Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » শরতে প্রকৃতি || Sharater Prakriti by Rabindranath Tagore

শরতে প্রকৃতি || Sharater Prakriti by Rabindranath Tagore

কই গো প্রকৃতি রানী , দেখি দেখি মুখখানি ,
কেন গো বিষাদছায়া রয়েছে অধর ছুঁয়ে
মুখখানি মলিন কেন গো ?
এই যে মুহূর্ত আগে হাসিতে ছিলে গো দেখি
পলক না পালটিতে সহসা নেহারি এ কি—
মরনে বিলীন যেন গো !
কেন তনুখানি ঢাকা শুভ্র কুহেলিকা বাসে
মৃদু বিষাদের ভারে সুধীরে মুদিয়া আসে
নয়ন – নলিন হেন গো ?

ওই দেখো চেয়ে দেখো—একবার চেয়ে দেখো—
চাঁদের অধর দুটি হাসিতে ভাসিয়া যায়।
নিশীথের প্রাণে গিয়া সে হাসি মিশিয়া যায়।
সে হাসির কোলে বসি কানন – গোলাপগুলি
আধো আধো কথা কহে সোহাগেতে দুলি দুলি।
সে – হাসির পায়ে পড়ি নদীর লহরীগন
যার যত কথা আছে বলিতে আকুল মন।
সে হাসির শিশুদুটি লতিকামন্ডপে গিয়া
আঁধারে ভাবিয়া সারা বাহিরিবে কোথা দিয়ে
সে – হাসি অলসে ঢলি দিগন্তে পড়িয়া নুয়ে ,
মেঘের অধরপ্রান্ত একটু রয়েছে ছুঁয়ে।
বলো তুমি কেন তবে
এমন মলিন রবে ?
বিষাদ – স্বপন দেখে হাসির কোলেতে শুয়ে।

ঘোমটাটি খোলো খোলো
মুখখানি তোলো তোলো
চাঁদের মুখের পানে চাও একবার।
বলো দেখি কারে হেরি এত হাসি তার !
নিলাজ বসন্ত যবে কুসুমে কুসুমময়
মাতিয়া নিজের রূপে হাসিয়া আকুল হয় ,
মলয় মরমে মরি ,
ফিরে হাহাকার করি—
বনের হৃদয় হতে সৌরভ – উচ্ছাস বয় !
তারে হেরি হয় না সে এমন হরষে ভোর ;
কী চোখে দেখেছে চাঁদ ওই মুখখানি তোর !
তুই তবু কেন কেন
দারুন বিরাগে যেন
চাস নে চা চাঁদের হাসি চাঁদের আদর !
নাই তোর ফুলবাস
নাইক প্রেমের হাস ,
পাপিয়া আড়ালে বসি শুনায় না প্রেম গান !
কী দুখেতে উদাসীনি
যৌবনেতে সন্ন্যাসিনী !
কাহার ধেয়ানে মগ্ন শুভ্র বস্ত্র পরিধান ?

এক – কালে ছিল তোর কুসুমিত মধুমাস—
হৃদয়ে ফুটিত তোর অজস্র ফুলের রাশ ;
যৌবন – উচ্ছাসে ভোর
প্রাণের সুরভি তোর
পথিক সমীরে সব দিলি তুই বিলাইয়া !
শেষে গ্রীষ্মতাপে জ্বলি
শুকাইল ফুল – কলি ,
সর্বস্ব যাহারে দিলি সেও গেল পলাইয়া !
চেতনা পাইয়া শেষে হইয়া সর্বস্ব – হারা
সারাটি বরষা তুই কাঁদিয়া হইলি সারা !
এত দিন পরে বুঝি শুকাইল অশ্রুধারা !
আজ বুঝি মনে মনে করিলি দারুন পণ
যোগিনী হইবি তুই পাষাণে বাঁধিয়া মন !
বসন্তের ছেলেখেলা ভালো নাহি লাগে আর—
চপল চঞ্চল হাসি ফুলময় অলংকার !
এখন যে হাসি হাসো আজি বিরাগের দিন ,
শুভ্র শান্ত সুবিমল বাসনা – লালসাহীন।
এত করিলি পণ
তবুও তো ক্ষণে ক্ষণ
সে দিনের স্মৃতিছায়া হৃদয়ে বেড়ায় ভাসি।
প্রশান্ত মুখের ‘ পরে
কুহেলিকা ছায়া পড়ে—
ভাবনায় মেঘ উঠে সহসা আলোক নাশি—
মুহূর্তে কিসের লাগি
আবার উঠিস জাগি
আবার অধরে ফুটে সেই সে পুরানো হাসি !

ঘুমায়ে পড়িস যবে বিহ্বল রজনীশেষে ,
অতি মৃদু পা টিপিয়া উষা আসে হেসে হেসে ,
অতিশয় সাবধানে দুইটি আঙুল দিয়া
কুয়াশা – ঘোমটা তোর দেয় ধীরে সরাইয়া।
অমনি তরুণ রবি পাশে আসি মৃদুগতি
মুদিত নয়ন তোর চুমে ধীরে ধীরে অতি !
শিহরিয়া কাঁপি উঠি
মেলিস নয়ন দুটি ,
রাঙা হয়ে ওঠে তোর কপোল – কুসুমদল
শরমে আকুল ঝরে শিশির – নয়নজল !

সুদুর আলয় হতে তাড়াতাড়ি খেলা ভুলি
মাঝে মাঝে ছুটে আসে দুদন্ডের মেঘগুলি।
চমকি দাঁড়ায়ে থাকে , ওই মুখপানে চায় ,
কাঁদিয়া কাঁদিয়া শেষে কাঁদিয়া মরিয়া যায় !
কিসের বিরাগ এত , কী তপে আছিস ভোর !
এত করে সেধে সেধে
এত করে কেঁদে কেঁদে
যোগিনী , কিছুতে তবু ভাঙিবে না পণ তোর ?
যোগিনী , কিছুতে কি রে ফিরিবে না মন তোর ?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress