শক্তি
কিছু দুরেই কৈলাশ। দুজনেই সকালে প্রনাম করে।
আর বিকালে কাজ শেষ হলেই আগে থেকে বলে রাখা ছোট্ট শিলাখন্ডটির নীচে চলে আসে। তারপর দুজনের যা আলোচনা হয় তা অন্য কেউ শুনে বুঝলে নিশ্চয়ই লিখে রাখত, কিন্তু সেখানকার পশুপালকরা কি আর বুঝবে। তারা অনেকেই শুধু প্রনাম করে যায়। যদিও সহস্রাক্ষ আর মারপা জানে এসবের কোন মূল্য নেই। তাই তারাও প্রচার বিমুখ। মুক্তিপথে এসব অতিতুচ্ছ, অস্থায়ী। তাই যা শাশ্বত তার জাগরণ বা আত্মব্যাপ্তিই প্রকৃত লাভ। আর তার জন্য প্রচুর শক্তি লাগে। মনের শক্তি। দুজনেই তার উপাসক হলেও তাদের মত ভিন্ন। একজন বৌদ্ধ সহজযান, অন্যজন হিন্দু শাক্ত। দুজনেই শাস্ত্রমতে মৃত। মানে সন্ন্যাসী হতে গেলে আত্মশ্রাদ্ধ করতে হয়, সেই হিসাবে। তাদের আলোচনাও যেমন প্রচুর মতের ভেদাভেদও তেমনি অনেক।
যদিও এই ভেদাভেদ মানতে নারাজ তাদের মহন্তরাও। তাঁরাও বিশ্বাস করেন ইষ্টদেবীর অর্ঘ্যের উনিশ বিশের থেকে ভক্তের নিষ্ঠাই দেবীর বেশি পছন্দ। যা নির্ভর করে সারাদিনের চিন্তার ওপর। এই চিন্তা থেকেই তার প্রকৃতি বা নিজের মনোজগৎ তৈরী হয়। তাই মত ভিন্ন হলেও প্রকৃতি এক রকম হলে আলোচনা আবশ্যক। তবে অন্য গুরুভাইরা একটু অবাক হয়না তা নয়, আবার ছোট থেকেই তারা যেহেতু তিতিক্ষার মধ্যেই বড়ো হয়েছে, এটার জন্যও তারা নিজে থেকেই সে ব্যাপারে সচেতন। যতোই হোক, অনেক আশা করে গুরুজনরা পাঠিয়েছেন আশ্রমদুটিতে। সে মারার তিব্বতী মা বাবাই হোক বা সহস্রাক্ষর উত্তরাখন্ডের।
সেদিন যখন তারা ফুল তুলে কথা বলছিল, তখন কোথা থেকে একটা সাদা শূকর এসে মারপাকে ধাক্কা দেওয়ায় তার হাতের কিছু ফুল পড়ে গেল। সহস্রাক্ষ সেগুলো তুলতে বারণ করে কাছের গাছ থেকে মরপার উপাসনা উপযোগী কিছু ফুল এনে তাকে দিল। এখানে প্রচুর ফুল হয় যা সন্ধ্যা ও প্রাতে দুই পূজাতেই লাগে।
কারণ সকালের ঠান্ডায় কেউ বেরোয় না। দুজনেই হতচকিত হয়ে শূকর চড়ানো বাচ্ছা মেয়ে টিকে ধমক দিতে সে খিলখিল করে হেসে উঠলো। লামারা বুঝল লাভ নেই।
কিন্তু পরের দিন বিকেলে তারা একটু তাড়াতাড়িই দেখা করল। আসলে বুঝতে পারছিল না এত সাবধানতা সত্ত্বেও ফুল পাল্টাপাল্টি হল কিকরে। মারপার ফুল পড়ল একজটা তারার পায় আর সহস্রাক্ষর ফুল পড়ল আর্যতুতারার পায়। মহন্তরা তাদের বলেছে “ঠিকই হয়েছে। মা সব দেখিয়ে দিয়েছে।” কিন্তু তারা ভাবছিল অন্য কথা।
এখানে অনেক শিশুই ইয়াক চড়ায়, মেষ চড়ায়। কিন্তু কোনো মেয়েকে তো সাদা শূকর চড়াতে কেউ দেখেনি কখনো। সহস্রাক্ষ বলছিল মানুষের ষড়রিপু হল ছটি শূকরের প্রতীক যাদের নিয়ন্ত্রণ করেন কালভৈরব। মেয়েটি তাহলে কে, কালভৈরবী। কে বলতে পারে………