেবের বাসা কোনটা। বীণাদের ভাইদের কারুর নাম জানলে অল্পবয়সী ছেলেদের জিজ্ঞেস করা যেত। এখন সে যা জিজ্ঞেস করতে পারে তা হচ্ছে। বীণাদের বাড়ি কোনটা? সুন্দর মতো একটা মেয়ে লম্বা, ফর্সা এবার বি.এ পাশ করেছে। পাড়ার ছেলেরা নিশ্চয়ই সুন্দরী মেয়েরা কে কোথায় থাকে জানে।

দেখা গেল কেউ জানে না। সম্ভবত এ পাড়ায় অনেকগুলো সুন্দরী মেয়ে থাকে। এবং তাদের সবাই একটি বাড়িতে থাকে যে বাড়ির কর্তা এক জন উকিল। সুন্দমতো একটা মেয়ে বলতেই সবাই বলে—ও আচ্ছা উকিল সাহেবের মেয়েদের কথা বলছেন? উত্তরের তিন তলা বাড়িতে চলে যান।

অলিকের মনে আছে বীণাদের বাড়ি একতলা। বাড়িতে চমৎকার একটা কুয়া আছে। কুয়ার পাড়ে একটা ফুলের গাছ। ফুল গাছের নাম মনে নেই, তবে সাদা রঙের ফুল যার গন্ধ খুবই হালকা।

অলিক এক ঘন্টার মতো হাঁটাহাঁটি করল। এক ঘন্টা হাঁটাহাঁটি করেও সে তেমন ক্লান্তি বোধ করছে না। বরং মজাই লাগছে। এক ধরনের চ্যালেঞ্জ বোধ কাছে। সে ঠিক করে ফেলল সূর্য ডোবার আগ পর্যন্ত সে খুঁজবে। সূর্য ড়ুবে যাবার সঙ্গে-সঙ্গে উকিল সাহেবের বাসায় যাবে। তাঁর সুন্দরী মেয়েগুলোকে দেখে সেই বাসা থেকেই বাবাকে টেলিফোন করে বলবে গাড়ি পাঠাতে। উকিল যখন, তখন নিশ্চয়ই বাসায় টেলিফোন আছে।

অলিককে সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হল না—তার আগেই গুণ্ডামতো মুখ ভর্তি দাড়ি গোফওয়ালা এক ছেলে এসে বলল, আপনি নাকি বীণা নামের একটা মেয়েকে খুঁজছেন।

অলিক বলল, আপনাকে কে বলল?

চায়ের দোকানে শুনলাম। আসুন আমার সঙ্গে।

আপনার সঙ্গে যাব কেন? আপনাকে দেখে গুণ্ডা বলে মনে হচ্ছে।

দাড়িওয়ালা লোকা হেসে বলল, আমি বীণার বড় ভাই। আমার নাম বুলু।

আপনি যে তার ভাই তারই বা প্রমাণ কি?

মুখে দাড়ি না থাকলে চিনতে পারতেন। আমরা সব ভাইবোন দেখতে এক রকম।

বীণা বাসায় আছে?

জ্বি আছে।

উকিল সাহেবের বাসা কোনটা জানেন?

কোন উকিল সাহেবের বাসা?

যার অনেকগুলো রূপবতী মেয়ে আছে।

জানি না তো।

সে কী, আপনি জানেন না? সবাই তো জানে। আসুন আমার সঙ্গে। আমি চিনি। ঐ বাসায় খানিকক্ষণ বসে তারপর আপনার সঙ্গে যাব।

বুলু অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। এই ধরনের একটি মেয়ের সঙ্গে বীণার পরিচয় আছে এটা ভাবতেই তার অবাক লাগছে। বুলু মেয়েটির সঙ্গে সঙ্গে হাঁটতে লাগল।

আপনি মুখ ভর্তি দাড়ি রেখেছেন কেন?

বুলু হাসতে হাসতে বলল, পরীক্ষায় ফেল করে দাড়ি রেখে ফেলেছি।

পরীক্ষায় ফেল করলে দাড়ি রাখতে হয় জানতাম না তো। ইন্টারেস্টিং। আপনারা না হয় দাড়ি রাখলেন। আমরা মেয়েরা কী করব? আমাদের তো দাড়ি রাখার উপায় নেই।

চুল কেটে ফেলতে পারেন।

মন্দ না। আপনি তো বেশ গুছিয়ে কথা বলেন। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছেন কেন। আপনার বাঁ পাটা কি শর্ট?

বাঁ পায়ে কাঁটা ফুটেছে।

কাঁটা তো গলায় ফোটে জানতাম। পায়েও ফোটে।

হ্যাঁ ফোটে।

আপনি খালি পায়ে হাঁটাহাঁটি করেন নাকি?

বুলুর ধারণা হল মেয়েটার মাথায় ছিট আছে। এক জন সুস্থ স্বাভাবিক মেয়ে এরকম অনর্গল কথার পিঠে কথা এক জন অপরিচিত ছেলের সঙ্গে বলবে না। আশ্চর্য, এমন মজার একটি মেয়েকে বীণা চেনে অথচ কোনোদিন এই মেয়েটার কথা সে তাদের বলে নি।

উকিল সাহেব বা উকিল সাহেবের মেয়েদের কাউকেই পাওয়া গেল না। গেটে বিরাট তালা।

অলিক বলল, চলুন যাওয়া যাক। আপনাদের বাসা কি অনেকখানি দূর?

না, দূর না, কাছেই। ঐ যে চায়ের দোকানটা দেখা যাচ্ছে, ওর পেছনে।

আরো একটু দূর হলে ভালো হত, কথা বলতে বলতে যাওয়া যেত। আপনার সঙ্গে কথা বলতে আমার ভালো লাগছে। কথা বলতে ইচ্ছা করছে।

বুলু হকচকিয়ে গেল। এই পাগল মেয়ে বলে কি? অলিক হাসি মুখে বলল, আপনি এত ঘাবড়ে গেলেন কেন? মেয়েদের সঙ্গে কথা বলা আপনার অভ্যেস নেই তাই না? আমার সামান্য কথা শুনেই আপনার ধারণা হয়েছে আমি আপনার প্রেমে হাবুড়ুবু খাচ্ছি। শুনুন আপনাকে একটা জরুরি কথা বলি। কুড়ি পার হওয়া মেয়েরা খুব হিসেবী, তারা চট করে কারো প্রেমে পড়ে না। দাড়ি গোফের জঙ্গল হয়ে আছে এমন ছেলেকে তো নয়ই।

বুলু স্বাভাবিক গলায় বলল, আপনি চাইলে আমি দাড়ি গোফ কামিয়ে ফেলতে পারি।

অলিক কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থেকে আশেপাশের সবাইকে সচকিত করে খিল। খিল শব্দে হেসে উঠল। অনেকদিন এমন গাঢ় আনন্দে সে হাসে নি।

ভালো কথা আপনি শিমুল গাছের ইংরেজি কী জানেন?

জ্বি না। আমি কোনো গাছের ইংরেজিই জানি না। শুধু জানি গাছ হচ্ছে ট্রি।

শিমুল গাছের ইংরেজি হচ্ছে Cotton seed tree. আপনি কি শিমুল গাছ দেখেছেন?

দেখব না কেন? আমার পায়ে যে কাঁটা ফুটেছে সেটা হচ্ছে শিমুল কাঁটা।

কী বললেন?

শিমুল কাঁটা ফুটে আমার অবস্থা কাহিল।

বাহ্ চমৎকার তো। কী আশ্চর্য যোগাযোগ।

বুলু অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। এই মেয়েটির কথাবার্তা সে কিছুই বুঝতে পারছে। না।

ফরিদা খুবই বিব্রত বোধ করছেন ঘরে রাতে তেমন কিছুই রান্না হয় নি। দুপুরের ইলিশ মাছের তরকারি সামান্য ছিল ঐ দিয়েই টেনে টুনে রাতটা পার করে দেবেন। ভেবেছিলেন—এখন কী করবেন ভেবে পাচ্ছেন না। বীণা এক ফাঁকে এসে বলে গেছে, মা, ও রাতে এখানে থাকতে চায়।

ফরিদা বিস্মিত হয়ে বললেন, রাতে থাকার দরকার কি?

থাকতে চাচ্ছে, এখন কী করে বলি থাকা যাবে না।

থাকার দরকারটা কি?

ওর মাথার ঠিক নেই মা?

এ রকম মাথা খারাপ মেয়ের সঙ্গে তোর বন্ধুত্ব হল কী ভাবে?

ও খুব ভালো মেয়ে মা। ওর সঙ্গে ভালো করে না মিশলে তুমি বুঝবে না।

আমার এত বোঝার দরকার নেই। এখন তোর বাবা এসে কী করে সেইটাই হচ্ছে কথা। চেঁচামেচি না করলেই হল। ও ঘুমুবে কোথায়?

ও বলছে ঘুমুবে না। কুয়ার পাড়ে বসে সারা রাত গল্প করবে।

মেয়েটা কি সত্যি-সত্যি পাগল নাকি?

ফরিদা মেয়েটিকে ঠিক অপছন্দ করতে পারছেন না। সহজ স্বাভাবিক ভঙ্গিতে মিশছে। যেন এটা তার নিজের বাড়ি।

রাত আটটার দিকে মিজান সাহেব বাড়ি ফিরে অবাক হয়ে লক্ষ করলেন ফুটফুটে একটা মেয়ে বীণার শাড়ি পরে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে। তিনি জিজ্ঞাসু চোখে ফরিদার দিকে তাকাতেই ফরিদা হড়বড় করে বললেন, বীণার বন্ধু, মেয়েটার মা নেই। খুব দুঃখী মেয়ে। আজ রাতটা বীণার সঙ্গে থাকতে এসেছে। তুমি রাগারাগি করবে না।

মিজান সাহেব বিস্মিত হয়ে বললেন, বীণার বন্ধু—এক রাত থাকবে আমি তাতে রাগ করব কেন? কি বলছ এসব? ফরিদা অস্বস্তির মধ্যে পড়ে গেলেন।

ডাক মেয়েটাকে।

ফরিদা অলিককে ডাকতে যাচ্ছিলেন, মিজান সাহেব বললেন, থাক পরে কথা বলব। খাওয়া-দাওয়ার কী ব্যবস্থা করেছ?

কিছু তো ঘরে নাই।

কিছু একটা কর। বীণার যেন মনটা ঘোট না হয়। ও এমন মুখ কালো করে ঘুরছে কেন?

ভয় পাচ্ছে—তুমি যদি কিছু বল।

আমি কিছু বলব কেন? আমার মেয়ের এক বন্ধু এক রাত আমার বাসায় এসে থাকতে পারবে না? এতে আমি রাগ করব? এরা আমাকে ভাবে কী?

মিজান সাহেব বড়ই বিরক্ত হলেন। বুলুকে টাকা দিয়ে বাজারে পাঠালেন। যদি কিছু পাওয়া যায়।

নিজেই গিয়ে দৈ কিনে আনলেন। বারান্দায় পাটি পেতে খাবার ব্যবস্থা হল। মিজান। সাহেবের ইচ্ছা-সবাই যেন এক সঙ্গে বসে। অলিক খুবই সহজভাবে মিজান সাহেবের পাশে এসে বসল এবং হাসি মুখে বলল, চাচা এরা সবাই আপনাকে এত ভয় পায়। কেন বলুন তো? আপনার দুপাশের দুটি থালা বাদ দিয়ে সবাই বসেছে। এরা এত ভয় পায় আপনাকে, আপনার খারাপ লাগে না?

মিজান সাহেব সকলকে অবাক করে দিয়ে বললেন, খারাপ লাগে মা। খুবই খারাপ লাগে। বীণা, তুই আয়, আমার এই পাশে বোস।

বীণা জড়সড় হয়ে বাবার পাশে এসে বসল। মিজান সাহেব অলিকের দিকে তাকিয়ে বললেন, তুমি আরেকদিন এসে এখানে থাকবে মা, কেমন? আজ তোমাকে শুধু ভাত খেতে হল। আমি খুবই লজ্জিত।

রাতটা ছিল চমৎকার।

আকাশ ঝকঝকে পরিষ্কার। লক্ষ লক্ষ তারা ফুটেছে। চমৎকার বাতাস। দুই বান্ধবী কুয়া তলায় বসে গল্প করছে। গল্প অবশ্যি করছে অলিক, শুনছে বীণা।

বুঝলি বীণা, কবিতা লেখা বাদ দিয়ে আমি একটা বড় গল্প লিখব বলে ভাবছি। সেই বড় গল্পটাই তোকে শোনাতে এসেছি। গল্পের শেষটা কী হলে ভালো হয়। সেটাই বুঝতে পারছি না।

গল্পটা শুরু হচ্ছে আমার মতো বয়েসী একটা মেয়েকে নিয়ে। চমৎকার একটি মেয়ে, রূপবতী, ইন্টেলিজেন্ট, ফুল অব লাইফ। হঠাৎ মেয়েটা জানতে পারল তার ভয়াবহ একটা অসুখ হয়েছে। তার আয়ু আছে ছমাসের মতো। শুরুটা কেমন রে?

খুব সাধারণ, লক্ষ লক্ষ এ রকম গল্প আছে। খুব ট্রাজিক শুরু।

আমার গল্পটা অন্য গল্পের মতো না। আমার গল্পের মেয়েটা ছমাস আয়ুর ব্যাপারটা বেশ সহজভাবে নিল। ঠিক করল জীবনটা মোটামুটি যতটুকু পারে ভোগ করবে। মেয়েটির কোনো যৌন অভিজ্ঞতা নেই অথচ ব্যাপারটা কী তা সে জানতে চায়……।

বীণা বলল, কি সব আজে-বাজে কথা শুরু করলি। চুপ কর তো।

এটা আজে-বাজে হবে কেন? সারা পৃথিবী জুড়ে যে জিনিসটা নিয়ে এত মাতামাতি, মানুষের এত আগ্রহ, এত কৌতূহল সেইটা যদি একটা মেয়ে মরবার

আগে জেনে যেতে চায় তাতে দোষের কী?

একটা শালীনতার ব্যাপার আছে না?

যে মেয়ে দদিন পর মরে যাচ্ছে তার আবার শালীনতা কি?

আচ্ছা বাবা ঠিক আছে, তুই তোর গল্প বল।

এখন মুশকিল কি হয়েছে জানিস? মুশকিল হচ্ছে মেয়েটা তার এই কৌতূহল কী ভাবে মেটাবে বুঝতে পারছে না। সে তো আর কোনো এক জনকে বলতে পারে না ভাই আজ রাতে আপনি দয়া করে আমার সঙ্গে ঘুমুবেন?

বীণা হেসে ফেলল।

অলিক বলল, বাইরে থেকে মেয়েটাকে যথেষ্ট স্মার্ট মনে হলেও আসলে সে লাজুক ধরনের একটা মেয়ে এবং খুব ভালো মেয়ে।

বীণা বলল, এই তোর গল্প?

হুঁ।

গল্প তাকে দিয়ে হবে না। তুই বরং কবিতাই চালিয়ে যা।

অলিক দীৰ্ঘনিঃশ্বাস ফেলল।

বীণা বলল, তুই এমন মন খারাপ করে ফেললি কেন?

বুঝতে পারছি না। মাঝে-মাঝে আমার এরকম হয়। অল্পক্ষণের জন্যে মন খারাপ হয়। তার হয় না?

বীণা হেসে বলল, আমার বেশিরভাগ সময়ই মন খারাপ থাকে। মাঝেমাঝে মন ভালো হয়। আমরা দুজন সম্পূর্ণ দরকম।

অলিক বলল, এসব কচকচানি বাদ দে, আয় একটা কবিতা শোন।

তোর লেখা?

না ডাবলিউ মরিখের লেখা। অসাধারণ।

He did not die in the night,
He did not die in the day,
But in the morning twilight
His spirit passd away,
When neither sun nor moon was bright,
And the tree were merely grey.

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress