Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » অনীশ – মিসির আলি || Humayun Ahmed » Page 6

অনীশ – মিসির আলি || Humayun Ahmed

এসএসসিতে আমার এত ভাল রেজাল্ট হবে আমি কল্পনাও করিনি। আমাদের ক্লাসের অন্যসব মেয়ের প্রাইভেট টিউটর ছিল, আমার ছিল না। মা’র পছন্দ নয়। মা’র ধারণা অল্পবয়স্ক প্রাইভেট মাস্টাররা ছাত্রীর সাথে প্রেম করার চেষ্টা করে, বয়স্করা নানান কৌশলে গায়ে হাত দেয়ার চেষ্টা করে। কাজেই যা পরলাম, নিজে নিজে পরলাম।
রেজাল্ট হবার পর বিস্ময়ে হকচকিয়ে গেলাম। কী আশ্চর্য কাণ্ড, ছেলেমেয়ে সবার মধ্যে ফিফথ। পাঁচটা বিষয়ে লেটার।
আমি বললাম, তুমি কি খুশি হয়েছ মা?
মা যন্ত্রের মত বললেন, হু ।
‘খুব খুশি না অল্প খুশি?’
‘খুব খুশি।’
‘আমাদের সঙ্গে যে-মেয়েটা ফোর্থ হয়েছে সে শান্তিনিকেতনে পড়তে যাচ্ছে। তুমি কি আমাকে শান্তিনিকেতনে পড়তে দেবে?’
মা আমাকে বিস্মিত করে দিয়ে বললেন, হ্যাঁ, দেব।
‘সত্যি?’
‘হ্যাঁ সত্যি। কীভাবে যেতে হয়, টাকাপয়সা কত লাগে খোঁজখবর আন।’
‘তুমি সত্যি সত্যি বলছ তো মা?’
‘বললাম তো হ্যাঁ।’
‘আমার এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না।’
‘বিশ্বাস না হবার কী আছে? এই দেশে কি আর পড়াশোনা আছে? টাকা থাকলে তোকে বিলেতে রেখে পড়াতাম।’
আমার আনন্দের সীমা রইল না। ছোটাছুটি করে কাগজপত্র জোগাড় করলাম। অনেক যন্ত্রণা। সরকারি অনুমতি লাগে। আরো কী কী সব যন্ত্রণা। সব করলেন রুমার বাবা। রুমা হচ্ছে সেই মেয়ে যে ফোর্থ হয়েছে। রুমার বাবা সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের এডিশনাল সেক্রেটারি। তিনি যে শুধু ব্যবস্থা করে দিলেন তা-ই না, আমাদের দুজনের জন্যে দুটো স্কলারশিপেরও ব্যবস্থা করে দিলেন। পাসপোর্ট ভিসা সব উনি করলেন। বাংলাদেশ বিমানে যাব, ভোর ৯টায় ফ্লাইট। উত্তেজনায় আমি রাতে ঘুমুতে পারলাম না। মা আমাকে জড়িয়ে ধরে সারারাতই ফুঁপিয়ে কাঁদলেন। খানিকক্ষণ কাঁদেন, তারপর বলেন, ও বুড়ি, তুই কি পারবি আমাকে ছেড়ে থাকতে?
‘কষ্ট হবে, তবে পারব। তুমিও পারবে।’
‘না, আমি পারব না।’
‘যখন খুব কষ্ট হবে তখন কলকাতা চলে যাবে। কলকাতা থেকে শান্তিনিকেতন দেড় ঘণ্টা লাগে ট্রেনে। শান্তিনিকেতনে অতিথিভবন আছে, সেখানে উঠবে। আমার যখন খারাপ লাগবে, আমিও তা-ই করব, হুট করে ঢাকায় চলে আসব।’
‘তুই বদলে যাচ্ছিস।’
‘আমি আগের মতোই আছি মা। সারাজীবন এইরকমই থাকব।’
‘না, তুই বদলাবি। তুই ভয়ংকর রকম বদলে জাবি। আমি বুঝতে পারছি।’
‘তোমার যদি বেশিরকম খারাপ লাগে তা হলে আমি শান্তিনিকেতনে যাবার আইডিয়া বাদ দেব।’
‘বাদ দিতে হবে না। তোর এত শখ, তুই যা।’
‘মা শোন, যাবার পর যদি দেখি খুব খারাপ লাগছে তা হলে চলে আসব।’
খুব ভোরে আমার ঘুম ভাঙল। দেখি মা বিছানায় নেই। দরজা খুলতে গিয়ে দেখি বাইরে থেকে তালাবন্ধ। আমি আগেরবারের মত হৈচৈ চেঁচামেচি করলাম না, কাঁদলাম না, চুপ করে রইলাম। তালাবন্ধ রইলাম সন্ধ্যা পর্যন্ত। সন্ধ্যাবেলা মা নিচুগলায় বললেন, ভাত খেতে আয় বুড়ি। ভাত দিয়েছি।
আমি শান্তমুখে ভাত খেতে বসলাম। এমন ভাব করলাম যেন কিছুই হয়নি। মা বললেন, ডালটা কি টক হয়ে গেছে? সকালে রান্না করেছিলাম, দুপুরে জ্বাল দিতে ভুলে গেচি। আমি বললাম, টক হয়নি। ডাল খেতে ভাল হয়েছে মা।
‘ভাত খাবার পর কি চা খাবি? চা বানাব?’
‘বানাও।’
আমি চা খেলাম খবরের কাগজ পড়লাম। ছাদে হাঁটতে গেলাম। মা যখন এশার নামাজ পড়তে জায়নামাজে দাঁড়ালেন তখন আমি এক অসীম সাহসী কাণ্ড করে বসলাম। বাড়ি থেকে পালালাম। রাত ন’টায় উপস্থিত হলাম এষার বাসায়। এষা আমার বান্ধবী। এষার বাবা-মা খুবই অবাক হলেন। তাঁরা তক্ষুনি আমাকে পৌঁছে দিয়ে আসতে চান। অনেক কষ্টে তাঁদের আটকালাম। একরাত তার বাসায় থেকে ভোরবেলা চলে গেলাম রুবিনাদের বাড়ি। রুবিনাকে বললাম, আমি দুদিন তোদের বাড়িতে থাকব। তোর কি অসুবিধা হবে? আমি বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছি।
রুবিনা চোখ কপালে তুলে ফেলল। আমি বললাম, তুই তোর বাবা-মাকে কিছু একটা বল যাতে তাঁরা সন্দেহ না করেন যে আমি বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছি।
রুবিনাদের বাড়িতে দুদিনের জায়গায় আমি চারদিন কাটিয়ে পঞ্চমদিনের দিন মা’র কাছে ফিরে যাওয়া স্থির করলাম। বাড়ি পৌঁছলাম সন্ধ্যায়। মা আমাকে দেখলেন, কিছুই বললেন না। এরকমভাবে তাকালেন যেন কোথাও বেড়াতে গিয়েছিলাম। ফিরে এসেছি। আমি চাপাগলায় বললাম, কেমন আছ মা?
মা বললেন, ভাল।
‘তুমি মনে হয় আমার উপর ভয়ংকর রাগ করেছ। কী শাস্তি দিতে চাও দাও। আমি ভয়ংকর অন্যায় করেছি। শাস্তি আমার প্রাপ্য।’
মা কিছু বললেন না। রান্নাঘরে ঢুকে গেলেন। আমি লক্ষ করলাম, বসার ঘরে অল্প-বয়েসি একটি ছেলে বসে আছে। কঠিন ধরনের চেহারা। রোগা, গলাটা হাঁসের মতো অনেকখানি লম্বা। মাথার চুল তেলে জবজব করছে। সে খবরের কাগজ পড়ছিল। আমাকে একনজর দেখে আবার খবরের কাগজ পড়তে লাগল।
আমি মাকে গিয়ে বললাম, বসার ঘরে বসে আছে লোকটা কে?
‘ওর নাম জয়নাল। আমার দূর সম্পর্কের আত্মীয়। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে। ফাইনাল ইয়ারে। এবছর পাশ করে বেরুবে।’
‘এখানে কী জন্যে?’
‘তুই চলে যাবার পর আমি খবর দিয়ে আনিয়েছি। একা থাকতাম। ভয়ভয় লাগত।’
‘আই অ্যাম সরি মা। এ রকম ভুল আর করব না। আমি চলে এসেছি, এখন তুমি ওঁকে চলে যেতে বলো।’
‘তুই আমার ঘরে আয় বুড়ি। তোর সঙ্গে আমার জরুরি কথা আছে।’
আমি মা’র ঘরে গেলাম। মা দরজা বন্ধ করে দিলেন। মা’র দিকে তাকিয়ে আমি চমকে উঠলাম। এতক্ষণ লক্ষই করিনি এই পাঁচদিনে মা’র চেহারা, স্বাস্থ্য সম্পূর্ণ ভেঙ্গে গেছে। তাঁকে দেখে মনে হচ্ছে একটা জীবন্ত কঙ্কাল। মা বললেন, তুই চলে যাবার পর থেকে আমি পানি ছাড়া আর কিছু খাইনি। এটা কি তোর বিশ্বাস হয়?
আমি কাঁদতে কাঁদতে বললাম, হয়।
মা বললেন, দোকান থেকে ইঁদুর-মারা বিষ এনে আমি গ্লাসে গুলে রেখেছি – তোর সামনে খাব বলে। আমি যে তোর সামনে বিষ খেতে পারি এটা কি তোর বিশ্বাস হয়?
আমি কাঁদতে কাঁদতে বললাম, হয়।
মা বললেন, এক শর্তে আমি বিষ খাব না। আমি যে-ছেলেটিকে বসিয়ে রেখেছি তাকে তুই বিয়ে করবি। এবং আজ রাতেই করবি। আমি কাজি ডাকিয়ে আনব।
আমি বললাম, এসব তুমি কী বলছ মা!
‘এই ছেলে খুব গরিব ঘরের ছেলে। ভাল ব্রিলিয়ান্ট ছেলে। আমি তাকে ইন্টারমিডিয়েট থেকে পড়ার খরচ দিয়ে যাচ্ছি। তোর জন্যেই করছিলাম। এই ছেলে বিয়ের পর এ-বাড়িতে থাকবে, আমাদের দুজনকে দেখাশোনা করবে।
আমার মুখে কথা আটকে গেল। মাথা ঘুরছে। কী বলব কিছুই বুজতে পারছি না। মা বললেন, টেবিলের দিকে তাকিয়ে দেখ – গ্লাসে বিষ গোলা আছে। এখন মন ঠিক কর। তারপর আমাকে বল।

সেই রাতেই আমার বিয়ে হল। নয়াটোলার কাজিসাহেব বিয়ে পড়িয়ে দিয়ে গেলেন। দেনমোহরানা এক লক্ষ টাকা। বিয়ে উপলক্ষে দামি একটা বেনারসি পড়লাম। মা আগেই কিনিয়ে রেখেছিলেন।
বাসর হল মা’র শোবার ঘরে।
আমার স্বামী বাসররাতে প্রথম যে-কথাটি আমাকে বললেন, তা হচ্ছে- গত পাঁচদিন তুমি কার কার বাড়িতে ছিলে আমাকে বলো। আমি খোঁজ নেব।
আমি কঠিন গলায় বললাম, কী খোঁজ নেবেন?
আমার স্বামী বললেন, গরিব হয়ে জন্মেছি বলে আজ আমার এই অবস্থা – বড়লোকের নষ্ট মেয়ে বিয়ে করতে হল। নষ্টামি যা করেছ করেছ। আর না। আমি মানুষটা ছোটখাটো কিন্তু ধানি মরিচ। ধানি মরিচ চেন তো? সাইজে ছোট – ঝাল বেশি।

আমার ধারণা শরীর থেকেই ভালবাসার জন্ম হতে পারে। আমি আমার স্বামীকে ভালবাসলাম। আমার ধারণা, এই ভালবাসার উৎস শরীর। মানুষের মন যেমন বিচিত্র, তার শরীরও তেমনি।
আমি এবং আমার মা, আমরা দুজনই ছিলাম নিঃসঙ্গ। তৃতীয় ব্যক্তি এসে আমাদের এই নিঃসঙ্গতা দূর করল। বাড়ির একতালাটা মা আমাদের দুজনকে ছেড়ে দিলেন। মা’র সঙ্গে থেকেও তাঁর কাছ থেকে আলাদা থাকার স্বাদ খানিকটা হলেও পাওয়া গেল। আমারা এসে আবার খেতাম। তখন আমার স্বামী মজার মজার কথা বলে আমাদের খুব হাসাতেন। আমার মা’কে তিনি বেশ পছন্দ করতেন। আমরা হয়ত খেতে বসলাম, তিনি আমার মা’র দিকে তাকিয়ে বললেন, আম্মা, আপনাকে এমন মনমরা লাগছে কেন? তা হলে শোনেন একটা মজার গল্প – মন ভাল করে দেবে। আমাদের দেশের বাড়িতে সফদরগঞ্জ বাজারে এক দরজি থাকত। এক ঈদে সে তিনটা হাতা দিয়ে এক পাঞ্জাবি বানাল…
গল্প এই পর্যন্ত শুনেই মা হাসতে হাসতে ভেঙ্গে পড়লেন। মা হাসছেন, আমি হাসছি আর উনি মুখ গম্ভীর করে বসে আছেন কখন আমরা হাসি থামাব সেই অপেক্ষায়।
ঘরজামাইদের নানারকম ত্রুতি থাকে। তারা সারাক্ষণ শ্বশুরবাড়ির টাকাপয়সা সম্পর্কে খোঁজখবর করে। তাদের চেষ্টাই থাকে কী করে সবকিছুর দখল নেয়া যায়। আমার স্বামী তা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত ছিলেন। তিনি কখনো এসব নিয়ে মাথা ঘামাননি। অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন। রাতদিন পড়াশোনা নিয়ে থাকতেন। অবসর সময়টা মাকে গল্প শোনাতে পছন্দ করতেন। আমাকে গল্প শোনানোর ব্যাপারে তিনি তেমন আগ্রহ বোধ করতেন না। আমার শরীর তিনি যতটা পছন্দ করতেন আমাকে ততটা করতেন না।
বিয়ের দুমাস যেতেই আমার ধারণা হল সম্ভবত আমি ‘কনসিভ’ করেছি। পুরোপুরি নিশ্চিতও হতে পারছি না। একই সঙ্গে ভয় এবং আনন্দে আমি অভিভূত।
এক রাতে স্বামীকে বললাম। তিনি সরু চোখে দীর্ঘ সময় আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, পেটে বাচ্চা?
আমি চুপ করে রইলাম।
‘বয়স কত বাচ্চার?’
‘জানি না। আমি কি করে জানব? ডাক্তারের কাছে নিয়ে চলো, ডাক্তার দেখে বলুক।’
‘ডাক্তারের কাছে নিতে হবে না। বাচ্চা কখন এসেছে সেটা তুমিই জান। ঐ যে পাঁচ রাত ছিলে অন্য জায়গায়, ঘটনা তখন ঘটে গেছে।’
‘কী বলছ তুমি!’
‘এরকম চমকে উঠবে না। চমকে ওঠার খেলা আমার সাথে খেলবে না। তোমার পেটে অন্য মানুষের সন্তান।’
আমি হতভম্ব।
আমার স্বামী কুৎসিততম কথা কটি বলে বাতি নিভিয়ে শুতে এলেন এবং অন্যসব রাতের মতোই শারীরিকভাবে আমাকে গ্রহণ করলেন। ঘৃণায় আমি পাথর হয়ে গেলাম।
আমি সত্যি সত্যি মা হতে যাচ্ছি এই ব্যাপারে পুরোপুরি নিশ্চিত হবার পর আমার জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়ল। আমার স্বামীর মনে এই ধারণা বদ্ধমূল হল যে সন্তানটির পিতা তিনি নন। অন্য কেউ। মানসিক নির্যাতনের যত পদ্ধতি আছে দিনের বেলা তাঁর প্রতিটি তিনি প্রয়োগ করেন। রাতে আমাকে গ্রহণ করেন সহজ স্বাভাবিক ভঙ্গিতে। দিনের কোনো কিছুই তখন তাঁর মনে থাকে না।
আমার স্বামী আমাকে বললেন, বাচ্চাটিকে তুমি নষ্ট করে ফেলো। যদি নষ্ট করে ফেল তা হলে আমি আর কিছু মনে পুষে রাখব না। সব ভুলে যাব। সব চলবে আগের মতো। তুমি মেয়ে খারাপ না।
আমি বললাম, বাচ্চা আমি নষ্ট করব না। এই বাচ্চা তোমার।
‘চুপ থাকো। নষ্ট মেয়েছেলে!’
‘তুমি দয়া করে আমাকে বিশ্বাস করো।’
‘চুপ চুপ । চুপ বললাম – পাঁচ রাত বাইরে কাটিয়ে ঘরে ফিরেছ। রাতে কী মচ্ছব হয়েছিল আমি জানি না? ঠিকই জানি। আমি খোঁজ নিয়েছি।’
‘তুমি কোনো খোঁজ নাওনি।’
‘চুপ। চুপ বললাম।’
আমি দিনরাত কাঁদি । আমার মাও দিনরাত কাঁদেন। এক পর্যায়ে মা আমাকে বলতে বাধ্য হলেন – বাচ্চাটি নষ্ট করে ফেলাই ভাল। বাচ্চাটা তুই নষ্ট করে ফেল। সংসারে শান্তি আসুক।
আমি বললাম, আমার শান্তি দরকার নেই। অশান্তিই ভাল।
মানসিক আঘাতে আঘাতে আমি বিপর্যস্ত। একদিন ইচ্ছে করেই আমার স্বামী আমার পেটে লাথি বসালেন। এই আশায় যেন গর্ভপাত হয়ে যায়। আমি দুহাতে পেট চেপে বসে পড়তেই তিনি গভীর আগ্রহে বললেন, কী, যন্ত্রণা খালাস হয়ে গেছে? রাতে আমি ঘুমুতে পারি না। দিনে খেতে পারি না। ভয়ংকর অবস্থা। আমার পেতের বাচ্চাটির বৃদ্ধিও ব্যাহত হচ্ছে। ডাক্তার প্রতিবারই পরীক্ষা করে বলেন – বেবির গ্রোথ তো ঠিকমতো হচ্ছে না। সমস্যা কী? আরও ভালমতো খাওয়াদাওয়া করবেন। প্রচুর বিশ্রাম করবেন। দৈনিক দুগ্লাস করে দুধ খাবেন। আন্ডারওয়েট বেবি হলে সমস্যা। এই দেশে বেশির ভাগ শিশুমৃত্যু হয় আন্ডারওয়েটের জন্য।
আমার সন্তানের যখন ছমাস তখন ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটল। আমার স্বামী এক সকালে চায়ের টেবিলে শান্তমুখে ঘোষণা করলেন – আমি আজ এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছি। আপনারা আমার কথা শোনেননি। সন্তানটাকে নষ্ট করতে রাজি হননি। কাজেই আমি বিদায়। তবে আরেকটা কথা – যদি সন্তানটা মৃত হয়, মৃত হবারই কথা – তা হলে আমি আবার ফিরে আসব। অতীতে যা ঘটেছে তা মনে রাখব না। রূপা মেয়ে খারাপ না। পাকেচক্রে তার পেটে অন্য পুরুষের সন্তান এসে গেছে। আমি সেই অপরাধ ক্ষমা করে দিয়েছি। সন্তান মৃত হলে সব চলবে আগের মতো।
আমার মা কঠিন গলায় বললেন, সন্তান মৃত হওয়ার কথা তুমি বললে কেন? এই কথা কেন বললে?
‘বললাম, কারণ আমি জানি সন্তান মৃত হবে। আমি…আমি..’
‘তুমি কী?’
আমার স্বামী আরকিছু বললেন না। মা’র অনুরোধ, কান্নাকাটি, আমার কান্না – কিছুতেই কিছু হল না, তিনি চলে গেলেন। আমি অসুস্থ হয়ে পড়লাম। প্রচণ্ড জ্বর, গায়ে চাকাচাকা কী সব বেরুল, মাথায় চুল পড়ে গেল। ভয়ংকর ভয়ংকর স্বপ্ন দেখতে শুরু করলাম। সেই সময়ের সবচে’ কমন স্বপ্ন ছিল – আমি একটা ঘরে বন্দি হয়ে আছি। ঘরে কোনো আসবাবপত্র নেই। শাদা দেয়াল। হঠাৎ সেই দেয়াল ফুঁড়ে একটা কালো লম্বা হাত বের হয়ে এল। হাত না, যেন একটা সাপ। সাপের মাথা যেখানে থাকে সেখানে মাথার বদলে মানুষের আঙুলের মত আঙুল। হাতটা আমাকে পেঁচিয়ে ধরল। ঠাণ্ডা কুৎসিত তার স্পর্শ। ঘুম ভেঙ্গে যায়। দেখি সারা শরীর ঘামে চটচট করছে। বাকি রাতটা জেগে থাকার চেষ্টা করি। আবার একসময় তন্দ্রার মতো আসে। সে একই স্বপ্ন দেখি, চিৎকার করে জেগে উঠি।
বাচ্চার নমাসের সম্য ডাক্তার খুবই চিন্তিত হয়ে পড়লেন। বললেন, বাচ্চার সাইজ অত্যন্ত ছোট, মুভমেন্ট কম। আপনি হাসপাতালে ভরতি হয়ে যান। মনে হচ্ছে বাচ্চা যথেষ্ট অক্সিজেন পাচ্ছে না।
হাসপাতালে ভরতি হলাম। দুর্বল, অপুষ্ট একটি শিশুর জন্ম দিলাম। নিজেও খুব অসুস্থ হয়ে পড়লাম। বাচ্চাকে রাখা হল ইনকিউবিটরে। অসুস্থ অবস্থায় একদিন দেখি দরজায় আমার স্বামী দাঁড়িয়ে। ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে সে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি বললাম, ভেতরে আসো।
সে হিসহিস করে বলল, বিষের পুটলিটা কই? এখনও বেঁচে আছে? এখনও বেঁচে আছে কেন তা তো বুঝলাম না! তার তো মরে যাওয়া উচিত ছিল। আমি দরগায় মানত করেছি। এমন দরগা যেখানে মানত মিস হয় না।
আমি আঁতকে উঠলাম। সে ঘরে ঢুকল না, খানিকক্ষণ দরজায় দাঁড়িয়ে থেকে চলে গেল। আমি মাকে বললাম, কিছুতেই আমি হাসপাতালে থাকব না। কিছুতেই না। হাসপাতালে থাকলেই সে এসে কোনো-না কোনোভাবে বাচ্চার ক্ষতি করার চেষ্টা করবে।
মা বললেন, তোর এই অবস্থায় হাসপাতাল ছাড়া ঠিক হবে না। বাচ্চা খানিকটা সামলে নিয়েছে, কিন্তু তোর অবস্থা খুব খারাপ। বাড়িতে নিয়ে গেলে তুই মরে যাবি।
‘মরে গেলেও আমি বাড়িতেই যাব। এখানে থাকব না।’
‘ডাক্তার তোকে ছাড়বে না।’
‘ডাক্তারকে তুমি ডেকে আনো মা। আমি তাঁর পা জড়িয়ে ধরব।’
ডাক্তার আমাকে ছাড়লেন। বাচ্চা নিয়ে আমি বাসায় চলে এলাম। দারোয়ানকে বলে দিলাম দিনরাত যেন গেট বন্ধ থাকে। কাউকেই যেন ঢুকতে দেয়া না হয়। কাউকেই না।
আমার শরীর খুবই খারাপ হল। এক রাতের কথা- ঘুমুচ্ছি। মা ঘরে ঢুকে বললেন, বাচ্চাটা যেন কেমন করছে।
আমার বুক ধড়াস করে উঠল। আমি ক্ষীণস্বরে বললাম, কেমন করছে মানে কী মা?
‘মনে হচ্ছে শ্বাসকষ্ট হচ্ছে।’
‘তুমি বসে আছ কেন? তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাও।’
‘অ্যাম্বুলেন্স খবর দিয়েছি।’
‘অ্যাম্বুলেন্স আসতে দেরি করবে। তুমি বেবিট্যাক্সি করে যাও।’
এমন সময় বাচ্চা দুর্বল গলায় কেঁদে উঠল। মা ছুটে পাশের ঘরে গেলেন। পরক্ষণেই আমার ঘরে ফিরে এলেন। তাঁর মুখ সাদা। হাত-পা কাঁপছে। আমি চিৎকার করে জ্ঞান হারালাম।
জ্ঞান ফিরল চারদিন পর হাসপাতালে। আমি বললাম, আমার বাচ্চা, আমার বাচ্চা?
মা পাথরের মতো মুখ করে রইলেন। আমি আবার জ্ঞান হারালাম।
আমার বাচ্চার কবর হল আমাদের বাড়ির পেছনে। আমগাছের নিচে। ছোট্ট একটা কবর ছাড়া বাড়িতে কোনোরকম পরিবর্তন হল না। সবকিছু চলতে লাগল আগের মতো। আমার স্বামী ফিরে এলেন। আমার মাথায় হাত রেখে বললেন, এই অ্যাম সরি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তুমি শোক কাটিয়ে উঠবে। আমি তোমাকে সাহায্য করব।
আমি প্রাণপণ চেষ্টা করলাম শোক কাটিয়ে উঠতে।
প্রবল শোক একবার আসে না। দুবার করে আসে। তা-ই নাকি নিয়ম। অন্যের কথা জানি না, আমার বেলায় নিয়ম বহাল রইল। চারমাসের মাথায় মা মারা গেলেন। মা শেষের দিকে খুব চুপচাপ হয়ে গিয়েছিলেন। কারও সঙ্গে কথা বলতেন না। নিজের ঘরে দরজা-জানালা বন্ধ করে বসে থাকতেন। মৃত্যুর দুদিন আগে আমাকে কাছে ডেকে নিয়ে বললেন, আমার বিরুদ্ধে তোর কি কোনো অভিযোগ আছে?
আমি বললাম, না।
‘আমি মায়ের গায়ে হাত দিয়ে স্পষ্ট করে বললাম, তোমার বিরুদ্ধে আমার কোনো অভিযোগ নেই।
‘সত্যি!’
‘হ্যাঁ সত্যি। শুধু খানিকটা অভিমান আছে।’
‘অভিমান কেন?’
‘তোমার জামাই যেমন মনে করে – আমার ছেলের বাবা সে নয়। তুমিও তা-ই মনে কর।’
মা চমকে উঠে বললেন, এই কথা কেন বলছিস?
আমি দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বললাম, তুমি রাতদিন এত নামাজ-রোজা পড়। কিন্তু কখনো তুমি আমার ছেলের কবরের কাছে দাঁড়িয়ে একটু দোয়া পড়নি। তার থেকেই এই ধারণা হয়েছে। বিশ্বাস কর মা, আমি ভাল মেয়ে।
মা কাঁদতে কাঁদতে বললেন, ঐ কবর আমি সহ্য করতে পারি না বলে কাছে যাই না। দূর থেকে দোয়া পড়ি না। দিনরাতই আল্লাহ্‌কে ডেকে তোর ছেলের মঙ্গল কামনা করি।
মা মারা গেলেন।
যতটা কষ্ট পাব ভেবেছিলাম ততটা পেলাম না। বরং নিজেকে একটু যেন মুক্ত মনে হল। অতি সূক্ষ্ম হলেও স্বাধীনতার আনন্দ পেলাম। মনের এই বিচিত্র অবস্থার জন্যে লজ্জাও পেলাম।
মা’র মৃত্যুর মাসখানিকের মধ্যে আমার মধ্যে মস্তিষ্কবিকৃতির লক্ষণ দেখা গেল। বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি। সন্ধ্যা হয়হয় করছে। হঠাৎ শুনলাম আমার বাচ্চাটা কাঁদছে। ওঁয়াওঁয়া করে কান্না। এটা যে আমার বাচ্চার কান্না তাতে কোনও সন্দেহ রইল না। আমার সমস্ত শরীর কাঁপতে লাগল।
এরকম ঘটনা প্রায়ই ঘটতে লাগল। রাতে ঘুমুতে যাচ্ছি – বাতি নিভিয়ে মশারির ভেতর ঢুকছি – অমনি আমার সমস্ত শরীর ঝনঝন করে উঠল। আমি শুনলাম, আমার বাচ্চা গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে কাঁদছে। আমি ছুটে গেলাম কবরের কাছে। আমার স্বামী এলেন পেছন পেছন। তিনি ভীত গলায় বললেন, কী ব্যাপার? কী ব্যাপার?
আমি বললাম, কিছু না।
‘কিছু না, তা হলে দৌড়ে চিৎকার করে নিচে নেমে এলে কেন?’
‘এম্নি এসেছি। কোনও কারণ নেই।’
‘তোমার মাথাটা আসলে খারাপ হয়ে গেছে রূপা।’
‘বোধহয় হয়েছে।’
‘ভাল কোনো ডাক্তারকে দিয়ে চিকিৎসা করাও।’
‘আচ্ছা করাব। এখন তুমি আমার সামনে থেকে যাও। আমি এখানে একা একা খানিকক্ষণ বসে থাকব।’
‘কেন?’
‘আমার ইচ্ছা করছে তাই।’
‘এখন বৃষ্টি হচ্ছে। তুমি অকারণে বৃষ্টিতে ভিজবে?’
‘হ্যাঁ।’
‘একজন ভাল সাইকিয়াট্রিস্টের সঙ্গে তোমার দেখা করা দরকার।’
‘দেখা করব। এখন তুমি যাও।’
সাইকিয়াট্রিস্টের সঙ্গেও দেখা করলাম। স্বামী নিয়ে যায়নি, রূপা একাই গিয়েছে; কাউকে না জানিয়ে – একা একা। সাইকিয়াট্রিস্ট বেশ বয়স্ক মানুষ। মাথার চুল ধবধবে শাদা। হাসিখুশি মানুষ। তিনি চোখ বন্ধ করে আমার সব কথা শুনলেন। কেউ চোখ বন্ধ করে কথা শুনলে আমার ভাল লাগে না। মনে হয় কথা শুনছেন না। এঁর বেলা সেরকম মনে হল না। আমি যা বলার সব বললাম। তিনি চোখ মেলে হাসলেন। সান্ত্বনা দেয়ার হাসি। যে হাসি বলে দেয় – আপনার কিছুই হয়নি। কেন এমন করছেন?
সাইকিয়াট্রিস্ট বললেন, কফি খাবেন?
আমি বললাম, না।
‘খান, কফি খান। কফি খেতে খেতে আমার কথা বলি।’
‘বেশ, কফি দিতে বলুন।’
কফি চলে এল। তিনি বললেন, আপনার ধারণা আপনি আপনার ছেলের কান্না শুনতে পান?
‘ধারণা না। আমি সত্যি সত্যি শুনতে পাই।’
‘আপনি কান্না শুনতে পান তার মানে এই না যে আপনার ছেলের কান্না। ছোট বাচ্চাদের কান্না একরকম।’
‘আমি আমার ছেলের কান্নাই শুনতে পাই।’
‘আচ্ছা বেশ। সবসময় শুনতে পান? না মাঝে মাঝে পান?’
‘মাঝে মাঝে পাই।’
‘আগে থেকে কি বুঝতে পারেন যে এখন কান্না শুনবেন?’
‘তার মানে কী?’
‘গা শিরশির করে, কিংবা মাথা ধরে। যার পরপর কথা শোনা যায়?’
‘না, তেমন কিছু না।’
‘আপনার মা মারা গিয়েছেন – তাঁর কথা কি শুনতে পান?’
‘না।’
‘আপনার সমস্যাটা তেমন জটিল নয়। আপনার ছেলের মৃত্যুজনিত আঘাতে এটা হয়েছে। আঘাত ছিল তীব্র। এতে মস্তিষ্কের ইকুইলিব্রিয়াম খানিকটা ব্যাহত হয়েছে। আপনার কোলে আরেকটা শিশু এলে সমস্যা কেটে যাবে। আপনার যা হয়েছে টা হল জীবনের দুঃখজনক স্মৃতি মনে অবদমিত অবস্থায় আছে। আপনি চলে গেছেন Anxiety state-এ, সেখান থেকে নিউরাসথেনিয়া …’
‘আপনার কথা কিছু বুঝতে পারছি না।’
‘বোঝার দরকার নেই। এমন-কিছু করুন যেন নিজে ব্যস্ত থাকেন। ঘুমের ওষুধ দিচ্ছি। রাতে ঘুমুবার সময় খাবেন যাতে ঘুমটা ভাল হয়। যখন আবার কান্নার শব্দ শুনবেন তখন দৌড়ে কবরের কাছে যাবেন না, কারণ কান্নার শব্দ কবর থেকে আসছে না। শব্দ তৈরি হচ্ছে আপনার মস্তিষ্কে। আপনি নিজেকেই নিজে বোঝাবেন। মনেমনে বলবেন, এসব কিছু না। এসব কিছু না। বাড়িটাও ছেড়ে দিন। ঐ বাড়ি ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যান।
ডাক্তার সাহেবের ঘর থেকে বের হয়ে বেবিট্যাক্সি নিয়েছি ঠিক তখন স্পষ্ট আবার কান্নার শব্দ শুনলাম। আমার বাচ্চাটিই যে কাঁদছে এতে কোনো সন্দেহ নেই। আমি মনেমনে বললাম, আমি কিছু শুনছি না। আমি কিছু শুনছি না। তাতে লাভ হল না। সারাপথ আমি আমার বাচ্চার কান্না শুনতে শুনতে বাড়িতে এলাম।

আমার স্বামী খুব ভাল্ভাবে পাশ করলেন। ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং – এ প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান পেয়ে গেলেন। বিশ্ববিদ্যালয়েই তাঁর একটা চাকরি হল। আমরা আমাদের বাড়ি ছেড়ে কলাবাগানে দু-কামরার ছোট একটা ঘর ভাড়া নিলাম। আমি সংসারে মন দেয়ার চেষ্টা করলাম। প্রচুর কাজ এবং প্রচুর অকাজ করি। রান্নাবান্না করি। সেলাইয়ের কাজ করি। আচার বানানোর চেষ্টা করি। যে-ঘর একবার মোছা হয়েছে সেই ঘর আবার ভেজা ন্যাকড়ায় ভিজিয়ে দিই। কাজের একটা মেয়ে ছিল তাকেও ছাড়িয়ে দিলাম। কারণ একটাই, আমি যাতে ব্যস্ত থাকতে পারি।
সারাদিন ব্যস্ততায় কাটে। রাতের বেলায়ও আমার স্বামী আমাকে অনেক রাত পর্যন্ত জাগিয়ে রাখেন। শারীরিক ভালবাসার উন্মাদনা এখন আমার নেই- তবু ভান করি যেন প্রবল আনন্দে সময় কাটছে। আসলে কাটে না। হঠাৎ হঠাৎ আমি আমার বাচ্চার কান্না শুনতে পাই। আমার সমস্ত ইন্দ্রিয় অবশ হয়ে আসে।
আমার স্বামী বিরক্ত গলায় বল্লেন,কী হল? এরকম করছ কেন?
আমি নিজেকে সামলাতে চেষ্টা করি। তিনি তিক্ত গলায় বলেন, এইসব ঢং কবে বন্ধ করবে? আর তো সহ্য হয় না! মানুষের সহ্যের একটা সীমা আছে।
আমি কাঁদতে শুরু করি। তিনি কুৎসিত গলায় বললেন – বাথরুমের দরজা বন্ধ করে কাঁদো। সামনে না। খবরদার চকের সামনে কাদবে না।
ভাড়াবাসায় বেশিদিন থাকা আমার পক্ষে সম্ভব হল না। আমি প্রায় জোর করেই নিজের বাড়িতে ফিরে গেলাম। যে-বাড়িতে আমার ছোট্ট বাবার কবর আছে সেই বাড়ি ছেড়ে আমি কী করে দূরে থাকব!
নিজের বাড়িতে ফেরার পরপর আলস্য আমাকে জড়িয়ে ধরল। কোনো কাজেই মন বসে না। আমি বেশির ভাগ সময় বসে থাকি আমার বাবুর কবরের পাশে। দোতলার সিঁড়ি থেকে ক্রুদ্ধ চোখে আমাকে দেখেন আমার স্বামী। তার চোখে রাগ ছাড়াও আর যা থাকে তার নাম ঘৃণা।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *