অঙ্কুরোদগম
সবে চালের বস্তাটা সাইকেলের ক্যারিয়ারে বাঁধছিল রমজান অমনি মোবাইলে রিং বেজেই চলেছে! ‘ধুর বাবা কে যে করছে ‘কথাটা মুখ ফসকে বেরুলেও যেই শুনেছে রতুয়া থানার ফোন, ভয়ে একদম চুপসে গেছে। ফোনের ও প্রান্তে বেশ গম্ভীর গলায় পুলিশের প্রশ্ন “আপনার ছেলের নাম কি মুন্না? ক্লাস থ্রিতে পড়ে তাইতো?”-হ্যাঁ, কিন্তু ওর কথা কেন উঠছে স্যর”- বলতেই প্রশ্নবাণ -“কোথায় এখন আপনার ছেলে, কেমন বাবা আপনি যে নিজের ছেলের খেয়াল রাখেন না?” রমজানের তো ভয় হয়ে গেছে তার একরত্তি ছেলে,সে ভাবুক হয়ে খাতায় আঁকি বুঁকি কাটে,কত কি যে বকবক আর খেলা ধুলায় মত্ত তার খবর পুলিশ কেন নিচ্ছে!!
“এই যে মশাই শুনুন আপনার ছেলে আজ একা চেন্নাইগামী ট্রেনে চেপে পড়েছিল।রেল পুলিশের সন্দেহ হাওয়ায় নামিয়ে স্থানীয় থানায় পাঠিয়ে দেয়!” কথাটা শুনে হাত-পা কাঁপছে রমজানের। বাড়িতে আর কোনো ফোন নেই যে বাড়িতে জানবে কিন্তু এটা সত্যি হলে বউকে কি জবাব দেবে! জলদি সাইকেল থেকে ভারী বস্তা নামালো রমজান।মাথার মধ্যে হাজার চিন্তার আ ছড়ে পড়া স্রোতে গ্রামের ভাঙাচোরা রাস্তা দিয়ে যতটা সম্ভব জোরে সাইকেল চালিয়ে হাজির হলো সে থানায়।
টানা ফ্যাক্টরিতে কাজ হচ্ছে তবু বেতন মিলছে না রমজানের! অভাবের সংসারে নিত্য খিটিমিটি আরো বেড়েছে!বাড়িতে চাল শেষ আজ কিনতে গেছিল।ইদানিং বউ আয়েশার মেজাজ সপ্তমে চড়ে থাকে! “শুধু নেই নেই,চালিয়ে নাও, পারবো না শুনে শুনে কান ঝালাপালা!-বলি পারবে না তো বিয়ে করেছিলে কেন?মুরোদ নেই তো কেন আমার জীবন নষ্ট করেছো”-ছোট্ট মুন্না হাঁ করে শোনে মায়ের হতাশা,চিৎকার আর ভয়ে কাঁটা হয়ে খাটের তলায় নিজেকে লুকায়। সংসারে এ প্রতিদিনের খিটিমিটি ঝগড়া।মুন্না শোনে আব্বুকে মা বলে,”এখানে না পচে চেন্নাই কেন যাও না, আমার দাদারা ওখানে খাটে,বাড়িতে মোটা টাকাও পাঠায়। নইলে এ সংসারে আমি আর নেই,এবার মুক্তি চাই”।
শিশুমনে কথা গুলো তোলপাড় করেছিল মুন্নার।রাতের মধ্যে স্বপ্নে আঁতকে উঠে মা কে জড়িয়ে কি কান্না ছেলের!”না মা তুমি আমায়,আব্বুকে ছেড়ে কোথায় যাবে না,যাবে না”- ছেলেকে ধরে ভোর রাতে কেঁদে ওঠে আয়েষা,রাগের মাথায় বলা কথা গুলো মুন্নার মনে বেশ চাপ দিয়েছে বুঝতে পারে।না রে বাবু কোথাও যাবো না, তোকে বড় হতেই হবে,পড়াশোনা করে চাকরি তবে আমাদের শান্তি। সকালে ঘুম ভেঙে উঠে সবই অবশ্য ভুলে গেছিলো মুন্না তবু স্বামী স্ত্রী উভয়ের মনে দাগ কেটে যায় বাচ্চার আচরন।ছোট হলে কি হবে ভীষন আবেগ প্রবন এই বয়সেই মুন্না।
থানার পথে কথা গুলো খুব মনে পড়ছিল রমজানের কিন্তু ওইটুকু ছেলে একা কিনা ট্রেনে!! ভাবতেই পারছে না ! বাবাকে থানায় দেখেই মুন্না ভয়ে জড়োসড়ো। “না না কেউ তোমার মারবে না ।তুমি কেন ট্রেনে চাপলে, কোথায় যাচ্ছিলে আমাদের বলো” বড়বাবু মুন্নাকে কোলে বসিয়ে হাতে ক্যাডবেরি চকলেট দিয়ে প্রশ্ন করছেন”। সবাইকে অবাক করে আধো বুলিতে মুন্না যা বলল চমকে উঠল সবাই!আম্মি আব্বুর ঝগড়া হতো,আমরা খুব গরীব তাই আমি চেন্নাই যাচ্ছিলাম কাজ করতে। “তুমি তো এইটুকু হারিয়ে যেতে তো, কী কাজ করতে কৌতূহলে এক মহিলা কনস্টেবলের প্রশ্নে স্মার্টলি উত্তর মুন্নার” বাইরে বেরোলে সবাই বড় হয়ে যায়,আমিও বাড়িতে টাকা পাঠাতাম”!ততক্ষণে খবর পেয়ে আয়েশাও হাজির।স্বামী-স্ত্রী দুজনে চোখের জলে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলো,না আর নিজেদের মধ্যে বাচ্চার সামনে দোষারোপ-ঝগড়া নয়।আজ তাদের চরম শিক্ষা হয়েছে।