Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » হারে রে রে || Bhaskar Chakraborty

হারে রে রে || Bhaskar Chakraborty

পত্র-পত্রিকার মতো, সারি সারি পুরোনো জুতো, আমি সাজিয়ে রাখি ঘরে—
আসে, বন্ধু-বান্ধব
আসে, বুড়ো এবং আধবুড়ো আরও অনেকজন
আমি শুনি, জীবনবীমা-র উপকারিতা সম্পর্কে অনেককিছু
নোংরা-পা—আমি চাই না, সকালবেলা কুঁচকে থাকুক আমার কপাল
আমি গল্প জুড়ি : তেল মাখতে মাখতে আমি দেখেছি
তেলের শিশি থেকে হাসতে হাসতে উঠে আসছে রাজকুমারী…
এবং বিশ্বাস করে না কেউ, পায়ের ওপর পা তুলে, আমি পা নাচাই
ঘুমোতে যাবার আগে, ওঃ
ঘুমোতে যাবার আগেই আমি স্বপ্ন দেখি সুখের
ঘুম থেকে উঠে, আমি ঘষে ঘষে সাজিয়ে রাখি আমার
পুরোনো জুতো

বেরিয়ে পড়ি তখনই, যখনই, সাড়া পাই দূরে—
একবার এইরকম হলো :
চুপ করে থাকতে বলা হলো আমাকে—আমি
কথা না বলে রইলাম, একবছর দু’বছর তিনবছর—
শেষের দিকে, কোথাও যেতাম না আমি
শেষের দিকে, জামা-প্যান্ট পরে, চুপচাপ
শুয়ে থাকতাম সন্ধেবেলা—
আমাকে ঐরকম দেখে, এক ভদ্রলোক, একদিন
রেগে আগুন—তিনি
বলেছিলেন আমাকে—‘সমস্ত কিছুই খাবে, কম বয়স তোমার
গাড়ি-চালানো শেখো

মৃত কবিদের জন্যে আমি নিয়ে এলাম ঘরে, সবুজ একটা ফুল—
নদীর দু’তীরে দুটো জাহাজ, দু’তীরেই
ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম আমি—আমার পায়ে পুরোনো জুতো, হাতে
মাফলার-জড়ানো একটা মেয়ে, সেই বিকেলবেলা
নতুন সিগারেট—
চুমু খেয়েছিলো আমাকে, আর বিকেলবেলা ভেঙে পড়েছিলো
আর বিকেলবেলা ছড়িয়ে পড়েছিলো, মৃত, সমস্ত কবিদের বুক পর্যন্ত—
আমি লুকিয়ে, যোগাযোগ রেখেছি ওদের সকলের সাথে
ওদের সকলের কাছেই আমি পাঠিয়ে দিয়েছি আমার নতুন কবিতা
মোজার মতোই, যা ঝলমলে

বিশাল নাকের ওপর, বসে রয়েছে, ছোট্টো একটা মাছি—
আমি আরও ছোট্টো ছিলাম যখন
চাদর মুড়ি দিয়ে দেখতে যেতাম ‘শাজাহান’
চাদর মুড়ি দিয়ে দেখতে যেতাম ‘সিরাজদ্দৌলা’—
এখন আমি জুতোর দোকানে যাই, জুতো কিনি
বাস থেকে নেমে, বাসের টিকিট, ফেলে দিই ফুটপাতে
সাতবছর, আমি একটা ভূতের মতো ঘুরে বেড়িয়েছি কলকাতা
আমার হাত ছিলো না, পা ছিলো না
আমার বই আমি আর বিক্রী করবো না কোনোদিন
আমি এখন ভুলে যেতে চাই সবকিছু
আমি বেঁচে থাকতে চাই তোমাদের সঙ্গে, জয়হিন্দ

দাঁতের হাসপাতাল হাঁ-করে দাঁড়িয়ে আছে, এসো আজ আমরা দুজনে
দাঁতের হাসপাতালে গিয়ে দাঁত দেখিয়ে আসি—
লাফ দিয়ে দাঁত পড়ে—মনে রেখো—এসো আজ আমাদের দাঁতের হলুদ
ধুয়ে আসি—কিংবা চলো ডাক্তারের কাছে ছুটে গিয়ে
এমনিই বসে থাকি—চেয়ে থাকি—সঙ্গে সঙ্গে থাকি ডাক্তারের
দাঁতের হাসপাতাল হাঁ-করে দাঁড়িয়ে আছে, এসো আজ আমরা দুজনে

উঠে এসো। ভালো নয়, এইসব ভালো নয়, জানো—
এই যে নিজের সঙ্গে ইয়ার্কি করছো
এই যে সমস্ত দিন
ফালি-কুমড়োর মতো শুয়ে আছো
ভালো নয়—
উঠে এসো—মোটা উরু, লাথি মারো, ভাঙো
ঘরের মেঝেতে পোঁতো—লেবুগাছ
ওই ওই
ওই তো বাবার জেবঘড়ি
ছুঁড়ে দাও, ও বাড়িতে। কিংবা পকেটে পোরো, চলো

সমস্তদিন বসে বসে, আমি আজকাল, আমার পায়ের কথা ভাবি—
কাল সমস্তরাত, আমার পা-র জন্যে
আমি বসে বসে কেঁদেছি—আমার পা, হায়
আগের মতো নেই আর—ক্রমশই রোগা হয়ে যাচ্ছে—আজকাল
জুতোই পরতে চায় না কিছুতে—
আমি, কতো ধমক দিই—দেশ-বিদেশের গল্প শোনাই কতো—
তোমাদের লম্বা পা, যথেষ্ট খুশী করে আমাকে—সন্ধেবেলা
আমার পা এখন ঘুমিয়ে পড়েছে, মোটা একটা ছুঁচ দিয়ে, আমি
খোঁচা দিচ্ছি, দেখছি ওরা বেঁচে আছে কিনা…
দ্যাখো হে, ওরা চিৎকার করছে—দ্যাখো হে, ওরা জেগে উঠছে—দ্যাখো, ওরা
আমার সঙ্গে বেরিয়ে পড়ছে রাস্তায়

লাল পিঁপড়ের লাইন ধরে, ঘুরে বেড়ালাম, সমস্ত সকালবেলা—
ছুটতে ছুটতে দেখে এলাম
দু’একটা দাড়ি পাকছে সন্দীপন চাটুয্যের—এবং
সমস্তকিছু ঠিকঠাক আছে, সমস্তকিছু,
রাতদিন মাইক বাজাচ্ছে
শুধু ও-পাড়ার ছেলেরা
হষ্টেলের বারান্দা থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে মেয়েরা ঝুঁকে পড়েছে, আমার
সর্দি হলো খুব—
তবু, হেই হেই করে বিছানা থেকে লাফ দিয়ে উঠে
আমি খড়ম হাতে ছুটে গেলাম রান্নাঘরে—
ঝুলভর্তি রান্নাঘর থেকে ডাক পড়লো আমার, আহা, বিছে মারার জন্যে

আমি লক্ষ করছিলাম, আমার ভিজে জুতোটা, বৃষ্টিতে আরও ভিজছিলো—
পা, জুতোর থেকে অনেক দূরে—তোমার থেকে
আরও অনেক দূরে বসে বসে আমি চেয়ে দেখছি এখন
মানুষের, সরু হাত
ছুঁয়ে রয়েছে, আরও সরু একটা জানলা-আমার কিশোর বন্ধুরা
খেলার জন্যে, আমাকে ডেকে ডেকে ফিরে গ্যাছে—আমি যাবো—আর
দুর্ভাবনা নেই আমাদের
খুব তাড়াতাড়ি ঐ এসে গ্যালো আমাদের হাসির দিন
জানলার পাশে, এই যে বৃষ্টিতে ভিজে পড়ে আছে দর্শনের বই
ভালো লাগছে খুব, আশেপাশে
ভালো লাগছে আমার
দৌড়তে দৌড়তে যাওয়া-আসা করছে মানুষ—দাড়ি-কামাতে, দ্রুত
ঐ ঢুকে পড়ছে সেলুনে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress