অন্ধকারের গান (১৯৯৭) – Ondhokarer Gaan – 12
অলিক আজ চমৎকার একটা নীল শাড়ি পরেছে। সেজেছেও খুব যত্ন করে। তাকে জলপরীর মতো লাগছে। ডারমাটোলজিস্ট প্রফেসর বড়ুয়া বললেন, কেমন আছ মা?
অলিক বলল, আমি ভালো আছি। আপনি সাত দিন পর আসতে বলেছিলেন, আমি এসেছি।
দেখি, তোমার দাগের কি অবস্থা।
দেখুন।
প্রফেসর বড়ুয়া দেখলেন। দাগ আরো বেড়েছে। কিছু কিছু দাগ ফ্যাকাশে হলুদ থেকে কালচে বর্ণ ধারণ করেছে। তিনি অবাক হয়ে দাগগুলোর দিকে তাকিয়ে রইলেন।
অলিক বলল, আপনি ওষুধ বদলে এখন নতুন ওষুধ দেবেন, তাই না? আমার মার ডাক্তারও তাই করতেন।
প্রফেসর বড়ুয়া কিছু বললেন না।
বোরহান সাহেব বললেন, মেয়েটিকে কি বাইরে নিয়ে যাব?
প্রফেসর বড়ুয়া দীর্ঘ সময় চুপ করে থেকে বললেন, নিয়ে যান।
ডাক্তারের চেম্বার থেকে বের হয়েই বোরহান সাহেব বললেন, তোর বান্ধবীর ভাইকে দেখতে যাবি নাকি?
না।
না কেন? চল দেখে আসি।
হাসপাতাল আমার আলো লাগে না বাবা।
বাসায় চলে যাবি?
হুঁ। আমার কাজ আছে।
কি কাজ?
খুব জরুরি একটা কাজ।
অলিকের কাজটা তেমন কিছু জরুরি না। ওডেনের একটা কবিতার ছায়ায় গত চারদিন ধরে সে নিজে একটা লিখতে চেষ্টা করছে। ওডেনের সেই সহজ ভঙ্গি তার কবিতায় আসছে না। কবিতাটা কেমন কঠিন হয়ে যাচ্ছে। সহজ করে লেখা এত কঠিন কেন তাই সে বুঝতে পারছে না।
বাসায় ফেরার পথে গাড়ির সিটে হেলান দিয়ে সে মনে-মনে কবিতাটা আবৃত্তি করল।
He was fully sensible to the advantage of the installment plan.
And had everything necessary to the Modern Man.
A gramophone, a radio, a car a frigidare.
আচ্ছা এই মানুষটি কি সুখী ছিল?
যার জীবনের কোনো সাধই অপূর্ণ নয় সেকি সুখী? জীবনানন্দ দাশের লাশকাটা ঘরের ঐ মানুষটিও কি সুখী ছিল? ঐ মানুষটির স্ত্রী ছিল, শিশু ছিল, ভালবাসা ছিল। তবু তাকে লাশ কাটা ঘরে যেতে হল কেন? মনে হয় জীবনানন্দ দাশের ঐ মানুষটি সুখী ছিল তাহলে ওডেনের মানুষটি সুখী ছিল কি? ওডেনের ঐ মানুষটির তো কোনো অভাব ছিল না। তার একটা গাড়ি ছিল, একটা গ্রামোফোন ছিল, একটা ফ্রিজ ছিল।