Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » অনিল বাগচির একদিন || Humayun Ahmed

অনিল বাগচির একদিন || Humayun Ahmed

কেউ কি হাঁটছে বারান্দায়

কেউ কি হাঁটছে। বারান্দায়?

পা টিপে টিপে হাঁটছে? অনিল বাগচী শুয়েছিল, উঠে বসল। তার শরীর ঝিম ঝিম করছে, পানির পিপাসা লেগেছে। সামান্য শব্দেই তার এখন এমন হচ্ছে। শরীরের কলকজা সম্ভবত সবই নষ্ট হয়ে গেছে। মাথার ভেতরটা সারাক্ষণ ফাঁকা লাগে। তার নাক পরিষ্কার, সর্দি নেই, কিছু নেই, কিন্তু এই মুহুর্তে সে হা করে মুখ দিয়ে নিঃশ্বাস নিচ্ছে।

আবার পায়ের শব্দ। শব্দটা কি বারান্দায় হচ্ছে না। রাস্তায় হচ্ছে? অনিলের কান এখন খুব তীক্ষ্ণ। অনেক দূরের শব্দও সে এখন পরিষ্কার শুনতে পায়। হয়ত রাস্তায় কেউ হেঁটে যাচ্ছে। কিন্তু রাতের বেলা কে হাঁটবে রাস্তায়? এখনকার রাত অন্যরকম রাত। দরজা জানালা বন্ধ করে বসে থাকার রাত। রাস্তায় হেঁটে বেড়াবার রাত না।

কা-কা শব্দে কাক ডাকল। অনিল ভয়ংকর চমকে উঠল। এমন চমকে উঠার কিছু না। একটা কাক তার জানালার বাইরে বাসা বেঁধেছে। সে তো ডাকবেই, কিন্তু কা-কা করে শব্দটা ঠিক যেন তার মাথার ভেতর হয়েছে। কাকটা যেন তার মগজে পা রেখে দাঁড়িয়েছিল। কা-কা ডেকে ঠোঁট দিয়ে অনিলের মাথার মগজ খানিকটা ঠোকরে নিল। ব্যথায় শরীর পাক খাচ্ছে। চোখে পানি এসে যাচ্ছে। পিপাসায় বুক শুকিয়ে কাঠ।

এতটা ভয় নিয়ে বেঁচে থাকা কি সম্ভব? এরচে মরে যাওয়া কি অনেক সহজ না? বাড়ির ছাদে উঠে রাস্তায় লাফিয়ে পড়লে কেমন হয়? ছাদে উঠার দরজাটা কি খোলা? মেসের মালিক কামাল মিয়া ভারি ভারি সব তালা লাগিয়েছেন। সদর দরজায় ভেতর থেকে দুটা তালা লাগানো হয়। ছাদে যাবার দরজাও নিশ্চয়ই বন্ধ। সেখানেও তালা।

অনিল হাত বাড়িয়ে পানির জগ নিল। তার গ্রাস ভেঙে গেছে, জগে৷ মুখ লাগিয়ে পানি খেতে হয়। শোবার সময় সে জগ ভর্তি করে পানি এনে রাখে। কিছুক্ষণ পর পর কয়েক ঢোক করে পানি খায়। ভোরের মধ্যে পানির জগ শেষ হয়ে যায়।

ভয়। তীব্র ভয়। সারাক্ষণ ভয়ে অনিলের শরীর কাপে। সে অবশ্যি জন্ম থেকেই ভীতু ধরনের। ছোটবেলায় অন্ধকারে কখনো ঘুমুতে পারত না। বাতি জ্বলিয়ে রাখতে হত। সে সময়টা আবার ফিরে এসেছে। এখন সে অন্ধকারে ঘুমুতে পারে না। রাত এগারোটার পর বাতি নিভিয়ে দিতে হয়। সে জেগে থাকে। মাঝে মাঝে অন্ধকার অসহ্য বোধ হলে বালিশের নিচে রাখা টর্চ জ্বালায়। তীরের মতো আলোর ফলা দেয়ালের নানান জায়গায় ফেলে। ঘরের অন্ধকার তাতে কমে না। খুব সামান্য অংশই আলোকিত হয়। বাকি ঘরে আগের মতোই অন্ধকার থাকে। অন্ধকার কমে না। অনিলের ভয়ও কমে না। অনিল বালিশের নিচ থেকে দু ব্যাটারীর টর্চটা বের করল। আলো ফেলল দেয়ালে। আলো তেমন জোরালো না। ব্যাটারি কিনতে হবে। কি কি কিনতে হবে তা দিনে মনে থাকে না। রাতে শুধু মনে হয়। টর্চের ব্যাটারি, একটা পানির গ্লাস, মোমবাতি, কাগজ, লেখার কাগজ। কাল রাতে চিঠি লেখার ইচ্ছা করছিল। কাগজের অভাবে চিঠি লেখা হয় নি।

অনিল টেবিলে রাখা টেবিল ঘড়িটিতে আলো ফেলল। রাত বেশি না, কিন্তু মনে হচ্ছে নিশুতি। সে এবার আলো ফেলল দেয়ালে। আলোটা পড়ল ঠিক ক্যালেন্ডারটার উপর। ওষুধ কোম্পানির চোখে বাংলাদেশ। পালতোলা নৌকা যাচ্ছে। মাঝি হাল ধরে বসে আছে। তার মুখভর্তি হাসি। তার হাসি মনে হতে পারে নৌকার হাল ধরে বসে থাকার মধ্যেই জীবনের পরম শান্তি।

ক্যালেন্ডারে পাশেই স্বামী বিবেকানন্দের বাধানো ছবি। অনিলের বাবা এই ছবি ছেলেকে উপহার হিসেবে দিয়েছেন। ছবিটির নিচে বিবেকানন্দের। এটি বাণী লেখা। বাণীটি হচ্ছে- যে ঈশ্বর মানুষকে ইহকালে ক্ষুধার অন্ন দিতে পারেন। না। তিনি পরকালে তাদের পরম সুখে রাখবেন তা আমি বিশ্বাস করি না।

ছবির বিবেকানন্দ রাগী চোখে তাকিয়ে আছেন। ঘরের যে দিকে যাওয়া যাক মনে হবে স্বামীজী সে দিকেই তাকিয়ে আছেন। রাগ ছাড়াও তার চোখের ভাষায় এক ধরনের ভৎসনা আছে। তিনি যেন বলছেন, রে মূৰ্থি, জীবনটা নষ্ট করছিস কেন?

অনিল টর্চ লাইটের আলো নিভিয়ে ফেলল। ছবিটা সরানো দরকার। নষ্ট করে ফেলা দরকার, কিংবা লুকিয়ে ফেলা দরকার। বিবেকানন্দের ছবি ঘরে রাখা এখন ভয়াবহ ব্যাপার। ছবিটা সরাতে হবে। এখনই কি সরাবে? আবার কাক ডাকল। অনিল ভয়ে একটা ঝাকুনি খেল। অনিলের বাবা রূপেশ্বর মডেল হাই স্কুলের ইংরেজির শিক্ষক সুরেশ বাগচী, ছেলের চরিত্রে অস্বাভাবিক ভয়ের ব্যাপারটি লক্ষ্য করেই বোধহয় ছেলের খাতায় একদিন বড় বড় করে লিখে দিল–

Cowards die many times before their death.

গম্ভীর গলায় বললেন, রোজ সকালে এই লেখাটার দিকে তাকিয়ে থাকবি। ধ্যান করবি। লেখাটার মানে হল— ভীতুদের মৃত্যুর আগেও অনেকবার মৃত্যুবরণ করতে হয়। যে সে মানুষের লেখা না। শেকসপিয়ারের লেখা। দেখি শেকসপিয়ার বানান কর তো? সুরেশ বাগচীর অভ্যাসই হচ্ছে যে কোন কথা বলেই ফন্ট করে বানান জিজ্ঞেস করা। অনিল ক্লাস গ্ৰীতে যখন পড়ে তার পেটে তীব্র ব্যথা শুরু হল। সুরেশ বাবু ছেলেকে কোলে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাচ্ছেন। পথে নেমেই বললেন, ব্যথা বেশি হচ্ছে বাবা?

অনিল কাঁদতে কাঁদতে বলল, হুঁ।

খুব বেশি?

হুঁ।

আচ্ছা বাবা বল তো ব্যথার ইংরেজি কি?

অনিল চোখ মুছতে মুছতে বল, পেইন।

এই তো হয়েছে। আচ্ছা বাবা, এখন পেইন বানান করতো। কোন কিছু নিয়ে ব্যস্ত থাকলে ব্যথা কম লাগবে। বানান করতো পেইন। আচ্ছা, আমি তোমাকে সাহায্য করছি। প্ৰথম অক্ষর হল পি।

সুরেশ বাগচীর প্রাণপণ চেষ্টাতেও অনিলের ইংরেজি বিদ্যা বেশিদূর অগ্রসর হয় নি। ইংরেজিতে আই. এ. পরীক্ষায় রেফার্ড পেয়ে গেল। সুরেশ বাগচী মনের দুঃখে পুরো দিন না খেয়ে রইলেন এবং সন্ধ্যাবেলা দরজা বন্ধ করে ছোট ছেলেমেয়েদের মতো শব্দ করে কাঁদতে লাগলেন। অনিল শুকনো মুখে বারান্দায় বসে রইল। অনিলের বড় বোন অতসী বাবার ঘরের দরজায় ধাক্কা দিতে দিতে বলতে লাগল, দরজা খোল বাবা। দরজা খোল। সুরেশ বাগচী বললেন, এই কুলাঙ্গারকে বেরিয়ে যেতে বল অতসী। কুলাঙ্গারের মুখ দেখতে চাই না। অনিল ঘর থেকে বের হয়ে একা এক রূপেশ্বর নদীর ঘাটে বসে রইল।

অন্ধকার রাত। জনমানব শূন্য নদীর ঘাট। ওপারে শ্মশান, মড়া পুড়ানো হয়। কয়দিন আগেই মড়া পুড়িয়ে গেছে। ভাঙা কলসী, পোড়া কাঠ আবছা করে হলেও নজরে পড়ে। অনিলের গা ছমছম করতে লাগল। মনে হতে লাগল অশরীরী মানুষজন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকে দেখছে। নিঃশব্দে চলাফেরা করছে তাকে ঘিরে। এই তো কে যেন হাসল। শিয়াল ডাকছে। শিয়ালের ডাক এমন ভয়ংকর লাগছে কেন? অনিল ভয়ে কাপতে লাগল। সে যে দৌড়ে বাড়ি চলে যাবে সেই সাহসও রইল না।

গভীর রাতে হারিকেন হাতে সুরেশ বাগচী ছেলেকে খুঁজতে এলেন। নদীর পাড়ে এসে কোমল গলায় বললেন, অনিল বাবা, আয় বাড়ি যাই। তিনি হাত ধরে ছেলেকে নিয়ে এগুতে লাগলেন। এক সময় বিস্মিত হয়ে বললেন, এমন কাপছিস কেন?

ভয় লাগছে। বাবা।

আরো বোকা, কিসের ভয়? শেকসপিয়ার কি বলেছিলেন, কাউয়ার্ডস ডাই মেনি টাইমস বিফোর দেয়ার ডেথ। ভীতুদের মরবার আগেও অনেকবার মরতে হয়। বলতো শেকসপিয়ারের কোন বইয়ে এই লেখাটা আছে। তোকে আগে একবার বলেছি। কি, পারবি না?

ছেলেবেলার অন্ধ, তীব্র ভয় আবার ফিরে এসেছে। অনিল এখন ঘুমুতে পারে না। রাত জেগে জেগে নানান ধরনের শব্দ শুনে। আতংকে কোপে কেপে উঠে। সবচে বেশি ভয় পায় যখন কাক ডেকে উঠে। আচমকা এই কাকটা কাকা করে আত্মা কাঁপিয়ে দেয়।

পরিষ্কার চটি পায়ে হাঁটার শব্দ। কে হাঁটছে চটি পায়ে? রহিম সাহেব? রহিম সাহেবের মাঝে মাঝে গভীর রাতে হাঁটার অভ্যাস আছে। তাঁর তো আজ সকালে চলে যাবার কথা ছিল। যেতে পারেন নি? অনিল বলল, কে? কে হাঁটে?

কেউ জবাব দিল না। হুস করে একটা ট্রাক চলে গেল। কুকুর ডাকছে। ঢাকা শহরের কুকুরগুলি এখন খুব ডাকছে। মিলিটারী না-কি অনেক কুকুর মেরেছে। রাত দুপুরে কুকুরগুলি আচমকা ডেকে উঠছে- মিলিটারীরা ভয় পেয়ে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ে। কুকুর এখন মিলিটারী চিনে ফেলেছে। হঠাৎ কোন রাস্তা কুকুরশুন্য হলে বুঝতে হবে মিলিটারী সেখানে আছে। কিংবা তারা আসছে। বাঘের আগে ফেউ ডাকার মতো, মিলিটারীর আগে কুকুর ডাকে।

পায়ের শব্দটা আবার আসছে। ঠিক তার দরজার কাছে এসে শব্দ থেমে গেল। অনিল ক্ষীণ স্বরে বলল, কে? তার নিজের গলার শব্দ সে নিজেই শুনতে পেল না। তাকে ধরার জন্যে কি মিলিটারী চলে এসেছে? একটু আগে যে ট্রাকের শব্দ শোনা গেল, সেই ট্রাকে করেই কি তাকে অজানা কোন জায়গায় নিয়ে যাওয়া হবে? সে দরজা খুলবে। আর তাকে নিয়ে ট্রাকে তুলবে। এরা কি গাড়িতে তোলার সময় চোখ বেঁধে তুলে? কেন তাকে শুধু শুধু তুলবে? সে তো কিছুই করে নি। সে কোন মিছিলে যায় নি। তার ভয় লাগে। সাতই মার্চের ভাষণ শোনার জন্যে রেসকোর্সের মাঠে যাবার ইচ্ছা ছিল, তবু যায় নি। তার মন বলছিল ঝামেলা হবে। লোকজন ছোটাছুটি শুরু করবে। মরতে হবে মানুষের পায়ের নিচে চাপা পড়ে।

জন্মাষ্টমীর রথযাত্ৰা উপলক্ষে বিরাট মেলা হয় নান্দিগ্রামে। ছোটবেলায় বাবার হাত ধরে সেই মেলা সে দেখতে গেল। কি প্ৰচণ্ড ভীড়া! যাতে হারিয়ে না। যায়। সে জন্যে সে দুহাতে শক্ত করে বাবার হাত ধরে রাখল। তারপরও সে হারিয়ে গেল। লোকজনের চাপে ছিটকে কোথায় চলে গেল। মেলার সবগুলো মানুষ যেন হঠাৎ পাগল হয়ে গেল। যে যে-দিকে পারছে ছুটছে। বেদেনীর সাপের ঝুড়ি থেকে দুটা কাল সাপ না-কি বের হয়ে পড়েছে। ছোটাছুটি এই কারণে। অনিল দৌড়াচ্ছিল চোখ বন্ধ করে। হঠাৎ কে যেন তাকে তাকে ধরে ফেলল। অনিল তাকাচ্ছে কিন্তু কিছু দেখছে না। তার চোখে সব দৃশ্য এলোমেলো হয়ে গেছে। শুধু সে শুনছে। বুড়ো এক ভদ্রলোক বলছেন, এই ছেলেটা এমন করছে কেন? এ কেমন যেন নীল হয়ে যাচ্ছে। এই ছেলেটাকে বাতাস কর। ছেলেটাকে বাতাস কর।

অনিল সারাজীবন সব রকম ঝামেলা থেকে দূরে থাকতে চেয়েছে। আর আশ্চর্য! বেছে বেছে তাকেই একের পর এক ঝামেলায় পড়তে হয়েছে। রূপেশ্বরে এক পাগলি আছে— মোক্তার পাগলি। সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে পথে পথে ঘুরে বেড়ায়। তাকে মোক্তার বললেই বাঘিনীর মতো ছুটে যায়। বাচ্চ-কাচ্চারা তাকে দেখলেই ঢ়িল ছুড়ে। মোক্তার বলে চিৎকার করে ক্ষেপায়। পাগলি তাদের তাড়া করে। অনিল কোনদিন মোক্তার পাগলিকে দেখে হাসে নি। তার গায়ে ঢ়িল ছুড়ে নি কিংবা মোক্তার বলে চোঁচায় নি। তারপরেও এই পাগল শুধু তাকেই খুঁজে বেড়াত। দেখা হলেই তাড়া করত। হয়ত সে বই নিয়ে স্কুলে যাচ্ছে। বটগাছের আড়ালে থেকে মোক্তার পাগলি বের হয়ে এল। বই-খাতা ফেলে অনিল ছুটছে। পেছনে পেছনে লম্বা লম্বা পা ফেলে ছুটছে মোক্তার পাগলি। রূপেশ্বরে এটা ছিল সাধারণ ঘটনা। কেউ অনিলকে সাহায্য করার জন্যে এগিয়ে আসত না। দূরে দাঁড়িয়ে মজা দেখত। কেউ কেউ হাততালি দিয়ে চেচাত- লাগ ভেলকি লাগ।

একদিন অনিল ধরা পড়ে গেল মোক্তার পাগলির হাতে। তখন ক্লাস সেভেনে পড়ে। হাফইয়ার্লি পরীক্ষা শেষ করে বাড়ি ফিরছে। পোস্টাপিসের কাছে আসামাত্র মোক্তার পাগলি ছুটে এসে অনিলকে হাত চেপে ধরল। মেলায় যেমন হয়েছিল অনিলের সে রকম হল। মনে হল সে কিছু দেখতে পারছে না। তার হৃৎপিণ্ড লাফাচ্ছে। এক্ষুণি বোধহয় হৃৎপিণ্ড ফেটে চৌচির হয়ে যাবে। নাক দিয়ে সে নিঃশ্বাস নিতে পারছে না। হা করে নিঃশ্বাস নিচ্ছে। চারদিকে লোক জমে গেছে। সবাই মজা দেখছে। বড়ই মজাদার দৃশ্য।

মোক্তার পাগলি এক ঝটিকায় অনিলকে কোলে তুলে ফেলল। তার অনাবৃত স্তনে অনিলের মুখ চেপে বলল, খা দুধ খা। খা। কইলাম।

দর্শকরা বিপুল আনন্দে হেসে ফেলল। অনিলের নাম হয়ে গেল দুদু খাওয়া অনিল। দুটি অনিল ছিল ক্লাসে। একজন শুধু অনিল, অন্যজন দুদু খাওয়া অনিল।

অনিল ক্লাসে যাওয়া ছেড়ে দিল। স্কুলের সময় দরজা বন্ধ করে বসে থাকত। চেচিয়ে কাঁদত। অতসী বাবাকে গিয়ে বলত, থাক বাবা, আজ স্কুলে না গেল।

একদিন সুরেশ বাগচী ছেলেকে ডেকে বললেন, তোকে দুধ খাইয়েছে তো কি হয়েছে? মাতৃস্নেহে দুগ্ধপান করানোর চেষ্টায় দােষের কিছু না। মাতৃভাবে তাকে সম্মান করবি, তাহলেই হবে। আয় তোর ভয় ভাঙিয়ে দিয়ে আসি।

অনিল বলল, না।

না বলবি না। না বলা দুর্বল মানুষের লক্ষণ। আয় আমার সাথে। অতসী তোর মার একটা শাড়ি বের করে দে।

অতসী বলল, শাড়ি কি করবে?

মোক্তার পাগলিকে দেব। নগ্ন ঘুরে বেড়ায় দেখতে খারাপ লাগে।

মার শাড়ি কাউকে দিতে দিব না বাবা।

নতুন শাড়ি কেনার পয়সা নাইরে মা। দে, তোর মার একটা শাড়ি দে। মার স্মৃতি তো শাড়িতে থাকে না রে মা। মার স্মৃতি থাকে অন্তরে।

এক হাতে লাল পাড় শাড়ি নিয়ে অন্য হাতে শক্ত করে অনিলের হাত ধরে সুরেশ বাগচী নগ্ন পাগলিকে খুঁজে বের করলেন। পাগলি কঠিন চোখে তাকাল। সুরেশ বাগচী বললেন, আমার এই পুত্র আপনার ভয়ে অসম্ভব ভীত। আমি শুনেছি আপনি তাকে পুত্ৰস্নেহে দুগ্ধ পান করাবার চেষ্টা করেছেন। কাজেই সে আপনার পুত্ৰস্থানীয়। আপনি আপনার পুত্রের ভয় ভাঙিয়ে দিন।

পাগলি এইসব কঠিন কথার কি বুঝল কে জানে, তবে সে হাতে ইশারা করে অনিলকে কাছে ডাকল। অনিল ভয়াবহ আতঙ্কে বাবাকে জড়িয়ে ধরল। সুরের বাগচী বললেন, ছেলে আপনার জন্যে একটা শাড়ি এনেছে, তার মায়ের ব্যবহারী শাড়ি। আপনি গ্ৰহণ করলে আমরা খুশি হব।

পাগলি হাত বাড়িয়ে শাড়ি নিল।

সুরেশ বাগচী বললেন, পুত্রের কাছে নগ্ন অবস্থায় উপস্থিত হওয়া শোভন নয়। আপনি শাড়িটা পরে আমার ছেলের গায়ে-মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে দিন।

পাগলি বলল, দূর হ হারামজাদা।

আমি হাতজোড় করে মিনতি করছি। আপনি তাকে আর ভয় দেখাবেন। না। মা-মরা ছেলে, সে জন্ম থেকেই ভীতু। আপনি তার মাতৃস্থানীয়। আপনার ভয়ে সে স্কুলে যাওয়া ছেড়ে দিয়েছে।

পাগলি নিজের গায়ে শাড়ি মেলে ধরতে ধরতে হাসি মুখে বলল, দূর হ, দূর হ কইলাম।

আশ্চর্যের ব্যাপার! পাগলি আর কোনদিনই অনিলকে ভয় দেখায় নি। লালপেড়ে শাড়ি তাকে কখনো পরতে দেখা যায় নি। সে নগ্ন হয়েই ঘুরত। অনিলকে দেখলে থমকে দাঁড়িয়ে লাজুক গলায় বলতো, এই পুলা, মাথার চুল আচড়াও না ক্যান? একটা চিরুণি আনবা, চুল আঁচড়াইয়া দিমু। অনিল দৌড়ে পালিয়ে যেত। তার ভয় কাটে নি। শরীরের সমস্ত স্নায়ু অবশ করে দেয়া তীব্র ভয়।

দরজার কড়া নড়ে উঠল।

অনিলের হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে গেল। কেউ একজন দরজার পাশে তাহলে দাড়িয়ে ছিল? কে সে? কে? অনিলের ঘাম হচ্ছে। দম বন্ধ হয়ে আসছে।

অনিল ঘুমোচ্ছ?

গফুর সাহেবের গলা। তবু অনিল বলল, কে কে?

আমি। ভয়ের কিছু নাই। আমি। দরজা খোল।

অনিল বিছানা ছেড়ে উঠেছে। সুইচ বোর্ড খুঁজে পাচ্ছে না। সমস্ত দেয়াল হাতড়ে বেড়াচ্ছে সুইচ বোর্ডের জন্যে। তার বালিশের নিচে টর্চ লাইট। একবারও টর্চ লাইটের কথা তার মনে আসছে না। তাকে ডাকছেন। গফুর সাহেব। সর্ব দক্ষিণের সিঙ্গেল রুমে থাকেন। এজি অপিসের সিনিয়ার অ্যাসিসটেন্ট। এই বছরেই রিটায়ার করার কথা। ঢাকায় বাসা করে থাকতেন। স্ত্রী মারা যাবার পর বাসা ছেড়ে মেসে এসে উঠেছেন। একা মানুষ। বাসা ভাড়া করে এতগুলি টাকা নষ্ট করতে ইচ্ছে করে নি। প্রয়োজনও নেই। দুটি মেয়ে। দুজনেরই বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন। একজন থাকে রাজশাহীতে, একজন খুলনায়। সুইচ বোর্ড খুঁজে পাওয়া গেল। অনিল বাতি জ্বালাল, দরজা খুলল। গফুর সাহেব বললেন, ঘুম আসছিল না, এ জন্যেই ডাকলাম। অন্য কিছু না।

এতক্ষণ ধরে আপনিই কি হাঁটাহাঁটি করছিলেন?

হুঁ। বৃষ্টি হবে বলে মনে হচ্ছে। আকাশে খুব মেঘ। তুমি কি চা খাবে অনিল? রাতে ঘুম ভালো হয় না। একটু পরে পরে চা খাই। খাবে?

না।

আস না, একটু চা খাও। সময় খারাপ। কথা-টথা বললে ভালো লাগে। গফুর সাহেব কথাগুলি বলার সময় একবারও অনিলের দিকে তাকালেন। না। অন্যদিকে তাকিয়ে কথা বললেন। কারণ তিনি অনিলের দিকে সরাসরি তাকাতে পারছেন না। আজ দুপুরে একটা ছেলে অনিলের একটা চিঠি দিয়ে গেছে তার হাতে। চিঠিটা অনিলকে পৌঁছানোর দায়িত্ব তাঁর। সেই খোলা চিঠি তিনি কয়েকবার পড়েছেন। ভয়ংকর দুঃসংবাদের এই চিঠি তিনি অনিলকে দেয়ার মতো মনের জোর সংগ্রহ করতে পারেন নি। রূপেশ্বর স্কুলের হেড মাস্টার মনোয়ার উদ্দিন খাঁ লিখেছেন

বাবা অনিল,
তোমাকে একটি দুঃখের সংবাদ জানাইতেছি। এপ্রিল মাসের নয় তারিখে রূপেশ্বরে পাক মিলিটারী উপস্থিত হয়। তাঁহাদের আকস্মিক আগমনের জন্যে আমরা কেহই প্ৰস্তৃত ছিলাম না। তাহারা রূপেশ্বরে অবস্থান নেয়। এপ্রিল মাসের বার তারিখে আরো অনেকের সঙ্গে তাহারা তোমার বাবাকে হত্যা করে। আমরা তাহাকে বাচানোর সর্বরকম চেষ্টা করিয়াছি। এর বেশি। আমি আর কি বলিব? তোমার ভগ্নিকে আমি আমার বাড়িতে আনিয়া রাখিয়াছি। তাহার বিষয়ে তুমি চিন্তা করিবে না। আল্লাহ পাকের নামে শপথ নিয়া বলিতেছি, আমার জীবন থাকিতে আমি অতসী মায়ের কোন অনিষ্ট হইতে দিব না। তোমার পিতার মৃত্যুতে রূপেশ্বরের প্রতিটি মানুষ চোখের জল ফেলিয়াছে। এই কথা তোমাকে জানাইলাম। জানি না ইহাতে তুমি মনে কোন শান্তি পাইবে কি-না। আল্লাহ পাক তাঁহার আত্মার শান্তি দিন, এই প্রার্থনা করি। তুমি সাবধানে থাকিবে। ভুলেও রূপেশ্বরে আসিবার কথা চিন্তা করিবে না। একদল মুক্তিযোদ্ধা রূপেশ্বর থানা আক্রমণ করিবার চেষ্টা করায় ভয়াবহ ফল হইয়াছে। রূপেশ্বরে বর্তমানে কোন যুবক ছেলে নাই।…

গফুর সাহেব ভেবেছিলেন রাতে চিঠিটা দেবেন। এখন অনিলের দিকে তাকিয়ে মনে হচ্ছে চিঠি না দেয়াই ভালো। ছেলেটা ভয়ে অস্থির হয়ে আছে। এই খবর পেলে কি করবে। কে জানে।

অনিল।

জ্বি।

আসি আমার ঘরে আস, চা খাও।

অনিল উঠে এল। গফুর সাহেব কেরোসিনের চুলায় কেতলি বসিয়ে দিলেন। দুজন মেঝেতে মুখোমুখি বসে আছে। কারো মুখেই কোন কথা নেই। অস্বস্তি কাটাবার জন্যে গফুর সাহেব বললেন, আজকের পূর্বদেশটা পড়েছ?

অনিল বলল, না। আমি এখন খবরের কাগজ পড়ি না। পড়তে ইচ্ছা করে না।

আমারো পড়তে ইচ্ছা করে না। অভ্যাসের বসে পড়ি। তবে আজকের পূৰ্বদেশটা তোমার পড়া উচিত। নাও, এই জায়গাটা পড়। মন দিয়ে পড়।

অনিল পড়ল।

পাকিস্তানের আজাদী দিবস উপলক্ষে গোলাম আযমের আহবান। আযাদী দিবস উপলক্ষে কেন্দ্রীয় শান্তিকমিটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কার্জন এক বিশাল সভার আয়োজন করে। সেই সভায় জনাব আযম পাকিস্তানের দুশমনদের মহল্লায় মহল্লায়। তন্ন তন্ন করে খুঁজে তাদের অস্তিত্ব বিলোপ করার জন্য দেশপ্রেমিক নাগরিকদের শান্তি কমিটির সঙ্গে সহযোগিতা করার জন্য উদাত্ত আহবান জানান।

পড়েছ অনিল?

জি।

তোমার খুব সাবধানে থাকা দরকার। মেসে থাকাটা একেবারেই উচিত না। মিলিটারীর তিনটা টার্গেট— আওয়ামী লীগ, হিন্দু, যুবক ছেলে। তারপর আবার শুনলাম মেসে কারা কারা তাদের নাম-ধাম পরিচয় জানতে চেয়ে চিঠি এসেছে। কামাল মিয়া বলল।

কে চিঠি দিয়েছে?

স্থানীয় শান্তি রক্ষা কমিটির এক লোক- এস এম সোলায়মান। মজার ব্যাপার কি জান— আগে এই লোক ঘোর আওয়ামী লীগারে ছিল। শেখ সাহেবের ভাষণ ক্যাসেট করে নিয়ে এসেছিল। মাইক বাজিয়ে মহল্লায় শুনিয়েছে। এখন সে বিরাট পাকিস্তানপন্থি। মানুষের চরিত্র বোঝা খুব কঠিন। তবে আমি তাকে ঠিক দোষও দিচ্ছি না। সে হয়ত যা করছে প্ৰাণ বাচানোর জন্যে করছে। এসব না করলে আওয়ামী লীগার হিসেবে তাকে মেরে ফেলত। ঠিক না?

অনিল কিছু বলল না। চায়ের কাপ হাতে নিয়ে নিঃশব্দে চুমুক দিতে লাগল। চা-টা খেতে ভালো লাগছে। বেশ ভালো লাগছে।

চায়ের সঙ্গে আর কিছু খাবে? চানাচুর আছে। দেব চানাচুর? টেনশনের সময় খুব ক্ষিধা পায়।

অনিল বলল, আমি আর কিছু খাব না। চা থাকলে আরেকটু নেব।

গফুর সাহেব। আবার কাপ। ভর্তি করে দিলেন। নিচু গলায় বললেন, তুমি বরং মেসটা ছেড়ে দাও।

মেস ছেড়ে যাব কোথায়? ঢাকা শহরে আমার পরিচিত কেউ নেই। ফতুল্লায় এক মামা থাকতেন। এখন আছেন কি-না তাও জানি না।

গফুর সাহেব হঠাৎ অপ্রাসঙ্গিকভাবেই জিজ্ঞেস করলেন, তোমার বাবার শেষ চিঠি কবে পেয়েছ?

কেন জিজ্ঞেস করছেন?

এম্নি জানতে চাচ্ছি। কোন কারণ নেই।

বাবার শেষ চিঠি পেয়েছি। চার মাস আগে। এখন কেমন আছেন কিছুই জানি না। আমি বেশ কয়েকটা চিঠি দিয়েছি। জবাব পাচ্ছি না।

গফুর সাহেব বলরেন, যাও শুয়ে পড়। রাত অনেক হয়েছে।

অনিল নিজের ঘরে চলে এল। বাতি নিভিয়ে বিছানায় যাওয়ামাত্র বৃষ্টি শুরু হল। ঝুম বৃষ্টি।

জানালা খুলে একটু বৃষ্টি দেখলে কেমন হয়? কত দিন জানালা খুলে ঘুমানো হয় না। আহা কেমন না জানি লাগে জানালা খোলা রেখে ঘুমুতে। দেশ স্বাধীন যদি সত্যি সত্যি হয় তাহলে সে কয়েক রাত রাস্তার পাশে পাটি পেতে ঘুমুবে। সে রাতগুলোতে ঘুম আসবে না। সে রাতগুলো কাটাবে রাস্তায় হেঁটে হেঁটে।

ভাল বৃষ্টি হচ্ছে তো। ঝড় বৃষ্টির সময় মিলিটারীরা রাস্তায় থাকে না। এরা বৃষ্টি ভয় করে। হোক বৃষ্টি। দেশ ভাসিয়ে নিয়ে যাক। পদ্মা-মেঘনা-যমুনায় বান ডাকুক। শো শো শব্দে ছুটে আসুক জলরাশি।

টকটক শব্দে টিকটিকি ডাকছে। এই ঘরে চারটা টিকটিকি আছে। একটার গা ধবল। কুষ্ঠের রুগীর মতো সাদা। একটা মাকড়সা আছে। সে সম্ভবত আয়নার পেছনে থাকে। ঠিক রাত আটটায় পেছন থেকে এসে আয়নার উপর বসে থাকে। এমন নিখুঁত সময়ে ব্যাপারটা ঘটে যে মনে হয় মাকড়সাটার নিজের কাছেও কোন ঘড়ি আছে। সম্ভবত টিকটিকিগুলো তাকে খেয়ে ফেলেছে। সারভাইভাল অব দি ফিটেষ্ট। যে ফিট সে টিকে থাকবে।

বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। নীল আলোয় ঘর ভেসে গিয়ে আবার সব অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে। অল্প বৃষ্টি হলেই মেসের সামনের রাস্তাটায় এক হাঁটু পানি হয়। সারারাত বৃষ্টি হোক, রাস্তায় এক কোমর পানি জমে যাক। পানি ভেঙে মিলিটারী জীপ আসবে না। ওরা শুকনো দেশের মানুষ। পানিতে ওদের খুব ভয়।

ঝড় হচ্ছে না-কি? জানালায় শব্দ হচ্ছে। কাকটা তারস্বরে চেচাচ্ছে। সাধারণত একটা কাক ডাকলে দশটা কাক এসে উপস্থিত হয়। কিন্তু এই কাকটা নিঃসঙ্গ, বন্ধুহীন। এর ডাকে কখনো কাউকে সাড়া দিতে অনিল শুনে নি। সে থাকেও একা একা। তার পুরুষ বন্ধুও তাকে ছেড়ে গেছে। সে কি দরজা খুলে কাকটাকে ভেতরে আসতে বলবো?

ঘুমে অনিলের চোখ জড়িয়ে আসছে। সারাদিন অসহ্য গরম ছিল। এখন পৃথিবী শীতল হয়েছে। বৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে ভয় কেটে যাচ্ছে। বার বার মনে হচ্ছে- এমন দুর্যোগে মিলিটারী পথে নামবে না। অন্তত আজকের রাতটা মানুষের শান্তিতে কাটবে। অনিল ঘুমিয়ে পড়ল। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে চমৎকার স্বপ্ন দেখল। অনিল যেন খুব ছোট। তারা নৌকায় করে মামার বাড়ি যাচ্ছে। রূপবতী একজন তরুণীর কোলে সে বসে আছে। তার খুব লজ্জা লাগছে। অনিলের বাবা বললেন, ছেলে দেখি লজ্জায় মারা যাচ্ছে। আরো বোকা, এটা তোর মা। মার কোলে বসায় আবার লজ্জা কি? রূপবতী তরুণীটি বলছে- আহা ও কি আমাকে চিনে। লজা তো পাবেই। এটাই তো স্বাভাবিক। রূপবতী তরুণীর মুখ তখন খানিকটা মোক্তার পাগলির মতো হয়ে গেল। এবং সে বলতে লাগল— চিরণিটা কই? দেখি অতসী চিরণিটা দে তো। আমি বাবুর চুল আঁচড়ে দেই। অতসী খিলখিল করে হাসতে হাসতে বলল, ওকে বাবু ডাকছ কেন? ওর নাম আনিল। তখন কোথেকে যেন কাক ডাকতে লাগল- কা-কা-কা।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9
Pages ( 1 of 9 ): 1 23 ... 9পরবর্তী »

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *