অঞ্জলি
আবাসনের পুজো অন্যবারের মতো জমকালো না হলেও ছোটদের উৎসাহে কোনো খামতি নেই। আবাসনবাসীদের সাথে সিকিউরিটির দায়িত্বে থাকা লোকদের পরিবারেরাও যোগ দেয় এই আনন্দ উৎসবে।
সিকিউরিটিতে আছে হরিপদ মন্ডল, নাজমুল আলি, টমাস তিরকে। তিনজন তিন ভিন্ন ধর্মাবলম্বী হলেও এক পরিবারের উৎসবে অন্য পরিবারের অংশগ্রহণ দেখার মতো। হরিপদের এক কন্যা- তিথি। নাজমুলের দুই সন্তান – বড় সন্তান ফাতেমা দশ বছরের, পুত্র রহিম পাঁচ বছরের। রহিম ও তিথি সমবয়সী। টমাসের পুত্র সবেমাত্র এক বছর পেরোলো। নাজমুলের পত্নী রোকিয়া হরিপদকে ধর্মভাই পেতেছে। বছর দুই আগে হরিপদের এপেন্ডিসাইটিস অপারেশনে রক্তের প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। কারো সাথে রক্তের ব্লাডগ্রুপ মিলছিলো না। শেষ মুহূর্তে রোকিয়ার রক্তের গ্রুপ মিলে গেলো। তারপর থেকে হরিপদমামা বলতে রহিম অজ্ঞান।
এবারও অন্যথা হয়নি। অন্যবারের মতো হরিপদ পুজোতে রহিমের প্রিয় লাল রঙের শার্ট-প্যান্ট এনে দিয়েছে। অষ্টমীর সকালে নতুন ড্রেস পরে রহিম বেরিয়ে পড়েছে সব বন্ধুদের সাথে। ঢাকের বাজনায় সারা আবাসন জমে উঠেছে।
ঘন্টাখানেক যেতেই রহিম কাঁদতে কাঁদতে ফিরে এলো ওদের জন্য তৈরী করা টিনের ঘরে। হরিপদের স্ত্রী শ্যামলী ঘর থেকে বেরিয়ে এসে রহিমকে কোলে তোলে নিলো।
‘কি হয়েছে বাবু? কাঁদছো কেনো? কেউ মেরেছে’।
‘জানো মামী, অঞ্জলি শুরু হয়ে গেছে। সবাই মণ্ডপে উঠছিলো। আমাকে এসে একজন বললো, তু্ই না মুসলমান, তু্ই ঘরে চলে যা। মামী, মুসলমান কি? আমিও তো দুগ্গা ঠাকুরকে সবার সাথে পেন্নাম করলুম। তাহলে ওরা আমাকে কেন তাড়িয়ে দিলো।’
শ্যামলীর চোখে জল এসে গেলো। রহিমকে বুকে জড়িয়ে ধরলো। মনে মনে বললো, মানুষ আজও ভগবান চিনতে পারলো না।