অন্ধকারের গান (১৯৯৭) – Ondhokarer Gaan – 7
দুপুর বেলা চারদিক কেমন নিঝুম হয়ে থাকে।
ফরিদা বারান্দায় পাটি পেতে শুয়ে থাকেন। বাবলু, লীনা স্কুলে। বীণা সারা দুপুর কুয়াতলায় বসে কি সব বইপত্র পড়ে। সুনসান নীরবতার মধ্যে একমাত্র সরব ব্যক্তি বীণার দাদী। যদিও দুপুর বেলায় তার গলা খাদে নেমে যায়। একঘেয়ে স্বরে তিনি বিড়বিড় করেন। সেই বিড়বিড়ানির মধ্যে ঘুম পাড়ানো কোনো সুর হয়ত আছে। শুনতে শুনতে ফরিদার ঘুম পেয়ে যায়।
আজও ঘুম পেয়ে গেল।
ঘুম ভাঙল খট্ খট্ শব্দে। গেট দুপুরে ভেতর থেকে বন্ধ থাকে। ভিখিরীর দল। খানিকক্ষণ খটু খটু করে এক সময় বিরক্ত হয়ে চলে যায়। আজ যে এসেছে সে কিছুতেই যাচ্ছে না। কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে আবার শব্দ করে, ফরিদা বিরক্ত গলায় বললেন, বীণা একটু দেখ তো। এরা বড় যন্ত্রণা করে।
বীণা চিঠি লিখছিল। তার চিঠি লেখার কোনো মানুষ নেই। অথচ কর্মহীন পরে কেন জানি শুধু চিঠি লিখতে ইচ্ছা করে। অবিশ্যি আজকের চিঠিটি সে লিখছে মালবীকে। মালবীর সঙ্গে তার তেমন কোনো ভাব নেই। তবু মালবী তার একমাত্র বান্ধবী যে হঠাৎ করে তাকে দীর্ঘ চিঠি লিখে বসে। গতকাল মালবীর একটা চিঠি এসেছে। তার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে—এই খবর জানিয়ে দীর্ঘ চিঠি। ছেলে বাংলাদেশের চায়না এ্যাম্বেসির কালচারাল সেক্রেটারি। হঠাৎ করে বিয়ে ঠিক হয়েছে। দেশ ছেড়ে মালবীকে চলে যেতে হবে এই দুঃখেই সে কাতর। চিঠির জবাব লিখতে গিয়ে বীণার নিজের কেন জানি একটু মন খারাপ লাগছে। সে খাতা বন্ধ করে গেট খুলতে গেল। ভর দুপুরে আজকাল গেট খোলাও বিপজ্জনক। হুট করে কে না কে ঢুকে পড়ে।
বীণা বলল, কে?
নরম গলায় জবাব এল—বীণা আমি। আমি বুলু। বাবা বাড়িতে?
বীণা গেট খুলতে খুলতে বলল, এইসব কী কাণ্ড দাদা? কোথায় পালিয়েছিলে?
বাবা কি বাসায়?
না বাবা বাসায় নেই। একি অবস্থা তোমার, ছি ছি।
বুলু লজ্জিত ভঙ্গিতে হাসল, বাসার অবস্থা কি একটু ঠাণ্ডা?
তুমি এখানে দাঁড়িয়ে বক-বক করবে, না ভেতরে আসবে? ইস্ কী অবস্থা হয়েছে।
মৌলানা সাহেব হয়ে গেছি। কি রকম চাপদাড়ি উঠেছে দেখেছিস?
ভেতর থেকে ফরিদা বললেন, কার সঙ্গে কথা বলছিসরে বীণা? কে?
দাদা এসেছে মা।
ফরিদা উঠে বসলেন। কি বলবেন বা কি করবেন বুঝতে পারলেন না। এতদিন পর এসেছে। ভয়ে ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছিল, মা হিসেবে সান্ত্বনার কিছু কথা কি বলা উচিত না? নাকি তিনিও রাগ দেখবেন? মুখ গম্ভীর করে যেভাবে শুয়েছিলেন সেইভাবেই শুয়ে থাকবেন?
বুলু বারান্দায় চলে এল। ফরিদা চমকে উঠলেন। কী চেহারা হয়েছে ছেলের মুখ ভর্তি দাড়ি। আটাশ দিনে এত লম্বা দাড়ি হয় নাকি? চুল মনে হচ্ছে জট পাকিয়ে গিয়েছে। মুখটা শুকনো। ফরিদা বললেন, পায়ে কী হয়েছে, খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছিস কেন?
কাঁটা ফুটেছে। মা, বাবার রাগ কমেছে?
রাগ না কমলে কী করবি আবার পালিয়ে যাবি?
বুল লাজুক ভঙ্গিতে হাসল। হাসি দেখে বড় মায়া লাগল ফরিদার। আহা বেচারা। তিনি নরম গলায় বললেন, মানুষ পরীক্ষায় ফেল করে না? ফেল করলে বাড়ি ঘর ছেড়ে দিতে হয়?
তিনবার তো কেউ ফেল করে না?
ফরিদা বললেন, ছিলি কোথায়?
গ্রামের দিকে ছিলাম।
বীণা ওকে গোছলের পানি দে। সাবান দে।
বীণার দাদী চেঁচাচ্ছেন হারামজাদা আইছে? ওই হারামজাদা, এদিকে আয়।
কুয়ার পাড়ে বুলু গোছল করতে বসেছে। বীণা আছে তার পাশেই। বীণা বলল, পিঠ ভর্তি ময়লা দাদা। দাও, গামছাটা আমার কাছে দাও, ঘষে দেই।
লাগবে না লাগবে না।
আহা দাও না। শরীর এত নোংরা হল কী ভাবে? ইস্ কী ভাবে ময়লা উঠছে। দাদা, মাথায় আরো বেশি করে সাবান দাও তো।
বুলু বলল, তোর রেজাল্ট যে কী প্রথম দুই দিন বুঝতেই পারি নি। নিজেরটা দেখেই অবস্থা কাহিল। থার্ড ডে-তে তোর রেজাল্ট দেখলাম। এত আনন্দ হল বুঝলি—একেবারে চোখে পানি এসে গেল। তোকে মাথায় নিয়ে নাচতে ইচ্ছা করছিল।
একবার এসে তো বললেও না।
বাবার ভয়ে আসি নি।
এখন ভয় করছে না? করছে।
খাওয়া-দাওয়া করে আবার পালাব……
পাগলামি যথেষ্ট করেছ দাদা।
ফরিদা নিজেই ছেলের জন্যে একটা ডিম ভেজে আনলেন। খাবার তেমন কিছু নেই। ছোট মাছের তরকারি ছিল কেমন টক্ টক্ গন্ধ ছাড়ছে। ডালও আছে সামান্য।
মা একটা শুকনো মরিচ ভেজে দাও তো।
ফরিদা একটা শুকনো মরিচ ভেজে আনলেন। বুলু এত আগ্রহ করে খাচ্ছে। এতদিন কোথায় ছিল, কী খেয়েছে কে জানে।
মিজান সাহেব সন্ধ্যার ঠিক আগে আগে ফিরলেন। হাত মুখ ধুয়ে চায়ের কাপ হাতে নিয়ে বসলেন। ফরিদা বললেন, বুলু এসেছে।
তিনি কিছু বললেন না। ফরিদার মনে হল, কথাটা বোধহয় শুনতে পায় নি। ফরিদা গলা উঁচিয়ে বললেন, বুলু এসেছে।
মিজান সাহেব বিরক্ত গলায় বললেন, কতবার এক কথা বলবে? এসেছে ভালো কথা। এখন আমাকে করতে হবে কী? কোলে নিয়ে বসে থাকতে হবে?
কিছু বলল না। ভয় পাচ্ছে খুব।
মিজান সাহেব চা শেষ করেই উঠে পড়লেন। ফরিদা বললেন, কোথাও যাচ্ছ নাকি?
তিনি কোনো জবাব দিলেন না। ছাতা নিয়ে বেরিয়ে গেলেন। আনন্দে লীনা ও বাবলুর চোখে প্রায় পানি এসে যাবার মতো হল। আজ বৃহস্পতিবার, বাবার বইপত্র নিয়ে বসার দিন। একবার যখন বের হয়ে গেছেন তখন বোধ হয় আর বসা হবে না।
বুলু দুপুরে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল, সেই ঘুম ভাঙল সন্ধ্যার পর। গা ম্যাজ-ম্যাজ এবং জ্বর-জ্বর ভাব নিয়ে সে শুয়েই রইল। বাঁ পা-টা টাটাচ্ছে।
বীণা চায়ের কাপ নিয়ে ঢুকল। এর আগেও সে কয়েকবার এসেছিল। বুলু ঘুমুচ্ছে দেখে ডাকে নি।
বুলু বলল, বাবা আসেন নি?
এসেছিলেন, আবার কোথায় যেন গেলেন।
আমার প্রসঙ্গে কিছু বলেছেন?
না।
চলে যাওয়া দরকার। বাবা আবার ফিরে আসার আগেই বিদায় নেয়া উচিত।
বাজে কথা বলবে না দাদা। যা করেছ যথেষ্ট করেছ। বড়াগুলি খাও। শুধু চা খাচ্ছ কেন?
গ্রামে গ্রামে ঘুরছিলাম তো বুঝলি বীণা, অনেক কিছু দেখলাম। আমার আগে ধারণা ছিল আমরাই বোধ হয় সবচে গরীব। শুধু ভাত খাচ্ছে বুঝলি। শুধু ভাত। সাথে কিছু নেই।
তুমি কি ওদের নিয়ে কবিতা-টবিতা লিখলে?
বুলু কিছু বলল না। লজ্জিত ভঙ্গিতে হাসল। বুলুর মধ্যে কিছুদিন পর পর কবিতা লেখার একটা উৎসাহ দেখা যায়। কোনো কবিতাই সে কাউকে দেখায় না, তবে বীণা ব্যাপারটা জানে।
তুই এম. এ পড়বি না বীণা?
জানি না তো। বাবা কিছু বলছে না।
বলাবলির কি আছে? ভর্তি হয়ে যা। এম.এ পাশ বোন বলতেই ভালো লাগবে। এম. এ জিনিসটাই অন্যরকম, তাই না?
কি জানি।
আমি যদি এম.এ পাশ করতে পারতাম তাহলে গ্রামের দিকে কোনো কলেজে মাস্টারি করতাম। ফাইন হত।
বুলু ছোট্ট করে একটা নিঃশ্বাস ফেলল। বীণা বলল, সেলুনে গিয়ে দাড়ি-টাড়িগুলো কামিয়ে আস দাদা, বিশ্রী লাগছে। এই নাও।
বীণা পাঁচ টাকার একটা নোট বাড়িয়ে দিল। বুলু হাত বাড়িয়ে টাকাটা নিল। তার হাত একেবারে খালি। সিগারেট খেতে ইচ্ছা করছে। সিগারেটের অভ্যাসটা তার গ্রামে গিয়ে হয়েছে।
বুলু বাসা থেকে হাত খরচের কোনো টাকা পয়সা পায় না। টুক টাক খরচের টাকাটা সে একটা প্রাইভেট টিউশানি করে জোগাড় করে। ওদের কাছ থেকে গত মাসের বেতন নেয়া হয় নি। বুলু ঠিক করল আজ রাতেই একবার যাবে। রাত আটটা নটার আগে না গেলে ছাত্রের বাবাকে পাওয়া যাবে না। টাকাটা পেলে বীণার জন্যে সামান্য কিছু উপহার কিনবে বলে সে ঠিক করে ফেলল। কী কেনা যায়।
শান্তিবাগে রহমানের বাসা খুঁজে বের করতে মিজান সাহেবের অনেক দেরি হল। গলির ভেতর গলি, তার ভেতর গলি। খুজে পেতে যে বাড়ি পাওয়া গেল তার অবস্থা দেখে মিজান সাহেব আকাশ থেকে পড়লেন। দোতলা বাড়ির একতলা। বাড়ির এমন অবস্থা, মনে হচ্ছে এক্ষুনি গোটা বাড়ি ভেঙে পড়বে। সদর দরজার সামনেই ডাস্টবিন। রাতে সাধারণত মাছি ওড়ে না অথচ এখানে মাছি ভন-ভন করছে। দুর্গন্ধে দাঁড়িয়ে থাকা যায় না। ছুটে পালিয়ে যেতে ইচ্ছা করে।
দরজার কড়া নাড়তেই রহমান বের হয়ে এল, অবাক হয়ে বলল, স্যার আপনি
কেমন আছ রহমান।
জ্বি ভালো। তোমার বাচ্চাটাকে দেখতে এলাম। ও আছে কেমন?
ভালো আছে স্যার। ও বাসায় নেই, ওর বড় মামার বাড়ি গেছে। যাত্ৰাবাড়িতে। স্যার ভেতরে আসুন।
মিজান সাহেব ভেতরে ঢুকলেন। বাড়ির সাজসজ্জা দেখে মনটা খারাপ হল। কি অবস্থা। বসার ঘরে কয়েকটা কাঠের চেয়ার। এককোণে একটা চৌকি। পাটি বিছানো। পাটির ওপর ওয়ারবিহীন তেল চিটচিটে একটা বালিশ।
স্যার একটু বসুন, আমি আমার স্ত্রীকে ডেকে নিয়ে আসি।
রহমানের স্ত্রী অসম্ভব রোগা, বালিকা চেহারার একটা মেয়ে। সে শাড়ি বদলে এসেছে। পাটভাঙা শাড়ি ফুলে আছে। মেয়েটি পা ছুঁয়ে মিজান সাহেবকে সালাম করল। মিজান সাহেব খুবই অপ্রস্তুত হয়ে পড়লেন। রহমান বলল, আমার স্যার। উনার কথা তোমাকে বলেছি চিনু।
মিজান সাহেব বললেন, ভালে আছ তুমি করে বলে ফেললাম। আমার বড় মেয়ে তোমার বয়েসী।
অবশ্যই তুমি করে বলবেন চাচাজান। অবশ্যই বলবেন। আপনার বড় ছেলে কি ফিরেছে।
মিজান সাহেব বললেন, হ্যাঁ ফিরেছে। ওর কথা তুমিও জান।
জ্বি ও বলেছে। ও অফিসের সব কথা আমাকে বলে।
রহমান শার্ট গায়ে দিয়ে বের হয়ে গেছে। খাবার দাবার কিছু কিনবে বোধ হয়। চিনু চৌকিতে বসে গল্প করছে।
ঘর টরের এমন অবস্থা। আপনি এসেছেন খুব খারাপ লাগছে।
আমার নিজের বাড়ি ঘরও খুব ভালো অবস্থায় নেই।
ওদের অবস্থা কিন্তু খুব খারাপ ছিল না চাচা। জমিজমা ভালো ছিল। বৎসরের চাল জমি থেকে আসত। সব বিক্রি করতে হল। আড়াই লাখ টাকা জোগাড় করা সোজা কথা তো না। জমিজমা বসত বাড়ি, আমার সামান্য কিছু গয়না সব গেছে, তারপরেও দশ হাজার টাকা দেন। কিন্তু আমার কোনো আফসোস নেই। মানুষের জীবনের চেয়ে বড় তো কিছু না। তাই না চাচা? ছেলেটা তো ভালো হয়েছে।
তা তো বটেই।
আমার এক খালাতো ভাই টাকা দিতে চেয়েছিল ও নেয় নি। ওর আবার আত্মসম্মান খুব বেশি। পরের টাকায় সে ছেলের চিকিৎসা করাবে না। বলেন চাচা, আমাদের মতো মানুষের মুখে এইরকম কথা কি মানায়?
মানাবে না কেন? নিশ্চয়ই মানায়।
এত বড় ঝামেলা গেল অফিসের কেউ দেখতে আসে নাই। আপনি এসেছেন। ও খুব খুশি হয়েছে। ও অল্পতেই খুশি হয়।
মিজান সাহেব চুপ করে বসে রইলেন। রহমান খাবার নিয়ে ফিরে এসেছে, দুটা মিষ্টি, দুটা সিঙ্গাড়া, চারটা নিমকি। এদের ঘরে বোধ হয় চায়ের ব্যবস্থা নেই। কেতলীতে করে চাও এসেছে।
বুলু যে ছেলেটিকে পড়ায় তাদের বাসা আদাবরে। ছেলেটি ক্লাস ফোরে পড়ে। বুদ্ধিমান ছেলে। কোনো জিনিস একবারের বেশি দুবার তাকে বলতে হয় না, তবে হাতের লেখা খুব খারাপ। বুলু যা করত সেটা হচ্ছে রোজ চার পাঁচ পাতা করে হাতের লেখা লেখানো। এতেও কোন লাভ হয় নি, হাতের লেখা যেমন আছে তেমনি রয়ে গেছে।
এ বাড়িতে এসে বুলুর বেশ মন খারাপ হল। বারান্দায় নতুন এক জন মাস্টার ছেলেটাকে পড়াচ্ছেন। মনে হচ্ছে কড়া ধরনের মাস্টার। ছেলেটা বুলুর দিকে তাকাতেই মাস্টার সাহেব কড়া একটা ধমক দিলেন।
ছেলেটার বাবা বাসাতেই ছিলেন। বেরিয়ে এসে শুকনো মুখে বললেন, আপনি যে কোথায় উধাও হয়ে গেলেন আর খোঁজ নেই। শেষে নতুন এক জন মাস্টার রেখে দিলাম।
ভালো করেছেন।
মাস্টারও ভালো। কড়া ধরনের……।
কড়া মাস্টারই ভালো।
আপনার বোধ হয় কিছু টাকা-পয়সা পাওনা আছে। সামনের সপ্তাহে একবার আসুন দেখি। হিসাব টিসাব করে দেখি।
বুলু দীর্ঘনিশ্বাস ফেলল। এক মাসের বেতন বাকি। সামান্য কটা টাকা, এর এত হিসাব নিকাশ কি?
বসুন চা খেয়ে যান।
জ্বি না থাক।
সামনের সপ্তাহে একবার আসুন। বুধবারে চলে আসবেন।
বুলু কিছু বলল না। বাঁ পায়ের ব্যথা বেশ বেড়েছে।
ভদ্রলোক বললেন, দাড়ি রেখেছেন ব্যাপার কি?
ব্যাপার কিছু না এমনি রাখলাম।
আচ্ছা আসুন সামনের সপ্তাহে।
বাড়ির গেটের কাছে বুলুর সঙ্গে মিজান সাহেবের দেখা হয়ে গেল। মিজান সাহেব খানিকক্ষণ তাকিয়ে রইলেন। বুলু ভেবেছিল—কিছু নিশ্চয়ই বলবেন।
তিনি কিছুই বললেন না। দুজন মানুষ কাছাকাছি দাঁড়িয়ে আছে। অথচ কেউ কারো সঙ্গে কোনো কথা বলছে না। বেশ কিছু সময় পর মিজান সাহেব বললেন, দাড়ি রেখেছিস কেন?
বুলু জবাব দিল না। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল।
তোর পায়ে কী হয়েছে? খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছিস কেন?
বুলু চুপ করে রইল।
কথা বলছি না যে, কথা বলা ভুলে গেছি?
বুলু ভেবেছিল বাবা বলবেন, যা সেলুন থেকে দাড়ি কেটে পরিষ্কার হয়ে আয়।
তিনি তা বললেন না।
বুলু।
জ্বি।
তোর চেহারা আমি দেখতে চাই না। তুই যেখানে গিয়েছিলি সেখানেই যা।
এখন চলে যাব বাবা?
মিজান সাহেব এই প্রশ্নের জবাব না দিয়ে ঘরে ঢুকে গেলেন। বুলু কী করবে বুঝতে পারল না। সে কি এখনি চলে যাবে? না দুএকটা দিন অপেক্ষা করবে? বন্ড ক্লান্ত লাগছে। আজ রাতটা কি বাবা তাকে থাকতে দেবেন।