Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

সেই অপূর্ব বৃষ্টিস্নাত রাতে

সেই অপূর্ব বৃষ্টিস্নাত রাতে যে ভয় করবার মতু কিছু-একটা লুকিয়ে ছিল তা আমি বুঝতে পারি নি। সফুব খালা শীতে কঁপিছিলেন, তার মুখ দেখা যাচ্ছিল না, তবু শুধুমাত্র তার কথা শুনেই ধারণা হল, কোথাও নিশ্চযই ভয় লুকিয়ে আছে।

সফুরা খালা কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে দ্রুত চলে গেলেন যেন কোন হিংস্র জন্তু তাকে তাড়া কবছে। মাতালের মত বেসামাল পদক্ষেপ। আমি এসে গুয়ে পড়লাম।

ঘুম ভাঙল অনেক বেলায়। মেঘ কেটে গেছে, রোদ উঠছে ঝকঝকে। জানোলা দিয়ে বাইরে তাকালেই মনের সব গ্লানি কেটে যায়। আরো কিছুক্ষণ শুয়ে থাকব কি-না ভাবছি, তখন নবুমামা এসে ডাকলেন, আয়, মাছ ধরতে যাই। নতুন পানিতে মেলা মাছ এসেছে।

ছিপ, কানিজাল ইত্যাদি সরঞ্জাম নিয়ে নৌকা করে চললাম দুজনে হলদাপোতা। কিন্তু নবুমামার মাছ মারার মন ছিল না। অপ্রাসঙ্গিক নানা কথা বলতে লাগল। দুপুর পর্যন্ত আমরা ইতস্তত ঘুরে বেড়ালাম। নবুমামার ভাবভঙ্গি আমার কাছে কেমন কেমন লাগল। তিনি যেন বিশেষ কোন কারণে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। বিয়ের কথা বললে কিশোরী মেয়েরা যেমন পালিয়ে গিয়ে লজ্জায় লাল হয অনেকটা সে বকম। নবুমামা বললেন, রঞ্জু, আমি আর পড়াশুনা করব না।

কেন?

ভাল লাগে না।

কি করবেন তবে?

ব্যবসা করব। দেশে দেশে ঘুরে বেড়াব।

নানাজান মানবে না।

আমি কারো ধার ধারি না-কি?

বলতে বলতে নবুমামা ঈষৎ হাসলেন। দুপুরে খাওয়ার জন্যে চিড়া আর নারিকেল আনা হয়েছিল। তা-ই খাওয়া হল। হালদাপোতা থেকে আমরা আরো উত্তরে সরে গেলাম।

আমার আর ভাল লাগছিল না, রোদে গা তেতে উঠেছে। ইচ্ছে হচ্ছে ফিরে যাই কিন্তু নবুমামা বার বার বলছেন, একটা বড় মাছ ধরি আগে।

সন্ধার আগে আগে প্রকাণ্ড একটা কাতলা মাছ ধরা পড়ল। সুগঠিত দেহে কালচে আঁশ বেলাশেষের রোদে ঝকমক করছে। নৌকার পাটাতনে মাছটা ধড়ফড় করতে লাগল। দুজনেই মহাখুশি। নবুমামা খুব যত্নে বড়শি খুলে নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে হাসল। আমি বললাম, চলুন ফিরে চলি।

চল।

ভাটার টানে নৌকা ভেসে চলেছে। হঠাৎ করে নবুমামার ভাবান্তর হল। আমার দিকে তাকিয়ে নিচু গলায় বললেন, মাছটা ছেড়ে দেই রঞ্জু?

কেন মামা!

না, ছেড়ে দি।

বলেই মাছটা জলে ফেললেন। আমি চুপ করে রইলাম। নবুমামা বললেন, একবার আমি একটা পাখি ধরেছিলাম। টিয়া পাখি। তারপর কি মনে করে ছেড়ে দিয়েছি। আমার খুব লাভ হয়েছিল।

কি লাভ?

হয়েছিল। আজকে মাছটা ছেড়ে দিলাম! দেখিস, মাছটা দোয়া করবে আমার জন্যে।

নবুমামা পাটাতনে শুয়ে উদাস দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন।

বাড়ি এসে হুলস্কুল কাণ্ড। লালমামির সঙ্গে প্রচণ্ড ঝগড়া হয়েছে সফুরা খালার। লালমামি টেনে সফুরা খালার একগোছা চুল তুলে ফেলেছেন, গাল আঁচড়ে দিয়েছেন। সফুরা খালা বিষম দৃষ্টিতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। লালমামি তার দরজা বন্ধ করে রেখেছেন। কারে সঙ্গে কথাবার্তা নেই। বাদশা মামা আধময়লা একটা পাঞ্জাবি গায়ে দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। মাঝে মাঝে বলছেন, সবাই যদি এলাচির সঙ্গে ঝগড়া করে তাহলে বেচারি কি কববে? কেউ দেখতে পারে না। ছোট নানীজান শুনে শুনে বিরক্ত হয়ে পড়েছেন। এবার ধমকে দিলেন, যা তুই, খামাখা ঘ্যান ঘ্যান। ভাল্লাগে না।

বাদশা মামা উঠানে গিয়ে বসে রইলেন। বোকাব মত তাকাতে লাগলেন। এদিক-সেদিক। নবুমামাকে দেখে বললেন, দেখলি নবু? সফুরা কি ঝগড়া করল। এলাচির সারাদিন খাওয়া নাই।

রাতের খাওয়া শেষ হতে অনেক রাত হল। রান্না হতে দেরি হয়েছে। সংসার যাত্রা কিছু পরিমাণে বিপর্যস্ত। খাওয়া-দাওয়া সেরে ঘুমুতে এসে দেখি, সফুরা খালা বসে আছেন আমাদের ঘরে। সফুরা খালা বললেন, তোমাদের জন্যে বাইরের বাংলাঘরে বিছানা হয়েছে। এ ঘরে আমি থাকব। তাকিয়ে দেখি পরিপাটি করে ঘর সাজানো। আমার আর নবুমামার ব্যবহারিক জিনিসপত্র কিছুই নেই। নবুমামা বললেন, তুই থাকবি কেন এখানে? তোর নিজের ঘর কি হল?

আমার ঘরে পানি পড়ে, বিছানা ভিজে যায়।

নবুমামা কিছুক্ষণ উদ্ধত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন। তারপর হন হন করে ঘর ছেড়ে চলে গেলেন। সফুরা খালা বললেন, রঞ্জু, তুমি নবুকে চোখে চোখে রাখবে।

সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে বাদশা মামার সঙ্গে দেখা। বাদশা মামা বললেন, রঞ্জু, এলাচি ভাত খেয়েছে কিনা জানিস?

জানি না।

মোহরের মা বলল, খেয়েছে। তুই একটু খোঁজ নিয়ে আয়।

আপনি নিজে যান না মামা।

আচ্ছা, আচ্ছা আমি নিজেই যাই।

লালমামি সেদিন না খেয়ে ছিলেন। রাতেও খেলেন না, দুপুরেও ভাত নিয়ে গিয়ে মোহরের মা ফিরে এল। সফুরা খালা অনেক অনুনয়-বিনয় করলেন। কিছু লাভ হল না। শেষ পর্যন্ত নানাজান আসলেন। বিরক্ত ও দুঃখিত কণ্ঠে বললেন, এ সব কি বউ?

লালমামি কথা বললেন না। নানাজান বললেন,

খাও খাও, ভাত খাও।

না, খাব না।

সমস্ত দিন কেটে গেল। সফুরা খালা কাঁদতে লাগলেন। কি বিশ্ৰী অবস্থা! বাদশা মামা নৌকা করে গিয়েছে শ্ৰীপুরে। লালমামির মাকে সঙ্গে করে নিয়ে আসবেন একেবারে।

কানাবিবি বার বার বলে, বউ-এর কোনো খারাপ বাতাস লেগেছে, না হলে এমন হয়। মুকন্দ ওঝাকে খবর দেও না একবার।

লালমামির মা খবর পেয়েই এসে পড়লেন। লালমামি বলল, না আমি কিছুতেই খাব না। এ বাড়িতে কিছু খাব না। আমি। নানাজান বললেন, আচ্ছা, মেয়েকে না হয় নিয়েই যান। কদিন থেকে সুস্থ হয়ে আসুক।

ধরাধরি করে লালমামিকে নৌকায় তোলা হল। নৌকার পাটাতনে বাদশা মামা তার সুটকেস নিয়ে আগে থেকেই বসে আছেন। লালমামি বাদশা মামাকে দেখেই জ্বলে উঠলেন।

ও গেলে আমি যাব না। আল্লাহর কসম আমি যাব না।

বাদশা মামা চুপচাপ নেমে পড়ে দাঁড়িয়ে বোকার মত সবার দিকে তাকিয়ে হাসতে লাগলেন। যেন কিছুই হয়নি। তার কাণ্ড দেখে আমার চোখে পানি এসে গেল।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress