বুঝি না কেন যে কোনও কোনওদিন মনে হয়, যেন
বহুকাল পর ফিরে এসেছি নিজেরই
নিবাসে বেগানা আগন্তুক একজন। এটাই কি
ঠিক বাড়ি? ভুল করিনি তো? দ্বিধান্বিত
বাজাই কলিংবেল; মনে হ’ল কাজের লোকটি
গেট খুলবে কি খুলবে না, ইতস্তত করছিল।
আখেরে আমার পরিচিত কেউ ভেবে
প্রবেশাধিকার দেয় আমাকে নীরবে। যারা ছিল
আমার আপনজন, তারা এল চোখে মুখে নিয়ে
সংশয়ের ছায়া, ওরা কেউ
বস্তুত চেনে না এই অতিথিকে, যদিও আমার
কোণের পড়ার ঘরে ঢোকার আবছা
অনুমতি দেয় ইশারায়। এই যে চেয়ার, এই
লেখার টেবিল, বই, খাতা
আমারই তো? না কি অন্য কারও? বুক শেলফ
থেকে বই টেনে নিয়ে খুলে দেখি আমার নিজেরই
স্বাক্ষর বাদামি পাতাটির এক কোণে উপস্থিত
তারিখ সমেত আর বিষণ্ন দেয়াল যেন অশ্রুপাত করে।
এ বাড়ির সবার কাছেই
কেমন অচেনা আমি এবং আমিও
স্মৃতি বিস্মৃতির গোধূলিতে ব্যথিত দাঁড়িয়ে একা
অচেনার ভিড়ে আর দেয়ালে ঝোলানো
ফটোগ্রাফে ঐ যিনি আমার পাশে দাঁড়িয়ে মধুর
হাসছেন, তিনিও আমাকে
অপরিচয়ের রুক্ষ বলয়ে রাখার অকম্পিত
শপথ আউড়ে চলেছেন নিত্যদিন!
এখন আপন ঘরে বই হাতে বেগানার মতো
বসে আছি, তবু মনে হয়-
ধ্বনিহীন অগণিত ভায়োলিন-বিছানো পথের
মাঝখানে থেমে দূর দিগন্তের দিকে
বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকি; হঠাৎ শ্যাওলা-ঢাকা এক
পথচারী আমার নিকটে এসে জেনে নিতে চায়
জটিল ঠিকানা, নিরুত্তর
আমি শ্যাওলার ঘ্রাণে কেমন সবুজ হতে থাকি।
আমার নিজেরই কোনও ঠিক
ঠিকানা নেই যে জানা কী ক’রে বোঝাই লোকটিকে?
মুখের ভেতর নিশান্তের হাওয়া খেলা করে আর
গিলে ফেলি নক্ষত্রের কণা; বিবমিষা জাগে, বমি করি কিছু
রঙধনু-রেণু, আর বিস্তর বমিতে ভাসি, কারা
হেসে ওঠে দিকগুলি বিপুল ফাটিয়ে। আমি এই শহরের
কোথাও কাউকে আদৌ চিনি না এবং
আমাকেও হাটে বাটে ঘরে বাইরে চেনে না কেউ।