Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » অঘোরগঞ্জের ঘোরালো ব্যাপার || Shirshendu Mukhopadhyay » Page 9

অঘোরগঞ্জের ঘোরালো ব্যাপার || Shirshendu Mukhopadhyay

বলি ওহে নাস্তিক

“বলি ওহে নাস্তিক! কাণ্ডটা দেখলে? কুলাঙ্গার, কুলাঙ্গার! এরাই অঘোরগঞ্জের নাম ডোবাবে দেখছি। শরীরচর্চা নেই, প্যাঁচপয়জার শিখল না, রিফ্লেক্স নেই, বুক ফুলিয়ে মস্তানি করে বেড়ায়। ছিঃ ছিঃ, দুটো গুন্ডা পাঁচজনকে পিটিয়ে পাট পাট করে দিয়ে গেল হে! দেখে আমার রক্ত গরম হয়ে যাচ্ছে!”

“সবই স্বচক্ষে দেখলাম দাদা। বলতে দুঃখ হয় যে, গোপাল গুছাইত সম্পর্কে আমার ভাগনে।”

কথা হচ্ছিল গভীর রাতে। যোগেন পালোয়ান আর মুকুন্দ রায়ের মধ্যে। দু’জনেই ভারী লজ্জিত আর মনমরা।

যোগেন বলল, “এর একটা বিহিত হওয়া দরকার। আমি গিয়ে হাউড় দিয়ে পড়ে গুন্ডাদুটোকে রদ্দার পর রদ্দা দিয়েছি বটে, কিন্তু শরীরটা না থাকায় তেমন সুবিধে হল না।”

মুকুন্দ বিরক্ত হয়ে বলল, “আপনি শুধু শরীর বোঝেন। চিরটাকাল দেখলুম, শরীর নিয়ে পড়ে রইলেন। এই ডনবৈঠক মারছেন, এই গদা ঘোরাচ্ছেন, এই এক কাঁড়ি ছোলা খেলেন, ছ’টা-সাতটা কাঁচা ডিম মেরে দিলেন, আর সারাদিন মাল্ল নাচিয়ে নাচিয়ে বেড়ালেন। বলি, মস্তিষ্কের চর্চা কোনওদিন করেছেন?”

যোগেন রুখে উঠে বলল, “তার মানে কি তুমি বলতে চাও যে, আমি বোকা কিংবা আহাম্মক!”

“তা বলব কেন? বুদ্ধি আপনারও কিছু কম নেই। কিন্তু চিন্তাটা সব সময় শরীরের দিকেই বা কেন যাবে? মাথা খাঁটিয়ে একটা ফন্দিফিকির বের করতে হবে তো!”

“সেটাই তো বলতে আসা। তুমি হলে ভাবন কাজি। সারাদিন বসে বসে আকাশ-পাতাল ভেবে যাচ্ছ। শরীরটা পকা হলেও তোমার বুদ্ধির কিছু জোর আছে বটে। তা ভেবে একটা উপায় বের করে ফ্যালো তো! এরকম অত্যাচার-অবিচার তো আর সওয়া যায় না। অঘোরগঞ্জে একটা খুনখারাপি হয়ে গেলে যে লজ্জার শেষ থাকবে না। মাত্র দুটো গুন্ডা এসে সন্ত্রাস সৃষ্টি করবে, আর আমরা বসে বসে দেখব? মগের মুল্লুক নাকি?”

“তা গুন্ডা দুটো চায় কী?”

“কেন, তুমি খবর রাখো না?”

“না দাদা। আপনি তো জানেন, আমি কোনওকালেই গাঁয়ের কুটকচালিতে থাকি না।”

“হ্যাঁ, তুমি একটু আলগোছ লোক বটে। চিরু আর শচি হল ঘড়িয়াল মৃগাঙ্কর পোষা গুভা। তুমি তো জানোই যে, মৃগাঙ্ক ঘড়ির জন্য জান দিতে পারে। নিতেও পারে। ওই যে শতম’ নামে একটা গ্রহ আছে, সেখান থেকে রা নামে এক ছোঁকরা কী করে যেন এসে পড়েছিল। এসেই মৃগাঙ্কর পাল্লায় পড়ে যায়। সেই ছোঁকরার হাতে একটা আজব ঘড়ি থেকেই বখেরা শুরু। মেরেই ফেলেছিল, বরাতজোরে বেঁচে যায়। এখন সে করালীডাক্তারের হেফাজতে। কিন্তু তার প্রাণ সংশয়। চিরু আর শচি খুঁজে পেলে তার আর রক্ষে নেই।”

“শতম গ্রহ? সেটা কোথায় বলুন তো!”

“তোমাকে বলে কী লাভ? তুমি ঘরকুনো লোক, মরে ইস্তক অঘোরগঞ্জের সীমানা পার হওনি আজ পর্যন্ত। আমি তো ফাঁক পেলেই এ গ্রহে সে গ্রহে ঢু মেরে আসি। শতমেও বারকয়েক গেছি।”

“সেটা কি ভাল জায়গা?”

যোগেন মুখ বিকৃত করে বলল, “তা খারাপ নয়। বেশ ডিসিপ্লিন আছে বটে। মজা কী জানো? সেখানে তেমন কোনও মজাই নেই। মূক-বধিরের রাজ্য বলে মনে হবে। তারা নাকি সব মনে-মনে কথা কয়, স্পিকটি নট। টাকা-পয়সার প্রচলন নেই, কেনাকাটা নেই, পালপার্বণ নেই, যে যার মুখ বুজে কাজ করে যায়। কখনও কোনও ঘটনা ঘটে না। মন্দ নয়, তবে বড্ড ভ্যাদভ্যাদে।”

“বুঝলুম। তবে আপনার ভাল না লাগলেও, আন্দাজ করছি, সেটাই আমার উপযুক্ত জায়গা। চুপচাপ বসে ভাবনাচিন্তার খুব সুবিধে হয় ওরকম একটা জায়গায় গিয়ে বাস করলে।”

“তা যা বলেছ। যেতে চাও নিয়ে যাব’খন। এক লক্ষে পৌঁছে যাওয়া যায়। কিন্তু উপস্থিত কী করা যায় সেটা ভেবে বের করে ফ্যালো তো!”

“ভাবছি। একটু সময় দিন।”

“তুমি ভাবো, আমি ততক্ষণে নিশাপতি আর বাচস্পতিমশাইকেও ব্যাপারটা ভেঙে বলে আসি।”

.

সর্বেশ্বরের জিলিপি কচুরির দোকানে সকালবেলাটায় বেশ ভিড় হয়। সর্বেশ্বরের হিঙের কচুরি আর সাড়ে সাত প্যাঁচের জিলিপি এ তল্লাটে যেমন বিখ্যাত, তেমনই নামডাক তার চায়ের।

অঘোরগঞ্জে একজন সন্ত্রাসবাদী বা ডাকাত বা ফেরারি আসামি ঢুকে যে করালীডাক্তারের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে, সেটা নিয়েই আজ সকলে উত্তেজিত হয়ে আলোচনা করছিল। পাগল, মারকুটে, রাগি এবং রোখাচোখা করালীডাক্তারের ভয়ডর বলে কিছু নেই। তার উপর বরাবর উনি বিপজ্জনক সব কাজ করে থাকেন। সেই জন্য সরেজমিনে গিয়ে কেউ ব্যাপারটা তদন্ত করে আসতে পারেনি। ব্যায়ামবীর বিরজা, শিবকালীবাবু, বটকৃষ্ণ মণ্ডলরা কয়েকজন গিয়েছিল বটে, কিন্তু ব্যাপারটা এখনও ভারী ধোঁয়াটে।

দোকানের বাইরের বেঞ্চে বসে দুটো লম্বা-চওড়া লোক শালপাতার ঠোঙায় কচুরি আর জিলিপি খেতে-খেতে চুপ করে বসে কথাবার্তা শুনে যাচ্ছিল। খদ্দেররা খানিকটা ভয় খানিকটা সন্দেহের চোখে বারবার তাদের দিকে তাকাচ্ছে। তারা ভ্রুক্ষেপ করছে না। তাদের চেহারায় আর চোখে এমন কিছু আছে যাতে কেউ তাদের ঘাঁটাতে সাহস না পায়, এটা তারা জানে।

সব শুনে চিরু চাপা গলায় বলল, “শুনলি?”

শচিও মৃদু স্বরে বলল, “হুঁ। কিন্তু মুশকিল আছে।”

“কীসের মুশকিল?”

“করালী ভেডুয়া নয়।”

“পিস্তলের সামনে সবাই ভেড়ুয়া।”

“চুপচাপ বসে থাক। করালীর বাজারে চেম্বার আছে। দশটায় চেম্বার খুলতে যাবে। তখন বাড়ি ফাঁকা।”

ক্রমে-ক্রমে বেলা দশটা বাজতে চলল। সর্বেশ্বরের দোকান ফাঁকা হয়ে গেছে। শুধু চিরু আর শচি স্থির হয়ে বসে আছে আর মাঝে মাঝে ঘড়ি দেখছে।

প্রায় সাড়ে দশটা যখন বাজে তখন শচি বিরক্ত হয়ে বলল, “না, আর দেরি করা ঠিক হবে না। কাজ হাসিল করে যেতে পারলে লাখ। খানেক টাকা হাতে আসবে।”

“আমিও তো তাই বলি। দরকার হলে করালীকে উড়িয়ে দেওয়া যাবে। চল।”

দু’জনে ধীরেসুস্থে দাম মিটিয়ে উঠে পড়ল।

“বগলাপতি, শুনতে পাচ্ছ?”

“কে?” বলে বগলাপতি পথের মাঝখানে থমকে দাঁড়িয়ে এদিক সেদিক চাইতে লাগলেন।

শঙ্কাচরণ আর বিপদভঞ্জন দু’পাশ থেকে বলে উঠল, “কী হল বগলাঠাকুর?”

“কে ডাকল বল তো!”

“কে ডাকবে? ভুল শুনেছেন।”

“তাই হবে!” বলে বগলাপতি ফের এগোতে লাগলেন। হঠাৎ ফের সেই কণ্ঠস্বর, “বলি ও বগলা! বেশ স্পষ্ট শুনছ তো আমার গলা?”

“অ্যাঁ!” বলে ফের বগলাপতি দাঁড়িয়ে গেলেন।

শঙ্কা আর বিপদ মুশকিলে পড়ে গেল। শঙ্কা বলল, “বলি দিনেদুপুরে কি ভূতের ডাক শুনতে পেলেন নাকি বগলাঠাকুর।”

“চুপ! চুপ! শুনতে দে ভাল করে। কে যেন কী বলছে।” কণ্ঠস্বরটি বলল, “আমি যোগেন হে! মনে আছে?” বগলাপতি কাঁপতে কাঁপতে বললেন, “যে আজ্ঞে! কিন্তু আ আমি যে মূৰ্ছা যাব…”

“খবর্দার ও কাজ কোরো না। তা হলেই কেলেঙ্কারি। মন দিয়ে শোনো। আমি তোমার ভিতরে ঢুকে পড়েছি। তোমার ভিতরটা অতি যাচ্ছেতাই। গাদাগাদা চর্বি জমে আছে চারধারে। ব্যায়াম ট্যায়ামের তো বালাই নেই তোমার। এ শরীরে বসবাস করতে তোমার ঘেন্না হয় না? যাকগে, কী আর করা। এখন কিছুক্ষণের জন্য ক্ষমাঘেন্না করে এই চর্বির পিণ্ডের মধ্যেই থাকতে হবে আমাকে।”

“ওরে বাবা! আমার ভিতরে যোগেন পালোয়ান! তা হলে মূৰ্ছা ঠেকাব কী করে?”

“মূৰ্ছা গেলে তোমার মুণ্ডু ছিঁড়ে নেব। স্টেডি হয়ে দাঁড়াও। অত কাঁপছ কেন? করালীর বাড়িতে দুটো গুন্ডা ঢুকছে। তাদের মতলব ভাল নয়। খুনখারাপি হতে পারে। তুমি পা চালিয়ে যাও। গুন্ডাদুটোকে দেখলেই ঝাঁপিয়ে পড়বে। কোনও ভয় নেই।”

“বাপ রে! জীবনে গুন্ডা-পেটাই করিনি যে!”

“আহা, তোমাকে কিছু করতে হবে না। তোমার হয়ে লড়বে তো যোগেন পালোয়ান। বলি, গায়ে একটু জোরবল টের পাচ্ছ?”

“তা পাচ্ছি বোধ হয়।”

“তা হলে আর কী? মাভৈঃ বলে তেড়ে যাও তো!”

বগলাপতি হঠাৎ হুহুংকার দিয়ে বলে উঠলেন, “এই যাচ্ছি! দেখি তো কার এত সাহস যে অঘোরগঞ্জে এসে মস্তানি করে যায়?”

শঙ্কাচরণ আর বিপদভঞ্জন হাঁ হয়ে বগলাপতির ছুট দেওয়া দেখল, তারপর তারাও চটপট পিছু নিল।

বগলাপতি যখন অকুস্থলে পৌঁছলেন তখন চিরু আর শচি কাজ অনেকটাই এগিয়ে ফেলেছে। পিস্তলের বাঁট দিয়ে মেরে করালীডাক্তারকে অজ্ঞান করে দিয়েছে। পিস্তল বাগিয়ে সবে চিরু এগোচ্ছে ভোলানাথের দিকে। সুরবালা অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছেন।

বগলাপতি ঝড়ের মতো ঢুকলেন, আর তার পরই তাঁর মুগুরের মতো ঘুসিতে চিরু ছিটকে পড়ল। পিস্তল খসে গেল হাত থেকে। বগলাপতি এবার শচির দিকে ঘুরে দাঁড়াতেই দরজার কাছ থেকে কে যেন আর্তনাদ করে উঠল, “না না বগলাঠাকুর, ওকে মারবেন না, ওটা আমার ভাগে।” বলতে বলতেই গোপাল গুছাইত ঘরে ঢুকেই ল্যাং মেরে শচিকে ফেলে বুকের উপর চেপে বসে মোক্ষম এক ঘুমোয় তার চোখ উলটে দিল।

লড়াই শেষ। শঙ্কাচরণ আর বিপদভঞ্জন তাড়াতাড়ি দড়ি এনে দু’জনকে পাছমোড়া করে বেঁধে ফেলল।

জীবনে যিনি কখনও বগলাপতিকে চিটিংবাজ ছাড়া সম্বোধন করেননি, সেই করালীডাক্তারের আজ কী হল কে জানে, মাথায় হাত বোলাতে-বোলাতে উঠে দাঁড়িয়ে সবিস্ময়ে বগলাপতির দিকে চেয়ে বললেন, “ধন্যবাদ বগলাবাবু। আপনি সময়মতো না এলে এই ছেলেটা খুন হয়ে যেত। কিন্তু এসব কী হচ্ছে বলুন তো!”

ঠিক এই সময়ে ভোলানাথের টেলিপ্যাথি করালীডাক্তার থেকে শুরু করে সবাই শুনতে পাচ্ছিল। ভোলানাথ বলল, “এসব ঘটে বলেই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার আলাদা একটা আস্বাদ আছে। আমাদের শতম গ্রহে আমরা পাঁচশো বছর বেঁচে থাকি বটে, কিন্তু বেঁচে থাকাটাকে আপনাদের মতো টের পাই না। আমার ভারী ভাল কাটল কয়েকটা দিন। মার খেলাম, গুলি খেলাম, প্রাণ বাঁচাতে পালালাম, বেশ লাগল কিন্তু। এবার আমার ফিরে যাওয়ার সময় হয়েছে। ওই দেখুন, আমাকে নিয়ে যেতে নল এসে গেছে। আমি যাচ্ছি। কিন্তু ফের কখনও আসব। বারবার আসব। জীবনের স্বাদ নিয়ে যাব। বিদায়।”

সবাই অবাক হয়ে দেখল, জানালার গ্রিল ভেদ করে একটা গোল মৃদু আলোর ফোকাস এসে বিছানায় পড়েছে।

ধীরে ধীরে আলোটা ভোলানাথকে গ্রাস করে নিচ্ছিল। যেন আলোর মধ্যে মিলিয়ে যাচ্ছে ছেলেটা। আবছা হয়ে যাচ্ছে। নেই হয়ে যাচ্ছে।

মুকুন্দ রায় তার ভাগনে গোপাল গুছাইতের শরীর থেকে লাফ দিয়ে নেমে উত্তেজিত গলায় বলল, “এই হল সায়েন্স! একেই বলে বিজ্ঞান। দেখছেন তো যোগেনদা, সায়েন্স কাকে বলে! আমিও এই নলের মধ্যে ঢুকে পড়ছি। কুসংস্কার আর অন্ধবিশ্বাসে আচ্ছন্ন এই পৃথিবীতে আর নয়। ভোলানাথের সঙ্গেই আমি শতম গ্রহে চলে যাচ্ছি।”

বগলাপতিকে ছেড়ে যোগেন পালোয়ান ফাঁকা জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিল। বলল, “আহা, নল দিয়ে যাওয়ার দরকারটা কী হে! এক লক্ষেই তো চলে যাওয়া যায়!”

মুকুন্দ নলের মধ্যে হামাগুড়ি দিয়ে ঢুকে যেতে-যেতে বলল, “না,! আমি ওসব ভুতুড়ে কাণ্ডকারখানায় বিশ্বাসী নই। আমি সায়েন্সে বিশ্বাসী। বিজ্ঞান আর যুক্তি ছাড়া বিশ্বে আর কিছু নেই।”

যোগেন বিরস মুখে বলল, “তা হলে এসে গিয়ে বাপু। দুনিয়ায় নাস্তিকের সংখ্যা যত কমে ততই মঙ্গল!”

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9
Pages ( 9 of 9 ): « পূর্ববর্তী1 ... 78 9

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress