Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » শিকড়ের টান || Manisha Palmal

শিকড়ের টান || Manisha Palmal

শিকড়ের টান

মেয়ের বিয়ের নিমন্ত্রণ করতে মধুরা এসেছে তার শ্বশুরবাড়িতে। সীমান্ত বাংলার এক প্রান্তিক গ্রাম এটি। কেলেঘাই নদীর তীরে জঙ্গল ঘেরা গ্রাম। যোগাযোগব্যবস্থা কিন্তু বেশ ভালোই। এখন অটো ট্রেকার বাস সবই চলে। গ্রামের ওপর দিয়ে চলে গেছে পাকা সড়ক ওড়িশা বাই পাশে গিয়ে মিশেছে। এক সম্ভ্রান্ত জোরদার পরিবার ওদের। কর্মসূত্রে বেশিরভাগ সদস্যই শহরবাসী। মধুরা ও ওর দুই দেওর বাইরেই থাকে। দেশের বাড়িতে একমাত্র মেজ দেওর ও তার স্ত্রী থাকেন। স্ত্রীর শিক্ষকতা কারণে এই থাকা। না হলে ওরাও শহরমুখী হত। এই দেওরের বাড়িতেই ও এসেছে মেয়ের বিয়ের নিমন্ত্রণ করতে। জ্ঞাতি কুটুম্বদের নিজে গিয়ে নিমন্ত্রণের পান সুপারি দেওয়াই এখানকার প্রথা। যতই শহর বাসী হোক না কেন এই পরিবারের রীতিনীতি গুলো এখনো আগের মতই মেনে চলা হয়। বিয়ের বেশকিছু রীতিনীতির জন্য দেশের বাড়ির বয়জ্যেষ্ঠদের কাছে আসা। মধুরা সকাল থেকেই বাড়ি বাড়ি ঘুরে আমন্ত্রণের পান সুপারি দিয়ে সবে ফিরেছেন। দেওর নতুন বাড়ি করেছে ভদ্রাসনের লাগোয়া খামারে। বিরাট তিন মহলা পুরনো ভদ্রাসন এখন প্রায় ধ্বংসস্তূপ। সদর দেউড়ির বিরাট তালাটা মাকড়সার জালে ঢাকা। দেওর কে বলে চাবিটা নিয়ে দরজাটা খোলে——- বিরাট উঠোন! তুলসী মঞ্চ কে ঘিরে! চারদিকে বারান্দা! মাঝে অন্দরে যাবার দরজা! উঠোনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বাড়ির ধ্বংসস্তূপের দিকে তাকিয়ে ও ফিরে চলে তিরিশ বছর আগের সেই দিনটাতে—- যেদিন ও বধু বেশে দাঁড়িয়ে ছিল আলপনা আঁকা বিরাট উঠোনের মাঝের আলতা পাথরে। বারবার ইচ্ছে হচ্ছিল চারপাশটা দেখার কিন্তু লজ্জায় মাথা তুলতে পারেনি। সারা বাড়ি জুড়ে আনন্দের হইচই। ওর শ্বশুর, খুড শ্বশুর ,জেঠ শ্বশুর সবাই শিক্ষকতা সঙ্গে যুক্ত। সেই সূত্রেই ওর এই বাড়ির বউ হয়ে আসা। ওর স্বামী ও শিক্ষক।ওরা একই স্কুলে শিক্ষকতা করে। সারা বাড়ি জুড়ে উৎসবের আমেজ। যেমন বিরাট বাড়ি তেমনি বিরাট পরিবার। ওর শ্বশুররা চার ভাই এক একসঙ্গে একান্ন বর্তী। প্রতিদিন প্রায় 100 জনের পাত পডে। ভারি সুন্দর পরিচালন ব্যবস্থা। বাড়ির সবার কাজ ভাগ করে দেওয়া আছে কারোর উপরে বেশি চাপ পড়ে না। মধুরা শহরের মেয়ে হলেও গ্রামের সঙ্গে তার নাড়ির যোগ। কারণ ওর দাদু ডাক্তার এবং তিনি গ্রামেই ডাক্তারি করতেন। কর্মসূত্রে বাবার শহরে থাকলেও শিকড় থেকে গেছে গ্রামে। মধুরার গ্রামের আন্তরিকতার সঙ্গে সাক্ষাৎ পরিচয় থাকায় এই বিয়েতে আপত্তি করেনি। যদিও ওর দাদারা খুব একটা ভালো মনে বিয়েটা মেনে নেয়নি। বিরাট যৌথ পরিবার। স্বাভাবিকই বিভিন্ন মানসিকতার মানুষ রয়েছেন এখানে। কিন্তু একথা সত্যি যে কৃত্রিমতার মেকি দেখনদারি নেই। এটাই মধুরা কে আরো বেশি গ্রামকে ভালবাসতে সাহায্য করে। নিজেরা চার জা, দেওর ননদ মিলে যেন সবসময়ই উৎসব! অসুস্থতায় সবার সেবা-যত্ন আবার আনন্দের দিনে সবাই একসঙ্গে আনন্দকরা। কঠিন সময়ে সবাই হাতে হাত থেকে একে অপরকে সহায়তা করা। বড় আনন্দ বিষাদমাখা যাপন বৃত্তান্ত। গ্রাম্য সংস্কৃতিতে এখনো কোনো অলীক দেখনদারি মেশেনি। তাই এই মাটির গন্ধ মাখা সংস্কৃতি মনকে বড় আতুর করে দেয়। তাইতো শহরে থেকেও মধুরা শাক পূজার ব্রত করে ধর্ম সংক্রান্তিতে সুপারি তোলে কিংবা দীপান্বিতা লক্ষ্মী – অলক্ষীপূজার সাথে সাথে চোদ্দপিদীম চোদ্দ শাকের ব্রত পালন করা ভোলে না। এখনো রান্নার হাড়িতে একমুঠো বেশি চাল নেয় যদি অতিথি আসে সেজন্য।
স্মৃতিমেদুরতায় আবিল মধুরার চমক ভাঙ্গে দেওরের ডাকে—-” বৌদি ,ভাঙ্গা ভিটায় কি করছো? তাড়াতাড়ি বেরিয়ে এসো সাপখোপ থাকবে যে!”—- কথা শেষ হয় না মধুরা দেখে একটা বিরাট সাদা খরিশ সাপ ভাঙ্গা খিলান বেয়ে ঢুকে যাচ্ছে অন্দরে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে। মধুরার মনে পড়ে যায় ও দিদি শাশুড়ীর কথা—-” জানিস নাতবৌ,আমাদের বাস্তুসাপ একজোড়া শ্বেত খরিশ।ভাগ্যে থাকলে তবেই দেখা পাবি। ওর দর্শন খুব শুভ।” মধুরার দুচোখ জলে ভরে যায়। দুই হাত তুলে প্রণাম করে সে মনে মনে বলে—” তোমার উত্তরসূরিদের মঙ্গল করো মা !তারাও যেন নিজের শিকড় গ্রামকে ভালবাসে !তার সংস্কৃতিকে সম্মান করে নিজের যাপন বৃত্তে সফল হয়।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *