সুখী গৃহকোণ
দিন কয়েক আগে টোটো করে একটা নিমন্ত্রণ বাড়ি থেকে ফিরছি ; ওই টোটোতেই সামনে দুই বয়স্ক মহিলা বসেছিলেন । বয়স্কারা মুখোমুখি হলে যা হয় আর কি!সাংসারিক যত গল্প সল্প আর বাড়ির বৌ এর পিন্ডি চটকানো ! কিন্তু এক্ষেত্রের ব্যতিক্রম ওদের দিকে আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করলো। সম্ভবত আগে থেকেই বউদের গুণগানই চলছিল । এক বয়স্ক মহিলা বললেন না না আমার বৌমা ওরকম না । ও খুব ভালো । এইতো আমাকে বললো তুমি যাও মা ।তোমার দাঁতে এত যন্ত্রণা করছে , ডাক্তার দেখিয়ে এসো । ছেলে আমার বাইরে থাকে । ওখানে ভালো ঘরও আছে ।কিন্তু বৌমা এখানেই থাকে , আমার কাছে । দুটো ছোটো বাচ্ছা তো ।একলাটি সব করছে । এই শুনে অন্য মহিলাটি বললেন বাচ্ছা একটাই হোক আর দুটো এখনকার মেয়েরা সব বারমুখী গো । সংসারে সব মনই নেই । স্বামী ছাড়া থাকবেই না ।যদি বলি বৌমা সব রান্না হয়ে গেছে শুধু ভাতটা করে নিতে পারবে ?সঙ্গে সঙ্গে জবাব পারবো না , আমার কাজ আছে । অন্য জন — না গো দিদি এই দিক দিয়ে আমার কপালটা খুবই ভালো ।অনেক কপাল গুণে এই রকম বৌমা পেয়েছি । এই তো বাচ্ছা কাচ্ছা নিয়ে একাই সব সামলাচ্ছে । আমায় বললো তোমায় কিছু করতে হবে না মা , তুমি তাড়াতাড়ি চলে যাও নয়তো ডাক্তারের সাথে দেখা হবে না ।2য় জন — এখনকার দিনে তো এরাম মেয়ে দেখাই যায় না ।এরপর ওরা নেমে যায় ।
আমি এতক্ষণ হাঁ হয়ে ওদের কথাগুলো শুনছিলাম । কোথাও যেন মনের মধ্যে একটা ভালোলাগা কাজ করছিল না দেখা ওই মেয়েটার জন্য ।মিথ্যে বলবো না একটু একটু হিংসেও হচ্ছিল ।আসলে কারোর কাছে ভালো হওয়াটা depends…নির্ভর করে ।নির্ভর করে তুমি কতটা নিজেকে বিলিয়ে দিতে পেরেছো তার উপর ।তুমি কি নিজের চাওয়া – পাওয়া – ভালোলাগাগুলো বিসর্জন দিতে পেরেছো? স্বামী যদি তোমায় চোখে হারায় , “বউ কে তো একেবারে চোখে হারাচ্ছিস । “
তুমি যদি পরকীয়ার সুখ খুঁজতে যাও, ” পরপুরুষ ছাড়া ওদের চলে না ।বাজারী মেয়েছেলে যত!” সন্তান যদি বেশী মাতৃভক্তি দেখায় ” মাকে একেবারে চোখে হারাচ্ছে ! যাদের বাচ্ছা হতে গিয়ে মা মারা যায় তারা কি মানুষ হয় না ।” এদিকে নিজের ছেলেটিকে আঁচলে আষ্টে পৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে । তুমি বেশী হাসলে দোষ।পাড়ার লোকে কি জানি কি ভাববে । তোমার মন খারাপ হওয়া মানা । কথায় কথায় তোর বউ এর মুখ ভার ।মুখে যেন হাসি নেই । কারোর সাথে মেশে না , কথা বলে না —– এর পরেও নাকি “আমি তোমার মায়ের মতো ” ।
আমার বন্ধু শ্রীতমা বেচারিকে ভালো হতে গিয়ে
না জানি কতগুলো sleeping pills খেতে হয়েছিলো ।বেচারি মুখ রগরে দিয়েছিলো compromise করার জন্য ।কাকিমা ওকে সবসময় বলত একটু মানিয়ে নে মা । আর একটু সহ্য কর । আজ এক বছর তোর বাবার মিল বন্ধ ।সবই তো বুঝিস ।শ্রীতমা শেষ চিঠিতে ওর মাকে জানিয়েছিলো , ক্ষমা কোরো মা , আর পারলাম না ।সবাইকে মুক্তি দিয়ে গেলাম ।
আর পূরবী? সমাজের চোখে সে ছিল ভীষণ ব্রাত্য । তাই তাকে যেতে হয় নিরুদ্দ্যেশ যাত্রায় । স্বামী আয়ান শারীরিক ও মানসিক সুখ দিতে অক্ষম ছিল । এক দ্বিতীয় পুরুষ এসেছিল ওর জীবনে ।একটু ভালো থাকতে চেয়েছিল সে ।
সেই চরম অপরাধে তার এই নির্বাসন ।
এই হলো মেয়েদের সুখী গৃহকোণ । সুখ চাওয়ার পরিণতি ।ভালো হবার পরিণতি ।এবার নিজেরাই বিচার করুণ……..!