স্বর্গলক্ষ্মী জানকীকে করলে হরণ লঙ্কাপতি,
শ্রীরাম, লক্ষ্মণ যারপরনাই হলেন ক্ষুব্ধ অতি।
দক্ষিনায়ণ কাল দেবতাদের যোগনিদ্রা সময়,
লক্ষ্মণকে সঙ্গে নিয়ে শ্রীরাম লঙ্কা রওনা হয়।
বনের বানর, হনুমান আর জাম্বুবান কেবল তাঁর সাথী,
এই মাত্র সৈন্য নিয়ে রণে চললেন রঘুপতি।
যুদ্ধের প্রারম্ভেই প্রচুর বানর হলো হত,
লঙ্কার বহু বীর রথী মহারথীও মরেছে, হয়েছে ক্ষত।
দূর্জ্ঞেয় রাবন তখন নেয় মহামায়ার শরণ,
দেবলোক চিন্তান্বিত হয়ে করেন ব্রহ্মার স্মরণ।
ব্রহ্মা নিদান দিলেন পূজা করতে হবে মহামায়ার,
যোগনিদ্রা ভাঙাতে হবে করে স্তব স্তুতি তাঁর।
দেবী মূর্তি গড়ে শ্রীরাম করেন করজোরে দেবী আরাধন,
শুক্লা ষষ্ঠী ছিল সেদিন হোল দেবীর বোধন উদযাপন।
দেবী স্বয়ং স্বর্ণ লঙ্কাপুরীতে আছেন যোগনিদ্রামগ্ন,
সপ্তমী অষ্টমী দিন পূজা হলো মেনে তিথি, লগ্ন।
প্রত্যহ নিবিষ্ট মনে চন্ডীপাঠ করেন সীতাপতি,
দেবী আরাধনা করেন, মনে তাঁর একনিষ্ঠ ভকতি।
কিন্তু দেবীর দর্শন না পেয়ে চিন্তিত বিভীষণ দিলেন বুদ্ধি,
একশো আট নীলপদ্মেতে করো দেবী পূজার স্তুতি,শুদ্ধি।
নীলোৎপলের নিবাস হিমালয় মানস তলাও, অতীব সুদূর,
মারুতি দৃপ্ত কণ্ঠে বলে আনবো তুলে আমি হোক না সে বহুদুর!
একটি নীলপদ্ম উধাও দেখেন শ্রীরাম দেবী পদে পদ্ম নিবেদন কালে,
অমনি রঘুপতি দুশ্চিন্তায় অস্থির হলেন, পদ্ম খোঁজেন পুষ্প পূজা থালে।
একি হলো ! মা কি তবে রুষ্ট! এই ভাব মনে জাগে,
অশ্রুজলে ভাসেন শ্রীরাম আর দয়া ভিক্ষা মাগে।
অকস্মাৎ করেন পণ নীল লোচন তাঁর করবেন দান,
অমনি অক্ষি উৎপাটনে নিলেন হাতে ধনুর্বাণ।
অষ্টমী ও নবমীর সন্ধিক্ষণে এই ঘটনায় দেবী দিলেন দরশন,
নিজ হাতে পদ্ম দেখিয়ে বলেন করেছি তোমার ভক্তি পরীক্ষণ।
ছলনা করে তিনিই লুকিয়ে ছিলেন নীলোৎপল,
কথা দিলেন রাবণ বধ করবেন তিনি, আর না করবেন ছল।
অকালে দেবী মহামায়ার নিদ্রা ভঙ্গ করে পূজা হওয়ায় নাম অকালবোধন,
দক্ষিণায়নের সময় শরৎকালে শ্রীরামচন্দ্র স্বয়ং করেছিলেন দেবীর শ্রীমূর্তি পূজা অর্চন।
একশো আট নীলপদ্মে পূজেছিলেন দেবীর চরণ,
শারদলক্ষ্মী শাকম্ভরীর হয় নীলপদ্মে অকাল বোধন।