শারদীয়ার লোকাচার
পশ্চিমমেদিনীপুর ও বাঁকুড়া জেলারএক সুন্দর লোকাচার হল ”দুর্গাবরণ”।ষষ্ঠির সকালে সব ঘরের চৌকাঠে’ ” দুর্গাফোঁটা” আঁকা হয় ! এক বিশেষ ধরণের ফল যা ”দুর্গাছাপ ” নামে পরিচিত, সেই ফল নিয়ে গিরিমাটি গোলা, চন্দন গোলা’, সিন্দুরগোলা,সাদামাটি গোলায় ডুবিয়ে চৌকাঠে ছাপ দেওয়া হয়॥
এবার বেল্ পাতা তে,,,”এসো ,মা দূর্গা” লিখে ঠাকুরের আসনে রাখা হয়। ঘটে গৌরীপূজা করা হয় ॥নতুন কাপড় পরে এই ছাপ দিতে হয়।শুরু হয় বাঙ্গালী প্রধান উৎসব,,,শারদীয়া দুর্গোত সবের॥
আমাদের ঘরে মা দুর্গা ,ঘরের মেয়ে,’,,,!বছরঅন্তে বিবাহিতা মেয়ে বাপের ঘরে আসে। তাই কন্যা রূপে মাকে বরণ করে নিয়ে আসা হয় ॥ জগজ্জননী মাকে কন্যা রূপে আরাধনা কেবল বাঙ্গালীই করতে পারে।তাই তো আগমনী গানে শোনা যায় এই কথা ,,,,”এবার আমার উমা এলে
আর উমা পাঠাবো না।
বলে বলুক লোকে মন্দ
কারুর কথা শুনবো না॥
যদি এসে মৃত্যুনজয় ,
উমা নেবার কথা কয় ,
এবার মায়ে ঝিয়ে করবো ঝগড়া
জামাই বলে মানবো না ॥”
পুজোর চার দিন কন্যা রূপী মা দুর্গাকে বাঙালি ঘরের মেয়ের মতোই যত্ন-আত্তি করে। নবমীর নিশি আসে দুখের পাহাড় নিয়ে— না পোহাইয়ো নবমী নিশি
অস্ত যাবে উমাশশী–
তবুও নবমী নিশি শেষে আসে বিজয়া দশমী! কন্যা শ্বশুর বাড়ি ফিরে যাবে— মাকে কৈলাস যাত্রার আগে কোথাও চিঁড়ে দই কোথাও “পান্তা প্রসাদ” খাওয়ানো হয়! ভাতে জল ঢেলে গন্ধরাজ লেবু ও বিভিন্ন ফল এবং বাতাসা দিয়ে একসাথে মাখা হয়! এটাই “পান্তা প্রসাদ”! বিকেলে হয় মাতৃ বরণ ও সিঁদুর খেলা! সিঁদুর মিষ্টি পানে
মাকে বরণ করে আবার সামনের বছর আসার কথা বলা হয়। সজল চোখে মাকে বিদায় জানায় বাঙালি। বৈরাগীর একতারায় বাজে বিদায়ের সুর !সমাপ্তি ঘটে বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ উৎসবের— আবার এক বছরের প্রতীক্ষা!