অথ দেড় ইঞ্চি কথা
প্রায় তিন মাস হতে চলল আমার পালিতা কন্যার কোন খোঁজ নেই । সে বাড়ি ছেড়ে যে কোন দেশে , কার বাড়িতে থাকছে তা আমার জানা নেই । সে যখন শেষ বার আমার সঙ্গে দেখা করেছিল তখন ছিল পূর্ণ যুবতী । আয়তনে , মানে আড়ে- বহরে যথেষ্টই বড় হয়ে উঠেছিল । মোটামুটি ইঞ্চি তিন সাইজ হয়ে গিয়েছিল । মাস তিনেক আগে এক রাত্রিতে এল আমার কাছে , আমি তখন খেতে বসেছিলাম , ওর বরাদ্দ করা খাবারও প্রস্তুত ছিল । সে খেল না । শুধু চোখ পিট পিট করে আমাকে দেখে গেল । মনে হল কিছু বলতে চায় । আমি বলেছিলাম- ” আগে খেয়ে নে তারপর তোর কথা শুনব। বেটি খেল না । কিছুক্ষণ চুপ করে বসে ঘরের চারপাশে দেখতে লাগল । ও হ্যাঁ মনে পরেছে একবার লাঙ্গুল নাচিয়েছিল । আমি একমনে খেয়ে যাচ্ছিলাম । হটাৎই এক লাফ দিয়ে ওখান থেকে চলে গেল । আরও একটু বাদে তেনাকে আবিষ্কার করি বই-এর তাকে । বললাম- ” ওখানে তোর কাজ কি ? আমার সঙ্গে না তোর চুক্তি আছে তুই আমাকে জ্বালাবি না ? চলে আয় খেয়ে নে ” । বাধ্য মেয়ের মত তাক থেকে নেবে গেল কিন্ত খেতে এল না । আমিও রাগ করে বললাম- ” যা তোকে আসতে হবে না ” । কোন উত্তর পেলাম না । হটাৎই একটা ” চিক্ ” আওয়াজ পেয়ে দেখি সে চৌকাঠে আর তারপরই ছুটে ঘরের বাইরে চলে গেল । সে রাতে আর এল না । পরের রাতেও না । আমি রোজ ওর জন্য খাবার রাখি । যে আসেই না সেই খাবার খাবে কে ? পরের দিন সকালে ঐ খাবার যেত কাক- পায়রা- ধেরে ইঁদুর- ছুঁচো এদের পেটে । দিন যায়- মাস যায় ওনার পাত্তাই নেই । আমিও ধীরে ধীরে ওর কথা ভুলতে বসেছি । এমন সময় এই গত রবিবার রাতে , তখন প্রায় দু ‘ টো হতে চলেছে ” চিক ” আওয়াজ শুনে চমকে গেলাম । দেখি দেড় ইঞ্চি, বেশ নাদুসনুদুস চেহারা নিয়ে দরজার বাইরে । খুব আনন্দ হ’ল । কিন্ত ঘরে যে ওর খাবার নেই । তাড়াতাড়ি বিস্কুটের কৌটা খুলে হাতে নিয়ে বললাম- “আয় আয় ” । আবার ডেকে উঠল । তখনই নজরে এল ওনার পাশে ওনার ছানা । সাইজ মেরেকেটে এক ইঞ্চির মতন হবে । চৌকাঠ টপকে সে আসতে পারছে না ঘরের ভেতর । বুঝলাম উনি কেন পালিয়েছিলেন । পুরো ” লাভ স্টোরি ” কেস । তা বাপু সোমত্ত হয়েছিস, মনে পুলক জেগেছিল, হতেই পারে । তা বলে বাপকে বলবি না ? মনে মনে বললাম- বেহায়া- বেশরম । যাই হোক ছানাটাকে দেখে আমার ভালই লাগল । আমি বিস্কুট টা ওর কাছে রাখতে গেলাম । দুজনেই দৌড় দিল । বেশ কিছুক্ষণ পরে দেখি মা- বেটি, ব্যাটা ও হতে পারে বেশ আয়েশ করে ভাগাভাগি করে খাচ্ছে । খাওয়া শেষ, ফের কেটে পড়ল । আমি একটু অপেক্ষার পর শুয়ে পড়লাম । পরের দিন সকাল থেকেই দেখি ছানাটা সারা ঘর দাপিয়ে বেড়াচ্ছে । কি করে যে ঘরে ঢুকল তা ওরাই জানে আর ভগা দা জানে । এরপর শুরু করেছে যাচ্ছেতাই কান্ড । আমার কথা কানে নিচ্ছে না । উৎপাত আর উৎপাত । গতকাল রাতে একটা অদ্ভুত আওয়াজ শুনে ঘুম ভেঙে গেল । দেখি, পেরেকে ঝোলান পলি ব্যাগ যাতে বিস্কুট আছে তাই ধরে ঝুলছেন । টর্চের আলো পেয়েই এক লাফ- – মনে হল অলিম্পিকে গেলে লং জাম্পে গোল্ড মেডেল পেতই পেত । মেঝেতে রাখা প্লেট টা ফাঁকা, মানে খাবার টা খেয়েছেন । তারপরও এই উৎপাত — নাহ্ আর মানা যাচ্ছে না । ও আমার বেটি দেড় ইঞ্চির আর পাত্তাই নেই ঐ যে এসেছিল, ব্যস । বুঝলাম ছানা টাকে আমার ঘাড়ে দিয়ে উনি ফের হনিমুনে গেছেন । কয়েক দিন হ’ল রাতের ঘুম উধাও । ভাবছি কালই একটা ইঁদুর ধরা কল কিনে আনব । তোমরা কি বল ?