Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » স্বর্গে শোরগোল || Abhijit Chatterjee

স্বর্গে শোরগোল || Abhijit Chatterjee

গল্পটা শোনা এক নামকরা উকিল বাবুর কাছে এক ঘরোয়া আড্ডায়। অনেকেই হয়ত জানেন আবার অনেকে না’ও জানতে পারেন। বহুদিন আগে শুনেছি তাই স্মরণ করে নিজের ভাষাতে লেখার ইচ্ছে হ’ল। যদি ভাল লাগে তাহলে ভীষণ খুশি হব। আর একটা কথা , কোন বিশেষ পেশাকে ছোট করার কোন উদ্দেশ্য আমার নেই, রসিকতাটা মজা হিসেবেই নেবেন প্লিজ ।
স্বর্গ আর নরকের মাঝখানে একটা বিশাল পাঁচিল আছে, অনেকটা ওই বার্লিনের পাঁচিলের মত। আইন কানুন বজায় রাখা , শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখা সব থেকে বড় কথা হল বেআইনি অনুপ্রবেশ আটকাতে এই পাঁচিলের জন্ম। দেবরাজ ইন্দ্র নিজে উদ্যোগ নিয়ে বহুকাল আগে এটি তৈরি করেছিলেন । আধা দেবতা যমরাজ খুশি হলেও এর রক্ষণাবেক্ষণের ব্যাপারে পরিষ্কার করে জানিয়েছিলেন যে স্বর্গের দেওয়া অনুদানেই নরক চলে , তার নিজস্ব কোন রোজগার নেই । মর্ত্যে যম পুজো ছিটেফোঁটা হয়, আর তার যা নৈবেদ্য আসে তা দিয়ে চায়ের জল গরম হয়না যেখানে তাদের পক্ষে এতবড় পাঁচিল দেখাশোনা করা নবাবীয়ানা, অতএব পাঁচিল দিয়েছ যেমন তার দেখভালও দেব সংসদ যেন করে। ব্রহ্মা দাড়ি চুলকে যমকে সমর্থন করেছিল আর মহাদেব একটু লুঙ্গি ড্যান্স করে যমকে চুমু খেতেই বিষয়টা ধ্বনি ভোটে পাশ হয়েছিল। সেইমত সব চলছিল।
স্বর্গের রোজগার ইদানিং খুব কমে গেছে।আজকাল থিম নামক ঘোড়ার ডিমের পেছনে যে টাকা খরচা করে ক্লাবগুলো তার ছিটেফোঁটাও পুজোর পেছনে দেয় না। ভীষণ অর্থকষ্টে আছে দেবকূল। একে ঘোর কলি তাই অবতার বা মহাপুরুষ পাঠাতেও ভয় পাচ্ছে দেবতারা অথচ সংসার বেড়েছে তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে খরচাও। নুন আনতে পান্তা ফুরোয় অবস্থা যখন স্বর্গের সেই সময় একদিন হন্তদন্ত হয়ে যমরাজ দেব সংসদে এসে হাজির। সকলের নারাণ দা মানে নারায়ণ বলে উঠল – কি হল কৃতান্ত খুব চিন্তিত মনে হচ্ছে। – ঘোর বিপদ আসতে চলেছে প্রভু এখনই ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে ভয়ঙ্কর লাফড়া হতে বাধ্য, কিছু একটা করুন। যমের কথা শুনে সকলের মুড উধাও। কি হয়েছে ,কি হয়েছে প্রশ্ন চারদিক থেকে ছুটে এল। যম হাত তুলে সকলকে শান্ত করে যা নিবেদন করল তার সারমর্ম এই যে দীর্ঘদিন সঠিক দেখভালের অভাবে সীমানার পাঁচিলে একটা অংশ ধ্বসে গেছে, আজ মর্নিং ওয়াকের সময় মহিষাসুর তা দেখতে পেয়ে জানায়। যম নিজে দেখে আসে , তখনই বকাসুর বলে তাই বলি রোজ মাথা গোনার সময় দু এক পিস ছ্যাঁচড়া পাপী কেন কম হচ্ছিল। একদিন তো চারজন বেশি হয়েছিল। বহু কষ্টে তাদের আইডেন্টিফাই করে জানা গেল যে তারা স্বর্গের খুচরো পয়সা দেবতা নরক ঘুরতে এসেছিল। যাই হোক পুশব্যাক করে অবস্থা সামলানো গেলেও এখনও সময় আছে চটজলদি রিপেয়ার না করলে স্বর্গ আর নরকের ব্যবধান থাকবে না। সঙ্গে সঙ্গে জরুরি বৈঠক ডাকা হল দেব সংসদে। মিটিং-এ ঠিক হল একটা যৌথ সংসদীয় কমিটি সরেজমিনে তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দিক দুদিনে , সেই রিপোর্ট অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। কেতো মানে কার্ত্তিকের নেতৃত্বে টিম ঘুরে দেখতে গেল জায়গাটা । দেখলে পাঁচিলে একটা বেশ বড় ফোঁকর তৈরি হয়েছে যার মধ্যে দিয়ে অনায়াসে যে কেউ এপার ওপার করতে পারে। সব দেখেশুনে কার্ত্তিক রিপোর্ট জমা করল। একদম ওপরে লিখে দিল হাইলাইট করে
” ন্যাশনাল সিকিউরিটি থ্রেট “, তারপর বিস্তারিত রচনা অন্তে ওই ফোঁকরটি অবিলম্বে বুজিয়ে দেবার সুপারিশ করল। ইন্দ্র পড়ল ফ্যাসাদে , কোষাগার যে বেহাল। ভাবতে লাগলেন কি করা যায়, কি করা যায়। দিন দুয়েক বাদে চিত্রগুপ্ত এসে পেন্নাম ঠুকে ইন্দ্রের কাছে জানতে চাইল বাবু জানতে চেয়েছেন কিছু ভাবলেন কি ? ইন্দ্র আশ্বস্ত করে উত্তর দিল – শিগগিরই কাজ শুরু করছি। মুখে বলা আর কাজে করা যে কতটা কঠিন তা ইন্দ্র বাদে আর কেউ বুঝতে চাইছে না। সকলেই তো সরকারী ভর্তুকিতে আয়েসীচালে দিন কাটাচ্ছে। একদিন দুপুরে খাওয়ার পরে শচী আবদার করল তার খুব মিঠে পান খেতে ইচ্ছে করছে , ইন্দ্র যেন কাউকে দিয়ে কুবেরের দোকান থেকে একটা মিঠে পান কিনে আনে। কুবেরের পানের দোকান ? ইন্দ্র বেমক্কা ফুটনোটে বিষম খেয়ে একসা। খেয়ে উঠে নিজেই স্বচক্ষে পরিদর্শনে গিয়ে দেখে সত্যিই তাই, কুবের পানের দোকান দিয়েছে। মহাদেব খালি গায়ে একটা লুঙ্গি পড়ে বাতায় বসে হাফ দেবতাদের তেড়ে জ্ঞান দিচ্ছে যাকে বলে নরক গুলজার আর কি। ইন্দ্রকে দেখে শশব্যস্ত কুবের বলে উঠল – শচী মায়ের পান নেবেন তো কত্তা ? একটু দাঁড়ান এস্পেশাল করে বানিয়ে দিচ্ছি। ইন্দ্র ততোধিক কৌতুহলী হয়ে তার পানের দোকান লাগানোর কারণ জানতে চাইলে কুবের সোজা সাপটা বলে দিল – সংসার চালানোর জন্য তাকে এই হীন কাজ করতে হচ্ছে একে তো বছরে একদিন, ওই ধনতেরাসের দিন তার পুজো হয়। বর্তমানে সেই সংখ্যাটা এতটাই কমেছে যে তার ইনকামে সম্বৎসর সংসার চালানো কঠিন, অগত্যা।
পান নিয়ে শিবকে নমস্কার করে মাথা নীচু করে চলে আসা ছাড়া ইন্দ্রের আর করার কিছু ছিল না। দিন কাটছে পাঁচিলের গর্তের আর কিছু হচ্ছে না । যমরাজ বার দুয়েক নিজে এসে তদবির করেছেন। তাতেও কোন কাজ হচ্ছে না দেখে মাসখানেকের মাথায় সটান পোস্ট করলেন একটা উকিলের চিঠি থুড়ি নোটিশ। এক বিখ্যাত উকিল তার লেটার প্যাডে লিখেছে – ফর অ্যান্ড অন বিহাফ অফ মাই লার্নেড ক্লায়েন্ট শ্রী কৃতান্ত দেব ……..তারপরে বিস্তারিত ঘটনা ও দেব সংসদের গাফিলতি এবং সব শেষে লিখেছে যে যদি এই চিঠি পাবার এক মাসের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা দেব সংসদ না নেয় তবে তারা উপযুক্ত আইনি পদক্ষেপ নেবে। উকিলের চিঠি পেয়ে ইন্দ্র যারপরনাই চিন্তিত হয়ে এমার্জেন্সি মিটিং ডেকে বিষয়টা বললেন এবং কোর্ট কাছারি যে ভীষম বস্তু তার ব্যাখ্যাও দিলেন। প্রথমেই শিব ঠাকুর বল্ল – ও তোমাদের ইন্ডিয়ান ল তিব্বতে খাটে না , আমি নেই বলেই সোজা হাঁটা দিলেন। প্রজাপতি বল্লেন আমার দেশেও এই আইন খাটে না। তাছাড়া বয়স তো নেহাৎ কম হল না আমার, ও সব ঝুট ঝামেলাতে আমি নেই, বলেই লাঠি ঠুকঠুক করে সভাগৃহ ত্যাগ করলেন। বাকিরা চিন্তিত মুখে উপায় খুঁজতে লাগল। খুঁজলেই কি উপায় আসে কাছে। সবশেষে বিশ্বকর্মাকে একটা এস্টিমেট দিতে বলা হল। আগে এস্টিমেট আসুক পরে অর্থের জোগান নিয়ে ভাবা যাবে। আরেকটা মাস কেটে গেল। কোনও সমাধানের রাস্তা বের হল না। যমরাজ ফের একটি উকিলি পত্রবোমা ছুঁড়লেন। এখানে আবার উকিল বাবু বড় বড় করে লিখেছেন সেকেন্ড রিমাইন্ডার। স্বর্গের তো ভাঁড়ে মা ভবানী। এই চিঠিটাও ফাইলবন্দী হয়ে গেল। মাস ঘুরে যেতে ফাইনাল নোটিশ লেখা তৃতীয় নোটিশ এল। ইন্দ্রের অবস্থা তখন ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি। কুবের পানের দোকান গুটিয়ে গা ঢাকা দিয়েছে। বাকি দেবতারা ঘর থেকে বের হচ্ছেন না যেন অঘোষিত কারফিউ জারি হয়েছে। সব দেখে শুনে নারদকে ডেকে পাঠালেন ইন্দ্র এই বিষয়ে শলাপরামর্শ করতে। নারদ সব শুনে আপাতত কাজ চালানোর একটা টোটকা দিল। ইন্দ্র হাত গুটিয়ে বসে রইল। যমরাজ আর থাকতে না পেরে একদিন সটান হাজির ইন্দ্রের বেডরুমে। প্রণাম করে কেদারাতে জুত্ করে বসে একটাই প্রশ্ন করল – হে দেবরাজ, আপনার কি প্রাণে এতটুকু হলেও ভয় নেই ? এই সব কোর্টের চক্কর কি জানেন ? এইটা সিভিল মামলা কত বছর লাগবে শেষ হতে তার আইডিয়া আছে ? এতগুলো লিগ্যাল নোটিশ দিলাম আপনি ভ্রুক্ষেপ করছেন না , এইবার যদি মামলা করি তখন কি করবেন , ভেবেছেন কি একবারও ?
ইন্দ্র খুব শান্ত গলায় বল্ল – বাবা কৃতান্ত, উত্তেজিত না হয়ে প্রাকটিক্যাল প্রবলেমটা আগে শুনে নাও। দেখ একটা আইনি চিঠির জবাব আইনজ্ঞের কলম থেকেই আসবে। তুমি বা আমি তো উকিল নই, তাই হাজার কথা জমা হলেও উত্তর দিতে পারছি না। যমরাজ বিস্মিত হয়ে প্রশ্ন করলেন – কোষাগারের কি এতটাই খারাপ অবস্থা যে একটা চিঠি লেখার ফিস উকিলকে দিতে পারছে না ?
– ঠিক তা নয় হে বিবস্বাননন্দন , ব্যাপারটা ঠিক তা নয় , আসলে স্বর্গে একটাও উকিল নেই যে !

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress