Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » সহযাত্রী || Kajal Mukherjee

সহযাত্রী || Kajal Mukherjee

ট্রেনের দুরপাল্লার সফরে নিচের বার্থের দুই মাঝবয়সী স্বামী -স্ত্রীকে যখন মিডল আর আপার বার্থের দুই বৃদ্ধ স্বামী -স্ত্রী সহযাত্রী অনুরোধ করলেন, নিচের বার্থ ছেড়ে দিতে ,ওই মাঝবয়সী স্বামী নিজের লোয়ার বার্থ ছেড়ে দিতে রাজি হলেও ওনার স্ত্রী বললেন,’তোমার হাঁটুতে ব্যাথা না, তুমি ওপরের বার্থে উঠবে কি করে ?’

বয়স্ক স্বামী -স্ত্রী বুঝে গেলেন, ওনারা লোয়ার বার্থ ছাড়বেন না ,তাই আর কোন অনুরোধ করলেন না, অসুবিধা হলেও নিজেদের বার্থে উঠে পড়লেন। রাতে ডিনারের পর প্রায় সবাই যখন নিজের নিজের বার্থে শুয়ে পড়েছেন, তখন নিচের বার্থের ওই মাঝবয়সী ভদ্রলোক পেটের ব্যাথায় ভীষণ কষ্ট পাচ্ছিলেন। ওনার স্ত্রী ওনাকে হজমের আর গ্যাসের ওষুধ দিয়েছিলেন কিন্তু ওনার তবুও পেটের ব্যথার উপশম হল না। উনি দূ-একবার ওয়াশিং রুম ঘুরে এলেন, কিন্তু তার পরেও ওনার পেটের ব্যথার উপশম হলনা,সেই একই রকম ভাবে পেটের ব্যথায় ভীষণ কষ্ট পাচ্ছিলেন। ওনার স্ত্রী তখন ডাক্তারের খোঁজ করছিলেন,কোচ টিটিকেও ডাক্তার ডেকে দেওয়ার কথা বললেন । আলো জ্বলায় আর কথাবার্তায়,ওপরের বার্থের প্রবীণ ভদ্রলোকের ততক্ষণে ঘুম ভেঙ্গে গেছে।

উনি উপরের বার্থ থেকে নেমে এসে ভদ্রমহিলাকে বললেন, ‘আমি একজন এমবিবিএস ডাক্তার, আমি কি ওনার চিকিৎসা পারি?’
ইতিমধ্যে ওই কোচের টিটিবাবুও ওখানে চলে এসেছিলেন, উনি রিজার্ভেশন চার্ট দেখে বললেন , ‘এইতো ডাক্তার বাবু আছেন, ডাক্তার বাবু এই ভদ্রলোককে একটু দেখুন না, উনি পেটের ব্যথায় খুব কষ্ট পাচ্ছেন।’

প্রবীণ ডাক্তারবাবু নিজের ওষুধের ব্যাগ থেকে একটা ইঞ্জেকশনের ফাইল আর সিরিঞ্জ বার করে, ভদ্রলোককে ইনজেকশন দিয়ে ভদ্রমহিলাকে বললেন,’ একটা ইনজেকশন দিলাম, কিছুক্ষণের মধ্যে ওনার ব্যথা কমে যাবে ,আর এই ওআরএস এর প্যাকেটটা দিলাম , বোতলের জলে গুলে তৈরি করে নিন, আর বারবার ওনাকে খাওয়াতে থাকুন , খুব তাড়াতাড়ি উনি রিলিফ পেয়ে যাবেন।’

ভদ্রমহিলা তখন একাধারে কৃতজ্ঞতায় আপ্লুত হলেন ,আর নিচের বার্থ না ছাড়ার জন্য যারপরনাই লজ্জিত হলেন।

উনি বিনীতভাবে ডাক্তারবাবুকে কত দেব জিজ্ঞাসা করলে ডাক্তারবাবু বললেন ,’শুধু ইঞ্জেকশন আর ওআরএসের দামটা দিলেই হবে ,আর কিছু দিতে হবে না।’

ভদ্রমহিলা একটা ৫০০ টাকার নোট বার করলে , ‘উনি বললেন ১০০টা টাকা দিন, তাহলেই হবে।’

ইতিমধ্যে ওই মাঝবয়সী ভদ্রলোক, যিনি এতক্ষণ পেটের ব্যাথায় কাতরাচ্ছিলেন, অনেকটাই সুস্থ হয়ে উঠেছেন।

তিনি ডাক্তারবাবুর হাত ধরে অনুরোধ করলেন, ওনারা যেন নিচের বার্থে চলে আসেন, ওনাদের জন্য অন্তত এইটুকু করলে তাঁরা একটু মানসিক শান্তি পাবেন এখন।

প্রবীণ ডাক্তারবাবু বললেন,’না, সেটা আগে করলে হত তবে এখন আর করতে হবে না।’ তার কারণ, তাঁরা দুজনেই মিডল আর আপার বার্থে এডজাস্ট করে নিয়েছেন।

তবে ডাক্তারবাবু ওনাদের বললেন যে ,ওনারা যেমন প্রয়োজনের সময় অন্য মানুষের থেকে সহযোগিতা আশা করেন, তেমনই ভবিষ্যতে ওনারাও যেন অন্য মানুষের সাথে সহযোগিতা করেন, তাহলেই হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress