Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » লীলা মজুমদার (শিশু সাহিত্যিক) || Sankar Brahma

লীলা মজুমদার (শিশু সাহিত্যিক) || Sankar Brahma

লীলা মজুমদারের ছোটবেলা কেটেছে শিলংয়ে। সেখানে লরেটো কনভেন্টে পড়েছিলেন।
উপেন্দ্র কিশোর রায়চৌধুরী সুরমা দেবীকে (লীলা মজুমদারের মা) দত্তক নিয়েছিলেন। লীলার দাদু ছিলেন রামকুমার ভট্টাচার্য, যিনি সন্ন্যাসী হয়ে ‘রামানন্দ ভারতী’ নামে ১৯১৯ সালে ‘হিমারণ্য’ নামে ভ্রমণকাহিনী লিখেছিলেন। ভারতীয়দের মধ্যে তিনিই প্রথম কৈলাস ও মানসরোবর ভ্রমণ করেন।
লীলা মজুমদারের বাবা কলকাতায় বদলি হলে এলে তিনি ‘সেন্টজন্স ডায়োসেসান স্কুলে’ ভর্তি হন, ১৯২৪ সালে সেখান থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় মেয়েদের মধ্যে দ্বিতীয় হন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স (স্নাতক) এবং স্নাতকোত্তর দুই পরীক্ষায় তিনি ইংরেজিতে (সাহিত্য) প্রথম স্থান অধিকার করেন।
১৯৩১ সালে তিনি দার্জিলিং-য়ের ‘মহারানী গার্লস স্কুলে’ প্রথম শিক্ষিকার চাকরি পান।
ছোটবেলা থেকেই অটোগ্রাফ সংগ্রহের নেশা ছিল । তিনি প্রশান্তকুমার মহলানবিশকে একটি খাতা দিয়ে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের কাছ থেকে একটি অটোগ্রাফ আনতে পাঠিয়েছিলেন। কবি সেই খাতায় সাক্ষরের সাথে সাথে লিখে দিয়েছিলেন একটি কবিতাও।
“নামের আখর কেনো লিখিস নিজের সকল কাজে?
পারিস যদি প্রেমের আখর রাখিস জগৎ মাঝে।”
তারপরে রবীন্দ্রনাথের আমন্ত্রণে শান্তিনিকেতনের স্কুলে যোগ দেন, প্রায় এক বছর সেখানে ছিলেন।
শান্তিনিকেতনের পরে তিনি কলকাতার আশুতোষ কলেজের মহিলা বিভাগে যোগ দেন, সেখানেও বেশিদিন কাজ করেননি।
তারপর বেশিরভাগ সময়ই কেটেছে তাঁর লেখা নিয়ে।
মাত্র চোদ্দ বছর বয়সে ১৯২২ সালে তাঁর প্রথম গল্প ‘লক্ষ্মীছাড়া’ ‘সন্দেশ’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। গল্পের ছবি নিজেই এঁকেছিলেন।
শিশু সাহিত্যের পত্রিকা ‘সন্দেশ’ উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী (তাঁর মামা) ১৯১৩ সালে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং ১৯১৫ সালে উপেন্দ্রকিশোরের মৃত্যুর পর তাঁর ছেলে (লীলা মজুমদারের খুড়ততো ভাই) সুকুমার রায় সম্পাদনা করেছেন। সুকুমার রায়ের মৃত্যুর পর ১৯৬১ সালে সত্যজিৎ রায় ‘সন্দেশ’ পত্রিকা আবার নতুন ভাবে প্রকাশ করলে, তিনি ১৯৬৩ থেকে ১৯৯৪ অবধি সহ-সম্পাদক (সাম্মানিক) হিসাবে পত্রিকাটিতে যুক্ত ছিলেন, ১৯৯৪-য়ে স্বাস্থ্যের অবনতির কারণে অবসর নেন। তাঁর সাহিত্যিক জীবন প্রায় আট দশকের (১৯২২ সাল থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত)।
১৯০৮ সালের ২৬শে ফেব্রুয়ারী, লীলা মজুমদারের কলকাতার গড়পাড় রোডের রায় বাড়িতে জন্ম হয়। তিনি প্রমদারঞ্জন রায় ও সুরমাদেবীর (বিবাহপূর্ব নাম লীলা রায়) সন্তান। উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী (যাঁর পৈতৃক নাম ছিল কামদারঞ্জন রায়) ছিলেন প্রমদারঞ্জনের দাদা এবং লীলার জ্যাঠামশাই । সেইসূত্রে লীলা হলেন সুকুমার রায়ের খুড়তুতো বোন এবং সত্যজিৎ রায়ের পিসি।
তাঁর প্রথম প্রকাশিত বই ‘বদ্যি নাথের বাড়ি’ (১৯৩৯ সালে) আর তাঁর দ্বিতীয় সংকলন ‘দিন দুপুরে’ (১৯৪৮ সালে) প্রকাশিত হয়ে তাঁকে যথেষ্ট খ্যাতি এনে দেয়। ১৯৩৯ সাল থেকে তাঁর সৃষ্টি শিশু-কিশোরদের মন জয় করে।
হাস্যরসের গল্প , গোয়েন্দা গল্প, ভূতের গল্পে তাঁর সৃজনশক্তি ও কল্পনার বিস্তার আমাদেরও মুগ্ধ করে। তাঁর গল্প লোমহর্ষক কাহিনী দিয়ে শুরু হলেও শেষ হয় তুচ্ছাতিতুচ্ছ বিষয় নিয়ে। আবার তুচ্ছাতিতুচ্ছ বিষয় দিয়ে শুরু গল্পে তিনি আমাদের নিয়ে ফেলেন লোমহর্ষক কাহিনীতে। তাঁর লেখার এটা বিশেষ বৈশিষ্ট।
‘পাকদণ্ডী’ নামে তাঁর লেখা আত্মজীবনীতে তার শিলঙে ছেলেবেলা, শান্তিনিকেতন ও অল ইন্ডিয়া রেডিওর সঙ্গে তাঁর কাজকর্ম, রায়চৌধুরী পরিবারের নানা মজার ঘটনাবলী ও বাংলা সাহিত্যের ফুল-বাগানে তাঁর দীর্ঘ পরিভ্রমণের কথা লেখা হয়েছে।

শিশুসাহিত্য ছাড়াও একটি রান্নার বই প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য উপন্যাস ( শ্রীমতি , চেনা ল্যান্থান ), এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনী লিখেছেন। তিনি অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপর বক্তৃতা দেন এবং শিল্পের উপর তাঁর লেখা ইংরেজিতে অনুবাদ করেন। তিনি ‘জোনাথন সুইফটের গালিভারস ট্রাভেলস’ এবং ‘আর্নেস্ট হেমিংওয়ের দ্য ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সি’ বাংলায় রূপান্তর করেছেন।
সাহিত্যিক বুদ্ধদেব বসুর উৎসাহে প্রথম বড়দের গল্প ‘সোনালি রুপালি’ প্রকাশিত হয় ‘বৈশাখী’ পত্রিকায়। তিনি অনেক শিক্ষামূলক রচনা ও রম্যরচনা ইংরাজী থেকে বাংলায় অনুবাদও করেন।
সত্যজিৎ রায় তাঁর ‘পদি পিশির বর্মি বাক্স’ গল্পটি নিয়ে একবার ছবি করার কথা ভেবেছিলেন । কিন্তু ১৯৭২ সালে অরুন্ধতী দেবী ‘পদি পিশির বর্মি বাক্স’ গল্পটিকে একটি চলচ্চিত্রে রুপান্তরিত করেন।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বলেছিলেন, ঠাকুর পরিবার প্রাপ্তবয়স্কদের নাটক এবং সাহিত্য দিয়ে জীবন আকৃষ্ট করেছেন আর রায়চৌধুরী পরিবার বাংলায় শিশুসাহিত্যের ভিত্তি স্থাপন করেছেন।
কুড়ি বছর লেখালেখি করার পর তিনি ১৯৫৬ সালে ‘অল ইন্ডিয়া রেডিও’-তে প্রযোজক হিসেবে যোগ দিয়ে, সাত-আট বছর কাজ করেন। অল-ইন্ডিয়া রেডিওর একটি বিশেষ মহিলা মহল (মহিলা বিভাগ) সিরিজের জন্য, একটি সাধারণ, মধ্যবিত্ত, বাঙালি পরিবারে বেড়ে ওঠা একটি মেয়ের দৈনন্দিন জীবনে “প্রাকৃতিক এবং সাধারণ সমস্যা” মোকাবেলা করার জন্য, তিনি ‘মনিমালা’ সৃষ্টি করেছিলেন , একটি “খুবই সাধারণ মেয়ে” এর গল্প যার দাদি তার বিয়ে এবং মাতৃত্বের জন্য বারো বছর বয়সে লিখতে শুরু করেন।
১৯৩৩ সালে তিনি বিখ্যাত ডেন্টিস্ট ডাঃ সুধীর কুমার মজুমদারকে বিয়ে করেন, যিনি হার্ভার্ড ডেন্টাল স্কুলের স্নাতক ছিলেন। এই বিবাহে তাঁর পিতার ভীষণ আপত্তি থাকা সত্ত্বেও তিনি তাকেই জীবনসঙ্গী করেন। অন্যান্যদের সঙ্গে সম্পর্ক থাকলেও বাবার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক চিরদিনের জন্য ছিন্ন হয়। বিবাহিত জীবনে লীলা-সুধীর খুব সুখী দম্পতি ছিলেন। স্বামী আজীবন লীলার সাহিত্য চর্চায় উৎসাহ দিয়েছেন। দুই দশক ধরে তিনি গৃহস্থালির কাজে নিজেকে নিয়োজিত করে রেখেছিলেন। তাঁর ছেলে রঞ্জন (জন্ম. ১৯৩৪ সাল) একজন দন্তচিকিৎসক এবং কন্যা কমলা (জন্ম. ১৯৩৮ সাল) মনিশি চ্যাটার্জিকে বিয়ে করেন, একজন তেল প্রকৌশলী এবং বেঙ্গল স্কুলের প্রথম মহিলা চিত্রশিল্পী সুনয়নী দেবীর নাতি । তার স্বামী ১৯৮৪ সালে মারা যান। তাঁর সন্তান ছাড়াও, তাঁর মৃত্যুর সময়, তাঁর দুই নাতি, দুই নাতি এবং তিনজন নাতি-নাতনি ছিল।
১৯৭৫ সাল থেকে তিনি পাকাপাকি ভাবে শান্তিনিকেতনে থাকতে শুরু করেন। ২০০৭ সালের ৫ই এপ্রিল সেখানেই ৯৯ বছর বয়সে তিনি মারা যান।

(তাঁর উল্লেখযোগ্য সৃষ্টি)

১). বদ্যি নাথের বাড়ি
২). দিনে দুপুরে
৩). হলদে পাখির পালক
৪). টং লিং
৫). পদিপিসির বর্মিবাক্স
৬). নাকু গামা
৭). সব ভুতুড়ে
৮). মাকু
৯). গল্পসল্প
১০). মনিমালা
১১). বাঘের চোখ
১২). বক ধর্মিক
১৩). টাকা গাছ
১৪). লাল নীল দেশলাই
১৫). বাঁশের ফুল
১৬). ময়না শালিখ
১৭). ভুতের বাড়ি
১৮). আগুনি বেগুনী
১৯). টিপুর উপর টিপুনি
২০). পটকা চোর
২১). আশারে গল্প
২২).চিচিং ফাঁক
২৩). যে যাই বলুক
২৪). ছোটদের তাল বেতাল
২৫). বাতাশ বাড়ি
২৬). বাঘ শিকারী বামুন
২৭). ভাগ্যের গল্প
২৮). শিবুর ডায়েরি
২৯). ফেরারি
৩০). নেপোর বই
৩১).আর কোনখানে
৩২). খেরোর খাতা
৩৩). এই যে দেখা
৩৪). পাকদন্ডী
৩৫). শ্রীমতি
৩৬). চেনা ল্যান্থান
৩৭). মেঘের শাড়ি ধরতে নারি
৩৮). পেশা বদল
৩৯). পাগলা পাগলার গল্প
৪০). ছোটদের সেরা গল্প
৪১).গুপির গুপ্ত খাতা
৪২). পেশা বদল

তাঁর ছোটগল্পের সংগ্রহ, যৌথ লেখকের অধীনে পাঁচটি বই, ৯ টি অনূদিত বই এবং ১৯টি সম্পাদিত বই সহ ১২৫টি বইয়ের তালিকা অসম্পূর্ণ একটি গ্রন্থপঞ্জিতে পাওয়া গেছে।

(পুরস্কার ও সম্মাননা প্রাপ্তি)

শিশুসাহিত্যের জন্য ‘হলদে পাখির পালক’ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার পেয়েছে, ১৯৬৩ সালে ‘বক বধ পালা’ ভারত সরকার থেকে সঙ্গীত নাটক আকাদেমি পুরস্কার পেয়েছে , ১৯৬৯ সালে ‘আর কোনখানে’ রবীন্দ্র পুরস্কার পেয়েছে। তিনি সুরেশ স্মৃতি পুরস্কারও পেয়েছেন। , বিদ্যাসাগর পুরস্কার, আজীবন কৃতিত্বের জন্য ভুবনেশ্বরী পদক এবং আনন্দ পুরস্কার পেয়েছেন। বিশ্বভারতী থেকে দেশিকোত্তমা এবং বর্ধমান, উত্তরবঙ্গ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডি.লিট. পান।
২০১৯ সালে, লীলা মজুমদারের উপর “পেরিস্তান – দ্য ওয়ার্ল্ড অফ লীলা মজুমদার” শিরোনামে একটি তথ্যচিত্র নির্মিত হয়েছে ।

—————————————————————-
[ সংগৃহীত ও সম্পাদিত। তথ্যসূত্র -উইকিপিডিয়া

সূত্র নির্দেশিকা –

রায়, প্রসাদরঞ্জন,রিমেম্বারিং লীলা মজুমাদার, মেজোপিশি, অ্যাজ আই সও হার, টাইমস অফ ইন্ডিয়ান কলকাতা সংস্করণ, ৮ই এপ্রিল ২০০৭ সাল।

দ্য বিয়ন্ড বেকন্স লীলা মজুমদার,দ্য স্টেটসম্যান, ৬ই এপ্রিল ২০০৭ সাল।

শ্রী লীলা মজুমদার (১৯০৮ – ২০০৭),আনন্দ বাজার পত্রিকা (বাংলায়), ৬ই এপ্রিল ২০০৭ সাল।

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়,রিজু, সবলীল ভাসা, টেট আগাগোড়া স্নিগ্ধা রাস,আনন্দ বাজার পত্রিকা (বাংলায়), ৬ই এপ্রিল ২০০৭ সাল।

” শিশু সাহিত্যিক লীলা মজুমদার মারা গেছেন ” । andhracafe.com । সংগৃহীত ৬ই এপ্রিল ২০০৭ সাল।

চিলড্রেনস টেলস নেভার গ্রোউন,দ্য টেলিগ্রাফ, ৬ই এপ্রিল ২০০৭ সাল।

” স্পেন্ডিড সেঞ্চুরিয়ান – তরুণ এবং তরুণদের প্রিয়তম বয়সের মাইলফলকে পৌঁছেছে ” কলকাতা, ভারত: দ্য টেলিগ্রাফ, ২৬শে ফেব্রুয়ারি ২০০৭ সাল।

৫ই জানুয়ারী ২০১৩ সালে মূল থেকে আর্কাইভ করা হয়েছে । সংগৃহীত ৬ই এপ্রিল ২০০৭ সাল। ]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress