অনুভবে ঝড়
রেললাইন ধরে হাঁটছিলাম। দূরে ধানক্ষেত দেখা যায়। ধানক্ষেতের পাশ দিয়েই একটা খাল গেছে। সময় তখন গোধূলি। চারপাশ কেমন থমকে আছে। খুব গরম, একটুও বাতাস নেই। ঠিক এই রকম সময়ে আচমকা বাতাস বইতে শুরু করলো। গরম বাতাস। চারপাশের গাছপালা গুলো হাহাকার করে উঠলো। মুহূর্তের মধ্যে আকাশে কালো মেঘ জমতে শুরু করলো আর বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। ব্রজপাতও হলো বেশ কয়েকবার?
আকাশে ঘুড়ির মতো টিনটা যেন উড়ছে। মনে হল টাল খেয়ে আমার দিকে ছুটে আসছে।পড়বে বোধ হয় মাথার উপরে। সব কিছুই বড্ড আবছা লাগছে। চারপাশে গুমগুম আর শো শোঁ শব্দ। মনে হলো যেন কোনো অশরীরী কাঁদছে। বাতাসের ধাক্কায় কিছুতেই দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলাম না। চোখ মেলে তাকাতেও পারছিলাম না। দোকানগুলো সাটার নামিয়ে দেওয়ায় দাঁড়ানোর জায়গা ছিল না।চোখের সামনেই একটা পেঁপে গাছ পড়ে গেল। বিশাল বিশাল গাছ, ঝরে পড়া পাতার মতো পড়ে যাচ্ছে। কলা গাছ গুলো ভীষণ দুলছিল। উন্মাদ বাতাস যেন সব কিছু কেড়ে নিতে চাইছিল।
আমার মাথা কাজ করছিল না। চিন্তাশক্তি সব যেন হারিয়ে গেছে। আমি চোখ দিয়ে মন ভরে এই ঝড় দেখতে পারলাম না। ধুলোবালি উড়ে এসে তীরের মতো চোখে আর শরীরে বিঁধছে। একটা নারকেল গাছের উপড়ে পড়ল বাজ, মনে হল আলোটা আমার পায়ের কাছে। গমগম আর শোঁ শোঁ শব্দে কান স্তব্দ হয়ে পড়েছে। বোধ শক্তিহীন অসাড় হয়ে পড়লাম । প্রাণ বাঁচাতে একটা আবাসনের নীচে কিছুক্ষণ দাঁড়ালাম। এই মহান ঝড়কে অনুভব করলাম আমার সম্পূর্ণ সত্তা দিয়ে। এইভাবে প্রায় ত্রিশ মিনিট খেলা করে ঝড়টা থেমে গেল। তারপর শুরু হলো বৃষ্টি। বৃষ্টি আর থামতে চায় না। ভিজতে ভিজতে বাড়ি ফিরলাম।