” আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে “-
হে বসন্ত ! কত যুগ আগে , কবিকণ্ঠে
উৎসারিত আগমন বার্তাখানি তব।
ঋতুচক্রের আবর্তনে ফিরে ফিরে আসো
তুমি বারম্বার ,বাংলার এই ঋতু রঙ্গমঞ্চে।
আজিও আসীন তুমি এ ভরা ফাগুনে।
দখিনা পবনে , উদ্দীপিত বৃক্ষলতা শ্যামল
বনানী । ফুটিয়াছে থরে থরে নানা ফুলদল।
মল্লিকা ,জাতি, যূথী, সুগন্ধি কুসুম , বিবিধ
বরণে । চম্পা , চামেলি আর বকুলের বনে , মত্ততা জাগে। পল্লবিত শাখা ‘পরে , থোকায় থোকায় আজি ধরিয়াছে বোল। সুবাসে তাহার,
আকুল হইয়া ছুটে ,আসিছে ভ্রমর , গুঞ্জরিয়া । তব আগমনে, কুহু কুহু তানে,অবিরাম গাহে , এবে কোকিল বঁধুয়া । গুনগুন স্বরে , প্রস্ফূটিত ফুলোপরে মত্ত মধুকর, মধু আহরণে।
হে বসন্ত ! তব আগমনে , অশোক , শিমূল আর
কৃষ্ণচুড়া , সাজিয়াছে তারা যেন রক্তিম বসনে।
বসন্ত পবনে যেন ছড়ায়ে আবীর, লালে লাল
করে তোলে ধরণীর শোভা। তরুণী রজনীগন্ধা,
কামিনীর ফুল, তব সমীরণে ঢালে গন্ধসুধা। বসন্ত পঞ্চমীতে রত বাণী বন্দনায় , শিক্ষার্থী ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যত। সজ্জিত হইয়া সবে শুভ্র বসনে ,ভক্তিভরে দেয় পুষ্পাঞ্জলি , বাগ্দেবী চরণে। যমুনা পুলিনে যেন আজো শোনা যায় , কানুর বাঁশরী রব ,রাধা রাধা নামে। রব শুনি রাধা সনে ছুটে চলে ব্রজবালা ,কানু সন্নিধানে।
হে বসন্ত ! তব আগমনে , মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যের জন্মতিথি আজো , পালি মোরা মহোৎসবে ,
দোল পূর্ণিমায়। বৃন্দাবনে খেলে হোরি নরনারী
যত ,যেমতি খেলিত শ্যাম রাধিকার সনে, হাতে লয়ে পিচকারী , অনুরাগ ভরে মাতি’ রঙে রঙে।
হে কবি ! তব বসন্ত হতে শত বর্ষ পরে, মোদের
বসন্তদিন রূপে রঙে আজিও রঙিন। সেদিনের
রক্তরাগ , অনুরাগে সিক্ত করি পাঠায়েছো আমাদের করে , কল্পনায় অবগাহি ভাবিয়াছি যেই , পাইয়াছি তাহা। মোদের উতলা প্রাণে , তোমার বসন্তগান , দোলা দিয়ে যায় ।মনে হয় কবি ,সেই গান গাহিতেছ আজও তুমি রবি।
সেদিনের অনাগত কবি , যারে তুমি করেছো
প্রেরণ ,বসন্তের আনন্দ অভিবাদন, সেই কবি
আজি , নতশিরে করিল গ্রহণ, তব অভিবাদন।
সেদিনের বসন্ত যেন আসিয়াছে ফিরে , অবিকল
রূপে এই ধরণীর ‘ পরে। হে বসন্ত ! ধন্য তুমি ,
কবিও হয়েছে ধন্য তোমার বর্ণনে। যেসব নূতন
কবি আসিবে ধরায়,তোমার বসন্তগান কণ্ঠ ‘ পরে
তার, ক্ষণতরে নয়, চিরতরে হইবে ধ্বনিত। যত দিন থাকিবে ধরা , চন্দ্র ,সূর্য্য ,বায়ু। রবে গানখানি তব লয়ে পরমায়ু।